শহর ছেড়ে
একদিন এই শহর, রেলগাড়ি ছেড়ে চলে যাব মেঘে মেঘে ভেসে
একদিন এই শহর, বাস-ট্যাক্সি ছেড়ে চলে যাব তারায় মিশে
একদিন এই শহর, পুকুর-জল ছেড়ে চলে যাব চাঁদের দেশে
একদিন এই শহর, ঘর উঠোন ছেড়ে চলে যাব দেবতার বেশে
পড়ে রবে ধুলার সাথে ছেঁড়া স্যান্ডেল জোড়া
চশমার কাচে বাতাস ভিড় করবে একদিন এই শহরে
ঠিকানা খুঁজে খুঁজে তুমিও হবে হয়রান
ধোঁয়ার সঙ্গে মিলিয়ে যাবে স্বপ্নসব একদিন এই শহরে
একদিন এই শহরে, ফুটবে না সুগন্ধী ফুল
একদিন এই শহরে, গাইবে না পাখি গান
একদিন এই শহরে কাঁদবে না নবজাতক
ছেঁড়া কাগজে খুঁজে পাবে না কেউ কবিতার চরণ
হাতের কোমল আদর হারাবে জৌলুস একদিন এই শহরে
নরম বিছানা হাতড়াবে স্মৃতি একদিন এই শহরে
অগোছালো বই রোদ পোহাবে একদিন এই শহরে
একদিন এই শহর ডিঙি নাও আর বিকেলের শালিক ছেড়ে চলে যাব।
নোনাজলে প্লাবিত হবে একদিন এই শহর
অলি-গলি, গাছ-গাছালি এমনকি পাখি
একদিন এই শহর পলি মাটি ছেড়ে চলে যাব
একদিন এই শহর পাহাড় গাছ ফেলে চলে যাব
আবদার নিয়ে পথে থামবে না কেউ একদিন এই শহরে
একদিন এই শহর, বিজলি বাতি হবে অন্ধকার ঘর।
অখণ্ড
এক.
শৈশবের শ্লেটে সাজিয়ে রাখি সারি সারি দুঃখ
চায়ের ধোঁয়ায় শিশির জমে কাচঘেরা পাতাগাছে
চোরাস্বপ্নেরা ডুবে থাকে গানে-কবিতায়
দুই.
অবিরত ঝরে পড়া বৃষ্টির জলে জেনেছি
দুঃখ বলে কিছু নেই; আছে হাহাকার
অতৃপ্তি—না পাওয়া!
তিন.
হলুদ শার্টে তোমার আকাশ ফিকে হয়ে আসে
কালো চুলে ওপরে ওঠার সিঁড়ি
একটু হাসো—তোমার নিঃশ্বাসে গেয়ে উঠবে পাখি
বিস্ময়ভরা দৃষ্টিতে জল খুঁজে পাবে আশ্রয়
যেমন আমি—ভরদুপুরে, বৃষ্টিতে, রোদ্দুরে
এমনকি অন্ধকারে খুঁজে বেড়ায় শব্দমালা
তোমার নূপুরে, গলার লকেট, কানের দুলে—
অথবা দীর্ঘশ্বাসে।
সীমানা
আকাশে গুচ্ছ মেঘের দল আনমনে পেরিয়ে যায় সীমারেখা
নিজের অজান্তেই শালিক পাখিটি ওপার ঘুরে আসে।
তোমাদের সীমানা প্রাচীর হয়ে বৃষ্টির জল
নেমে আসে এ তল্লাটে—অনায়াসে
ঝড়ো হাওয়ার সাথে শুকনো পাতার দল।
সাগরের স্বচ্ছ জলে মুখ লুকাতে হাপিয়ে উঠি
আলিঙ্গনের দূরত্ব রাইফেলের নল
এপারে আসতে মানা, ওপারে যেতে
এই পথ আমার নয়; ওই পথ তোমার
হৃদয়ে রক্ত ঝরে, শীতল হয়—
এপারে জল ছুঁয়ে দিলে তোমার উঞ্চতা অনুভব করি
বাতাসে সুগন্ধী
এপারে আসতে মানা, ওপারে যেতে
অন্ধকার ডুবে থাকে তোমার চুলে।