চৌদ্দ.
সেই সব অস্পষ্টতা চোখের কক্ষপথে এখনো চলমান, যাঁদের কথা বলবো বলে আসরে বসে থাকি; অথচ আসরের লোকেরা পরনিন্দায় মশগুল!
দূর গ্রহের দিকে তাকিয়ে থাকার স্বভাবে দেখি একটা মায়াময় মুখমণ্ডল; একটা নাতিশীতোষ্ণ বিকেলের উদ্যানে আলো নিভে যাওয়া পর্যন্ত—আঙুলের স্পর্শ নেওয়ার অপেক্ষা…
আমাদের কিছুই ছিল না কোনোদিন, যে রকম থাকে না একজন নিঃসঙ্গ রাখালের; তবু সে বাঁশি বাজিয়ে পৌঁছাতে চায় তুমুল ঠিকানায়।
তোমাকে দেখার অভ্যাসে কাটানো দিন শেষে একদিন ঠিকই উঠে যাবো আসর থেকে, আড্ডার লোকেরাও ফিরে যাবে ঘরে। মেনে নেব এই সব যাপনের দিন; বিদ্যুৎ পরিবাহী বাদুরের মতো তড়িতাহত অথবা নিহতের তালিকায় লেখা হবে নাম।
তেরো.
অভিমানের আয়নায় নিজেকে দেখার মতো এই বৃষ্টি কিংবা পলাতক সূর্যের দুপুর স্থির হলো বারান্দায়। আমাদের নাক্ষত্রিক পরিভ্রমণের দিনগুলো একদিন সোনালি হতে চেয়েছিল!
সোনালি দুঃখ অথবা সোনালিরা দুঃখের বার্তা রেখে গেছে মেঘের পালঙ্কে; এখন শুধুই অপেক্ষার কাল। পরিচিত গ্রহ ছেড়ে একদিন চলে যাবো…এই সব ভাবনারা আজকাল খুব করে ঘিরে ধরলে একটি মুখচ্ছবি আঁকার চেষ্টা করি।
চোখ বুজলেই নক্ষত্ররা ঝাঁকবেঁধে নৃত্য করে! যেন ছুড়ে দেওয়া জালে আটকা পড়া প্রাণপণ ঝাপটানো রূপালিমৎস্য! না কি মৎস্যকন্যাদের অবিরাম যাতায়াত! কত কিছুই তো জানা হলো না।
ঝড়ে নিহত পাখিদের জন্য কোনো শোকগাথা নেই, তবু শহরজুড়ে হাওয়াদের দূতিয়ালি চলে সারারাত। নরম নরম ভোর প্রতিনিয়ত আসে আর যায়; কেবল একটা বারান্দা হয়ে ওঠে মহাজাগতিক নীলাদ্রিচূড়া।
এগারো.
একটা আশ্চর্য প্রদীপের অপেক্ষায় কেটে গেছে দিন। অথবা মধুর চৌম্বকীয় টান কী ভীষণ প্রতীক্ষায় বসিয়ে রাখে! ত্বকের স্পর্শে বিদ্যুৎ, চোখের চারপাশে রঙিন বাগান, বুকের খাঁচায় অস্থিরতা! এইসব ছিল একদিন।
প্রদীপের আশ্চর্য ক্ষমতায় প্রগাঢ় বিশ্বাস; একটা গোলাপ কিংবা ছোট্ট চিরকুটের ওপর কী অগাধ আস্থা! টেলিপ্যাথি চলে দিনরাত, আমাদের কথোপকথন বাতাসে বাতাসে কাটাঘুড়ি।
বিশ্বাসের দৈত্যকে ডেকেছিলাম একদিন। আলৌকিক আস্থায় পথ হেঁটে তোমাকে ছুঁয়ে দেওয়ার বাসনায় কাটানো দিন শেষে জেনেছি তিলবতীরা ছিল না কোথাও কোনোদিন।
চোখ বন্ধ করে চুমু খাওয়ার মতো একটা অদৃশ্যকে ভালোবেসে অপেক্ষা করা যায় হয়তো; নইলে পৃথিবীজুড়ে এত এত বিশ্বাসের চেরাগ!
নয়.
তুমি বললে অসম্ভব! আর তখনই সকল সম্ভাবনারা হাঁটু গেড়ে বসে গাইলো ব্যর্থতার গান।
তুমি বললে মেঘ হবো, আর অমনিই নক্ষত্ররা ঝাপসা হতে লাগলো।
তুমি নদীর দিকে হেঁটে গেলেই আমার কণ্ঠে মরুতৃষ্ণা!
তুমি মুখ ফিরিয়ে নিলে—পাতারা অবনত; চোখ থেকে চিবুকে হেঁটে যায় পিলগ্রিম, দীর্ঘায়িত হয় প্রার্থনা। একটা বিকট চিৎকার চেপে রেখে, চায়ের কাপে ঠোঁট ছোঁয়ানোর পারদর্শিতায়—বেঁচে যাই হয়তো।
টান, একটা শব্দ মাত্র; বৃষ্টি কিংবা জলের মতো অতি সাধারণ। কেবল চোখ থেকে জল গড়ালেই আগুনের নাম হয় হিমবাহ।
এক.
আমাদের ঘিরে ছিল পায়রার ওড়াউড়ি, আমাদের চোখে ছিল ঘোরলাগা ঢেউ! ভাসলাম, ডুবলাম, চোখ বন্ধ করে ঘুরে এলাম রঙের সমুদ্দুর!
প্রেম কাকে বলে জানে নাই কেউ, মানুষ দেখে শুধু দেহের বাহার! মৃত্যুর মতো ছোট্ট অধ্যায় নাকি টেনে দেয় জীবনের সমাপ্তি! দেহের স্পর্শে মজেছিল যারা—তাঁদের সঙ্গে দ্বিমত বলে রয়ে গেছি নিশ্চুপ।
কোথাও ক্ষয়ে যাচ্ছে ঠোঁট! চুম্বন ছড়িয়েছে মায়াবি তেজস্ক্রিয়তা! চোখের ভেতর চেরনোবিল দুঃখ! পায়রার বন্দরে পড়ে আছে পুরনো নোঙর।
আমি কেবল ঘুরি ফিরি বন্দরে বন্দরে, জলের স্বভাবে ছুটে যাই বিভ্রমের দেশে; বিমূর্ত সরাইখানায় সরাবের গেলাসে ভেসে থাকা চাঁদ থেকে উপচে পড়ে জ্যোৎস্নার বু্দ্বুদ!