কিছুই ফেলনা নয়
স্মৃতির মন্দিরে কিছুই ফেলনা নয়
যুদ্ধদিনে জমানো মার্বেল, ঘাসফড়িং
ভাঙা প্রজাপতি ডানা, কুড়িয়ে পাওয়া ঘুড়ি,
অনেক সংগ্রামে— তৃষ্ণার ঘামে সাধের লাটাই—
কিছুই ফেলনা নয়, স্মৃতির মন্দিরে
সবই অক্ষত প্রাচীন মুদ্রার মতো
হারিয়ে যাওয়া সভ্যতার এক একটি ইতিহাস।
ফুটে ওঠা কত বর্ণিল, ঝকঝকে,
কালো অধ্যায় ছাপিয়ে ক্রমশ দুর্বলের হেরে
যাওয়ার দায়ভারে, লোভী সৈন্যকে
বশ করে, কৌশলে ক্ষমতা কুক্ষিগত করা,
শক্তির অংশীদারে কত খোঁজা—কত
ছায়ার পেছনে ছায়ার ছুটে চলা, হারিয়ে
যাওয়া ঈর্ষা, সাম্রাজ্যের পতন।
কিছুই ফেলনা নয়। কিছুই যায় না ফেলা—
কোনো নিভৃত মুহূর্তে হঠাৎ অচেনা কোনো মুখে
জেগে ওঠে পুরনো প্রিয় কোনো চোখ, কিছুই ফেলনা নয়।
আমাকে মনে আছে
দ্বিধা আর দ্বন্দ্বে আমাকে রেখে
রাজহংসীর মতো নীলিমাকে পেছনে ফেলে
হেলে দুলে অদ্ভুত এক স্বপ্নসীমার
সন্ধানে; আর কখনোই ধরতে না পারা
দূরত্বে—ঠিক ঠিক শান্তির আবাসে দিয়েছ উড়াল।
নদী যেমন—জেগে থাকে, বয়ে চলে,
মাকড়শার জালের মতো অদ্ভুত রহস্যময়তায়
সাজায় সংসার। মায়া নেই, ভালবাসা নেই,
পিছু টান নেই—যে যেখানে আছে, থাকুক,
মিলন আকাক্সক্ষায় ভেঙেচুরে ভীরু মানুষের
মন—খেয়ালি হাতের মুঠোয় চুরমার হয়ে যায়।
ভুলগ্রামে, জাদুকরী প্রভাবে যথারীতি
বয়ে যাচ্ছে রাত্রিদিন। এমন সঘন অন্তরঙ্গ
শ্রাবণে—আমাকে মনে পড়ে? মনে আছে?
তুমি চলে গেলে
অস্থিরতার মাঝে রেখে তুমি চলে গেলে-
সবুজের দিকে তাকাই,
সর্ষের মনোমুগ্ধকর বর্ণচ্ছটার ভেতরে হারিয়ে
দেখি শিষ দিতে থাকা দোয়েল হঠাৎ
. গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়ে।
সব পথ, আহত সাপের মতো আছড়ে পড়তে চায়—
স্বপ্নগ্রস্তের মতো বারবার
ছুটে আসতে থাকে সুন্দরবনের বাঘিনী। এক লহমায়
লণ্ডভণ্ড করে দিতে চায় ভূভাগ। চাহনির তীব্রতায়
মুখের রেখা থেকে সরে যায় ব্যাকুলতার ছাপ।
কেন এমন হয়? প্রতিবার একই সুর কী করে
গোপন তানপুরায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে?
চিরদিন কি এই
একইভাবে সব প্রসঙ্গে হৃদয়ের ভেতরে ডাকাডাকি
করবে সময়? নাকি সাংঘাতিক এক স্বপ্নে—ঘড়া
উল্টে হঠাৎ বেরিয়ে পড়বে আকবর বাদশার মোহর?