লিখবার অভিনয়ে
চোখের সামনে সরাইখানার ভিড়;
চোখের সামনে গ্লাস উপচানো রাত!
তুমি চলে গেছ, মুছে গেছ, তবু থির;
এমন ভিড়েও স্মৃতির বেনামে, হাসো নির্ঘাত;
তোমার ফোয়ারা পানিহীন নদে উজ্জ্বল!
চোখের সামনে তুমি নাই, তবু ঢেউ-ছল
ডিঙিয়ে স্মৃতিকে, মন্থন করে দুই পাড়!
তোমাকে লিখব ভেবে, লিখবার অভিনয়ে নিই নিস্তার!
স্বপ্ন
স্বপ্নে তুমি ঝুল বারান্দা আর পিছু নেওয়া অথই মেঘ না? অই গালফোলা উড়ুউড়ু মেঘ, যেখানে কালক্ষেপণ করে আর ঝরে পড়ে কেওক্রাডং যত উচ্চাভিলাষ যত প্রেমময় ঈশারাচিহ্নসহ, তুমি তিসি ফুল, গ্রাম বাংলার ঝরঝরে খাল, তাই আজ গাঁও গেরামের কাচা রাস্তায় এসে থেমে গেছি আমি, কই যাবো?
বলো কই যেতে পারি হাতে নিয়ে স্বপ্নের ব্যাখ্যা!
আমাদের সংসার
দেখি জামার সবুজ থেকে উঁকি দেয় কুল বড়ইয়ের পাতা, এই ছোট ঘরটাই আমাদের গয়নার বাকশো;
তুমি অলঙ্কার, ভেবে আশ্চর্য হই, একদিন স্মরণীয়তার কাছে ঘুরপাক দিয়ে ওঠে মানুষের নাম;
তুমিও কি সেরকমই নও!
এতসব সৌন্দর্য
এত এত নদী ও সুবিল
সবই কি বধির?
স্থিরতা আমাকে ছায়া দেয়, মেঘ দেয়
সমস্ত দুনিয়াদার করাতে দাঁত ঠেকিয়ে
আন্দাজ করি ধার;
আর যে কেনো ঘরে ফিরে
চুপচাপ হয়ে যাই, বুঝতে পারো নাকি?
সমুদ্র
নকশাকাটা বিউগল বাজে ঈগলের উড়ালে। আর শুধু দাঁড়টানা বাকি বলে জেলে মাঝিদের হল্লা সমাগত হয় পানশালার মৌন আলোয়।
এমনই দাঁড়িয়ে ছিলাম আমি, তুমি সমুদ্র, তোমার ধারে হাওয়া
যেভাবে ভাটফুলে চোখ যায়, রঙে নিষ্ঠা এনে দেয় রোদ, আমি তেমনই দাঁড়িয়ে ছিলাম এক জন্ম, সমুদ্র সাক্ষী রেখে!
বিরল উজান
তোমার ক্ষতের পাশে একবার বসতে চেয়েছি আমি
যেভাবে খোড়ল পেয়ে ডানাভাঙা পাখি এসে থামে;
থাকতে চেয়েছি ঝরো আগুনের পাশে, ছাই-কুটার নিকট;
যতদিন গান আছে ততদিন মহুয়া ছড়ায় নিশি
যেন তুমি ধানপাতা, মেথিগুল্মের বোনটি, নথবর্তুল তারাটিরও সই, আমাদের বিরল উজান থেকে আসে স্মরণীয় যত রোদের কণিকা;
তোমার হাসির কাছে হাত পেতে চেয়ে আছি দেখো, উতল দখিনা ছুড়ে!
কাজল
তোমাকে দেখি আর তিতিরের গলা নামে খুদের ওপর!
তোমাকে টোল পড়া দেখি, ফটো হয়ে চুপ করে আছ,
কতদিন সাঁকোর ওপর।
আর, ঢেকে আছে ধুলার বাগান মেঘের মাথালে শাদা, ঢেকে আছে অটোরিকশার গ্লাস!
তোমাকে একবার দেখি, উড়ে যায় তুলার ফড়িং
আমার যেদিকে ঘর, বিশ্বাসে ঢেঁকির আওয়াজ
সেইদিকে গানের বাঁধন হতে, স্রোত লেগে চিরচেনা নৌকার কাঠে কত না বুদবুদ হলো মন; তোমাকে হাওয়ার হিজাবে দেখি, ধোঁয়া ওড়ে মাঠের দিকে।
যেন-বা হেমন্ত এক টানটান কাজলের ধ্বনি
তোমার চোখে!
চেনা
এক এক করে স্মৃতি হতে খসে পড়া তারাদের নিয়ে
ভারি হচ্ছে নোটবুক, আমাদের গান ভরতি মৌসুমি হাওয়া এদিক-সেদিক ঘুরে পুনরায় প্রবেশ করছে ঘরে।
অথচ শহরের দিক থেকে শেষ ট্রেন তার সাইরেন বুকে নিয়ে ঘোষণা করছে বিদায়, যেন মেঘমালা, যেন অবসাদ গাঢ় হচ্ছে কারও, তোমার জন্য কোনো কোনোদিন মেঘ জন্মায় চোখে, এইসব কাতরতা নীল।
আজ কেন হৃদয়ে সীমিত আলো?
গানে ও গুঞ্জনে ঢাকা
চলিত ভাষার মতো আমরা দুজনে চেনা, চিরচেনা নই?
কিছুদিন
কিছুদিন আমি শ্রাবণে ছিলাম ধীর
কিছুদিন আমি অঘ্রাণে অস্থির;
কিছু কথা বলে দূরেই কেঁদেছিলাম
কিছুটা গানেতে পুনশ্চ বধির!
যে আলো চোখের, আছিল তুমুল সই
যে রীতি-বন্ধনে ছিল একাকার জুঁই
সুরভী ছিল না হৃদয়ে সীমিত কারও
তবু গেরো কাটে প্রিয় সম্পর্কেরও
তবুও তিমিরে ডুবছে মলিন মুখ
আজ গাঁথা ফুল, কালই বিদীর্ণ বুক।
তবু কিনারায় গ্রহ তাক করে চাঁদ
মানুষের গানে মানুষই অবসাদ।
পাথরে আবেগ
রক্তে অন্ধকার নিয়ে পথ হাঁটি আজ
তোমাকে স্মরণ করি ভোরে
যেখানে চিবুক রেখে গেছে ছায়ার স্বরাজ
সেখানে নিরব আমি অক্ষরে;
যেমন চড়ুইভাতি, হৃদয়ের সাক্ষরতা
জড়ো করে ফিরছে শৈশব;
তুমি কোনো প্রাচীণ সেতারে মৃদুতর টোকা!
অনন্য ভুলের কোনো সুরাহা সম্ভব?
রক্তে রাবার বাগান, ঘন ঘন হাই তোলে মেঘ
তোমাকে স্মরণ হলে নিশি, বেজে ওঠে পাথরে আবেগ!
আলো
চারদিকে মেঘ নিয়ে সারারাত খেলা করেছে চাঁদ, সে কি পাখি? নভোযান? তোমাদের ঘরের কাছেই নোঙর ফেলেছে জোছনা তার জরির চুমকি গায়ে, এদিকে আমি কোনো এপিটাফ হয়ে শ্যাওলায়ঢেকে গেছি বহুদিন, এদিকে আসে না কেউ!
এদিকে ডুমুরঝরা বৃষ্টির ডাক, ব্যাকগ্রাউন্ডে বাসের হর্ন;
কাছেই কারও চাবির গোছা, পড়ে আছে একা, ভরে আছে গাঢ়তর বিস্মৃতিবর্ণে;
এদিকে আসেনি কেউ, লেখেনি কেউ ‘আলো’!
আরও পড়ুন: নির্বাচিত নবীনের কবিতা