বোধ
শুধুই তোমার নাম এঁকে যায় সময়ের দীর্ঘ চাতাল
আমাকে তাড়িয়ে ফেরে শিল্পের জরা
প্রাপ্তির বেশি বঁধু এতটা অধরা
সৃষ্টির মোহে কবি বেহেড মাতাল।
এই হাসি এই গান, বুকের রক্তমাখা এই রঙতুলি
ছুঁয়ে যায় যথারুচি ঠোঁট, চোখ, বুকের মহিমা
বাকি থাকে অভিমান, প্রণয়ের বীমা
কী করে পূর্ণ করি সময়ের ঝুলি?
এই যে কথার মালা, মধুময় প্রিয় সঙ্গীত
কিছু পায় আলোছায়া, কিছু থাকে বোধের অতীত।
দূরত্ব-বন্দনা
অত কাছে গিয়ে ফিরে আসি
শেষাবধি দূরত্বের জয়।
প্রতিদিন বাড়ে যদি দূরত্বের সীমা
আমি কি নাগাল পাব বিরহী আকাশ!
নীলাকাশ ছুঁতে চায় পবিত্র পৃথিবী
তাই তাকে ঘিরে রাখে দিকচক্রবাল
খোলা চোখে যত দেখ আকাশ-মাটির মিল
তবু তারা অধরামাধুরী।
প্রতিটি প্রহর থাকি বুকের ভূগোলে
তুমি কি জানো না প্রিয় সেই ইতিহাস?
কত দূরে খাজুরাহ? কামাখ্যা কোথায়?
কবিতার আঁতুড় ঘরে
এই যে আমার গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা
এই যে আমার শহিদমিনার সাক্ষী রাখা
এই যে আমার নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে
. রোজ নাগরিক ভোরের দেখা
সব কি শুধু জলের রঙে থাকবে লেখা?
এই যে আমার চায়ের কাপে রূপলাবণ্য জমা রাখা
এই যে আমার শাদাখাতায় বলপয়েন্টে কালি মাখা
এই যে আমার ফুলের মূর্তি
. যত্নে গড়া অনুভবে
সব কি শুধু বিফলতার বন্ধু হবে?
আমার সকল আকুলতা
. বন্দিদশা স্বীকার করে
বৃথাই আমি হাতড়ে মরি
আজ কবিতার আঁতুড় ঘরে।
আকাশ, পদ্মা ও চাঁদের যৌবন
আকাশ যেখানে পদ্মা ছুঁয়েছে
সেখানে অত লালের বন্যা কেন?
গোধূলির আলোমাখা চোখে
. শিল্পের আকাঙ্ক্ষা শুধু
ও পদ্মা, আমাকে নাইতে নেবে?
শাদা-কালো-লাল-নীল মেঘ
তোমার মুখের লাবণ্য চেটেপুটে খায়
পূর্ণিমার চাঁদে অত আগুনের শিখা!
আমি ঈর্ষায় জ্বলি, ক্ষতাক্ত হই।
একাদশীর চঁদের মতো শুভ্রার ঠোঁট
. আমার প্রিয়তম উৎপ্রেক্ষা
ও চাঁদ, তোমার জানালা খোল।
হৃদয়ে আমার পার্সিফেনের মায়া
পেছনের জ্বলজ্বলে চাঁদের যৌবন
সামনে গোধূলির মায়াবিনী হাত
ও আকাশ, তোমার আঁচল সরাও
আমি মুখ লুকোনোর জায়গা খুঁজি।
চাঁদোয়া
চাতালে দাঁড়িয়ে কাঁদে মিহিন বাতাস
চুমুরিরা ঝরে পড়ে জোছনার গায়
চাঁদমারি চুপচাপ নীল নীরবতা
চামচিকা উড়ে যায় অদূরে ছায়ায়।
চাঁচর চুলের মেয়ে গোপন ক্ষুধায়
চুম্বনের ঘ্রাণ মাখে মুখের ভূগোলে
চরকাবাজির স্রোতে ভেসে যাই একা
চকসা আকাশ থাকে অদৃশ্যের কোলে।
চাঁদোয়ার তেজে আমি অহরহ পুড়ি
চণ্ডীদাস রক্ষ কর প্রেমের মাধুরী।
স্থিতি
সিংহদরোজায় কপাট তুলেছে কে?
সুখতলা ক্ষয়ে-ক্ষয়ে এতদূর আসা!
সংবাদ নেয়ার কোনো আয়োজন নেই?
সিংহদরোজায় কপাট তুলেছে কে?
সুরম্য চৌহদ্দি জুড়ে ক্লান্তি ধুই আর
সন্ধিনীর নাচ দেখি আঙিনার কোলে
সন্ধ্যার এই আলোয়
সপ্রতিভ প্রজাপতি খেলা করে
সন্ধ্যামণি-ঝাড়ে।
সাহজিক এই দৃশ্য ঝুলে থাকে
স্বপ্নময় চোখের দেয়ালে।
সিংহদরোজায় কপাট তুলেছে কে?
সুলুকসন্ধানী চোখ পেয়ে গেছে
সুন্দরের সমূহ সাক্ষাৎ
সোমত্ত মানুষ আমি
স্থিতি চাই
সায়ন্তন জীবনের কাছে।
সোনালি অসুখ
সাড়ে তিনটি শাদা বছর পরে
আমার সাথে সাক্ষাৎ করে এক সোনালি অসুখ।
উত্তপ্ত আলোচনা হয়
তীর্যক বিতর্ক হয়
তিক্ত নিরস সংলাপ চলে ছাপ্পান্ন প্রহর।
প্রস্ফুটোন্মুখ কেয়ার সৌরভ যদি
আমার সমুদয় অসুস্থতাকে ঢেকে দিতে পারে
বদলে দিতে পারে জীবনের
. গোপন কণ্ঢারা
আমি সাত পায়ে রাজি।
সোনালি অসুখ তুমি দীর্ঘজীবী হও।
বৃষ্টি
বৃষ্টির ধমকে আমাদের প্রথম ঘনিষ্ঠতা।
বেহায়া বৃষ্টির কাছে হার মেনে
একদিন রিক্সার ছইয়ের ভেতর
শরীর লুকাই।
আহা! প্রতিটি বিকেল যদি বৃষ্টিময় হতো!
সম্পর্কের উষ্ণতা রক্ষায়
কে পোড়াত এত কাঠ-খড়!
আজকাল তোমার কথা মনে হলে
আমার আঙিনা জুড়ে বৃষ্টি নামে
থই-থই জলে পা ডুবিয়ে
দৌড়ে আসে রিক্সার দঙ্গল।
খোলাবাজার
খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে আমাদের অধিকার।
খরশান রোদে হেঁটে-হেঁটে ফেরি করি
. খনার বচন।
খেমটাওয়ালি তবুও থামে না।
খাতিরজমা বসে-বসে বাড়ায় মেদভুঁড়ি।
খিদে-মরা রাত আমাদের শোনায়
. খোয়ারিভাঙার গল্প—
খাপরার ভেতরে বসে এইসব চুপচাপ শুনি।
খোলামকুচি ভেবে যারা আমাদের প্রতি
নাক সিঁটকায়
খোঁচাখুঁচি যাদের মজ্জাগত স্বভাব
খান্দানি সেইসব রুইকাতলার জন্যে
খেটে-খাওয়া মানুষগুলি আজ
খেপজাল হাতে প্রস্তুত।
খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে আমাদের অধিকার।
মামুলি
মৈনাক ছেড়েছে আজ অবেলায়
মোক্ষধামে যাবে বলে পথ খোঁজে
মেনকাসুন্দরী।
মেহেদির রসে আঁকা
মেনকার মাটিলেপা হাতের উঠোন;
মৈথুনের চিহ্ন তার
ম্রিয়মাণ শাড়ির কোণায়।
মলমাসে মেনকারা কোন দূরে যায়?