টান-৯
তুমি বললে অসম্ভব! আর তখনই সকল সম্ভাবনারা হাঁটু গেড়ে বসে গাইলো ব্যর্থতার গান। তুমি বললে মেঘ হবো, আর অমনিই নক্ষত্ররা ঝাপসা হতে লাগলো। তুমি নদীর দিকে হেঁটে গেলেই আমার কণ্ঠে মরুতৃষ্ণা!
তুমি মুখ ফিরিয়ে নিলে—পাতারা অবনত; চোখ থেকে চিবুকে হেঁটে যায় পিলগ্রিম, দীর্ঘায়িত হয় প্রার্থনা। একটা বিকট চিৎকার চেপে রেখে, চায়ের কাপে ঠোঁট ছোঁয়ানোর পারঙ্গমতায়—বেঁচে যাই হয়তো।
টান, একটা শব্দ মাত্র; বৃষ্টি কিংবা জলের মতো অতি সাধারণ। কেবল চোখ থেকে জল গড়ালেই আগুনের নাম হয় হিমবাহ।
টান-১০
পায়রারা সবুজ হলে বেশ হতো! টিয়েরা লাল! আর কাকগুলো হলুদ হলে মানাতো বেশ! মেঘগুলো নেমে এলো নাশতার টেবিলে! পিরিচে, কাপে ও গেলাশে! ওমলেটের কমলা কুসুমকে উদিত সূর্য ভেবে সুখী হবো!
এরকম অনেক কিছুই ভেবে নেওয়া যায় নিজের ভেতর, অনেক কিছুই গড়ে নেওয়া যায় কল্পলোকে।
যে রকম আমি অথবা দান্তে, দান্তে অলিঘিয়েরি অথবা আহমেদ শিপলু;
যে রকম তুমি অথবা বিয়াত্রিস।
মনে করো আমরা ডিভাইন কমেডি, অথবা এসবই আমাদের সম্মিলিত অপেক্ষা।
টান-১১
একটা আশ্চর্য প্রদীপের অপেক্ষায় কেটে গেছে দিন। অথবা মধুর চৌম্বকীয় টান কী ভীষণ প্রতীক্ষায় বসিয়ে রাখে! ত্বকের স্পর্শে বিদ্যুৎ, চোখের চারপাশে রঙিন বাগান, বুকের খাঁচায় অস্থিরতা! এইসব ছিল একদিন।
প্রদীপের আশ্চর্য ক্ষমতায় প্রগাঢ় বিশ্বাস; একটা গোলাপ কিংবা ছোট্ট চিরকুটের ওপর কী অগাধ আস্থা! টেলিপ্যাথি চলে দিনরাত, আমাদের কথোপকথন বাতাসে বাতাসে কাটাঘুড়ি।
বিশ্বাসের দৈত্যকে ডেকেছিলাম একদিন। আলৌকিক আস্থায় পথ হেঁটে তোমাকে ছুঁয়ে দেওয়ার বাসনায় কাটানো দিন শেষে জেনেছি তিলবতীরা ছিল না কোথাও কোনোদিন।
চোখ বন্ধ করে চুমু খাওয়ার মতো একটা অদৃশ্যকে ভালোবেসে অপেক্ষা করা যায় হয়তো; নইলে পৃথিবীজুড়ে এত এত বিশ্বাসের চেরাগ!
টান-১২
চেনা পথঘাট অচেনা মনে হলে বুঝে নেই গন্তব্য; এ রকম হেঁটে যাওয়া দিনগুলো রাখা যায় না ঘুমের ব্যালকনিতে। সেখানে যার ছায়া আসে যায়, সে থাকে অন্য ঘরে।
চোখের চুল্লিতে ঝাঁপ দিতে গিয়ে আগুনের কথা মনে রাখা কোনো বুদ্ধির কাজ নয়; অথচ নির্বোধেরা প্রেমিক হয় না কখনো।
এইসব ছায়া ছায়া সঙ্গীরা আজকাল ভিড় করে খুব; মুখস্থ পথে যারা আসে যায়, তারা কেউ আমার নয়। আমিও কারো পথের দিকে হেঁটে যাইনি হয়তো; অথবা পথেরা বেড়াতে গেছে অন্য কোথাও।
টান-১৩
অভিমানের আয়নায় নিজেকে দেখার মতো এই বৃষ্টি কিংবা পলাতক সূর্যের দুপুর স্থির হলো বারান্দায়। আমাদের নাক্ষত্রিক পরিভ্রমণের দিনগুলো একদিন সোনালি হতে চেয়েছিল!
সোনালি দুঃখ অথবা সোনালিরা দুঃখের বার্তা রেখে গেছে মেঘের পালঙ্কে; এখন শুধুই অপেক্ষার কাল। পরিচিত গ্রহ ছেড়ে একদিন চলে যাবো…এইসব ভাবনারা আজকাল খুব করে ঘিরে ধরলে একটি মুখচ্ছবি আঁকার চেষ্টা করি।
চোখ বুজলেই নক্ষত্ররা ঝাঁক বেঁধে নৃত্য করে! যেন ছুড়ে দেওয়া জালে আটকাপড়া প্রাণপণ ঝাপটানো রূপালি মৎস্য! নাকি মৎস্যকন্যাদের অবিরাম যাতায়াত! কত কিছুই তো জানা হলো না।
ঝড়ে নিহত পাখিদের জন্য কোনো শোকগাথা নেই, তবু শহরজুড়ে হাওয়াদের দূতিয়ালি চলে সারারাত। নরম নরম ভোর প্রতিনিয়ত আসে আর যায়; কেবল একটা বারান্দা হয়ে ওঠে মহাজাগতিক নীলাদ্রিচূড়া।
টান-১৪
সেইসব অস্পষ্টতা চোখের কক্ষপথে এখনো চলমান, যাদের কথা বলবো বলে আসরে বসে থাকি; অথচ আসরের লোকেরা পরনিন্দায় মশগুল!
দূর গ্রহের দিকে তাকিয়ে থাকার স্বভাবে দেখি একটা মায়াময় মুখমণ্ডল; একটা নাতিশীতোষ্ণ বিকেলের উদ্যানে আলো নিভে যাওয়া পর্যন্ত—আঙুলের স্পর্শ নেওয়ার অপেক্ষা…
আমাদের কিছুই ছিল না কোনোদিন, যে রকম থাকে না একজন নিঃসঙ্গ রাখালের; তবু সে বাঁশি বাজিয়ে পৌঁছাতে চায় তুমুল ঠিকানায়।
তোমাকে দেখার অভ্যাসে কাটানো দিন শেষে একদিন ঠিকই উঠে যাব আসর থেকে, আড্ডার লোকেরাও ফিরে যাবে ঘরে। মেনে নেব এইসব যাপনের দিন; বিদ্যুৎপরিবাহী বাদুড়ের মতো তড়িতাহত অথবা নিহতের তালিকায় লেখা হবে নাম।