ভোরের আয়নায় পদ্ম ফোটে
রাত্তির, আমার পেয়ালায় অন্ধকার ঢালে আনমনে
ঢালতে ঢালতে দেউলিয়া হয়
মিলিয়ে যায় দিনের করিডোরে
আর আমি, পেয়ালাভর্তি অন্ধকার হাতে বসে থাকি
ভোরের চোখে চোখ রেখে দেখি
অস্ফুট আলোয় একটু একটু করে আদল পাচ্ছে তোমার মুখ…
আজন্ম পদ্ম ভালোবাসি, মনের মুকুরে ফোটো…
তপ্ত এক দুপুরের ছবি
ফুটপাতে জড়াজড়ি করে শুয়েছিল ওরা
তিনজন হা-ভাতে মানুষ
না, না, ভুল!
দুজন হা-ভাতে মানুষ আর হাড্ডিসার এক কুকুরছানা
অনভ্যস্ত চোখ প্রথমে কুকুর, পরে মানুষ এবং সবশেষে সত্যিটা দেখেছিল…
সূর্যটা জ্বলছিল তেজে
কয়েকটি মাছি কুকুরছানা আর মানুষদুটোকে ঘিরে উড়ছিল,
ভীষণ ব্যগ্র হয়ে
ফাগুন হাওয়া ধুলো উড়িয়ে ঢেকে দিচ্ছিল তাদের অভব্য শরীর…
মন এই ভেবে সান্ত্বনা খুঁজছিল যে,
গণপ্রজাতন্ত্র মাঝেমধ্যেই কুকুরনিধনযজ্ঞে মন দেয়
আর শিগগিরই আমরাও উন্নিত হতে যাচ্ছি মধ্যম আয়ের দেশে…
অবশ্য কুকুরছানাটির মধ্যে সামান্য উদ্বেগও ছিল না
হা-ভাতে মানুষ দুটোর ভেতর সেঁধিয়ে নাক ডাকাচ্ছিল জোর…
আর কী আশ্চর্য!
হা-ভাতে ছানাটিকে কী মমতায়ই না আঁকড়ে রেখেছিল!
ছ্যা!
তৃষ্ণা
আর কখনো ফেরা হবে না, জানি
ফাগুন রাতের হাওয়ায় রুপালি নাচন তোলা জোছনার ঢেউ
দেখা হবে না কোনোদিন আর
বোবা চাঁদ অমনই ঝুলে থাকবে শূন্যে
মাঝরাতে ক্ষুধার্ত কুকুরটা অমনই কেঁদে উঠবে হঠাৎ
কিছুই শোনা হবে না আর
থৈ থৈ লালে ভেসে যাবে কৃষ্ণচূড়ার শরীর, শিমুলের বন
বাসন্তি রঙে হেসে উঠবে ভরন্ত ফাগুন
মন তবু তপ্ত হবে না আর কোনো অকারণে
অভিমানে তবু ঝরাবে না নোনাস্রোত চোখের নদী
অকারণ হর্নের শব্দ, মাইকের আওয়াজ, নির্বাচনি প্রচারণা,
নিদারুণ অবহেলায় পাশ কাটিয়ে ফিরে যাবো
ফিরে যাবো আপন গন্তব্য বরাবর, নিরাসক্ত, নিরাবেগ
তোমার ভ্রূকুটি চোখ, অবহেলার তুমুল আয়োজন, উপেক্ষার বহুবিধ ছল
তুমুল উপেক্ষায় ছুঁড়ে দিয়ে চলে যাবো
ফিরে যাবো গন্তব্যে আমার
তবু বসন্ত ফিরে আসবে বারবার
তবু রঙিন ফুটবে কৃষ্ণচূড়া
তুমিও তুমুল প্রেমে পড়বে আবার জীবনের আয়োজনে
জানি…
শুধু আমারই ফেরা হবে না আর কোনোদিন…
কুহক
ঝড় উঠেছিল খুব
উড়ে যাচ্ছিল যাপিত জীবন
যা কিছু ক্লেদ, গ্লানি, জরা
উড়ে যাচ্ছিল আমাদের সম্পর্কে জমে ওঠা ঘৃণার গাঢ় মেঘ
থোকা থোকা শরতের নীল আছড়ে পড়ছিল আমাদের সম্পর্কের জালে
স্বচ্ছ বরফ গলে যাচ্ছিল জল হয়ে
তুমি ভাবছিলে, এবার রোদ্দুরে ডুবে যাবে
আমি ভাবছিলাম, এবার অন্ধকার ঘুচে যাবে
আমাদের যুগল ভাবনার জালে আটকে যাচ্ছিল তাবৎ স্বপ্নকুসুম
শিমুলের বুকে নামা থৈ থৈ লালের প্লাবন এসে
রঙিন করছিল আমাদের বিবর্ণ যাপন
ক্রমশ আকাশ নামছিল আমাদের ইচ্ছে ছুঁয়ে
ক্রমশ ইচ্ছে ছুঁয়েছিল আমাদের আরাধ্য আকাশ
ঝড় থামতেই আমার আমি মুখ থুবড়ে পড়ে আছে
যাপিত জীবনের নষ্ট ফ্রেমে
তোমার তুমি
ঘৃণার পারদ নিয়ে উঠে যাচ্ছে স্পর্শের আড়ালে
লণ্ডভণ্ড পড়ে আছে শিমুলের গাঢ় লাল
অবিকল আমাদের হৃৎপিণ্ডের ক্ষত…
অনুরণন
শেষ ট্রেন চলে গেছে বহুক্ষণ
শেষ যাত্রীটিও গন্তব্য চিনে নেমে গেছে সেই সে কখন
একটি ভুল বাঁশি সুর তুলে বেজে বেজে থেমে গেছে দূরে
একপোঁচ নিকষ আঁধার এঁকে নিভে গেছে গোধূলির রঙ
রাতের বুকের ভেতর বেদনা লটকে দিয়ে সরে গেছে পরিযায়ী প্রেম
শূন্য স্টেশনে কিছু যন্ত্রণার খোসা, পরিত্যক্ত, ভোঁতা কিছু ব্যথার বোধ, ফিকে কিছু স্বপ্নের কুঁড়ি
উড়ে যাচ্ছে হাওয়ার পায়ে নিক্বন বাজিয়ে দিয়ে
ফিরে যাচ্ছে বিচ্ছিন্ন তুলোর মতো শূন্যের বুকের ভেতর
শূন্য প্লাটফর্ম জীবন উগড়ে দিয়ে ডুবে গেছে নৈঃশব্দ্যের জলে
দূরে, একাকী ঢুলছে এক বেভুল পথিক
পথ শেষ, তবু গন্তব্য মেলেনি আর!