বুক বাড়িয়ে চোখ থামিয়ে
কী দেখছ কী
ডাঙায় বসে জলের ধারে
এই বিকেলে—
খেলপেটুয়া নদীর জলে
চোখের ছায়া নেমে এলে
কানের দুলটি ওঠছে কেঁপে
এই বিকেলে—
গলা তুলে কৌতূহলে
পাঁচটি হাঁসি ডানা মেলে
চুনের ছোপে নীলের বনে
ঝুলছে আকাশ উপুড় হয়ে
এই বিকেলে—
সবুজ ঘাসের দ্বীপের কাছে
জলের আয়নায়
তোমার ঘরটি ভাসছে দুলে
এই বিকেলে—
একটু দূরে বিলের জলে
কলমিলতার ফাঁকে ফাঁকে
তড়িৎখুঁটি যাচ্ছে ফেঁড়ে
জল পেরিয়ে পাতাল দেশে
এই বিকেলে—
বিলের ঘাটে আঁচল ভিজে
পাতলা রোদে
মুখটি ভাসে
গানের পাখি ফুরফুর করে
দল বেঁধে যায় যায় যে উড়ে
এই বিকেলে—
চোখের দূরে কাঁপছে দেখি
বিলের মাঝে একটি ডিঙি,
পাটাতনে ঝুঁকে বসে
পদ্য লেখায় মজে আছে
সাদা ফুলের দাড়ি-চুলের
রবি ঠাকুর
এই বিকেলে—
লগির খোঁচায় যায় ঢলে যায়
পশ্চিম তীরে সিঁদুর ডালিম
শেষ বিদায়ের হাসি হেসে
এই বিকেলে—
নৌকা নিয়ে জেলে ফেরে
জলের ধারে পাখির নীড়ে
উপচে পড়ে গিন্নির মুখে
অনটনের পদ্মপুকুর
এই বিকেলে—
বেঞ্চে বসে পাখি দেখে
জলে ভাসছে রক্তডুমুর
পথের ধারে একটি সাইকেল
বুক জুড়ে তার মৌন দুপুর
এই বিকেলে—
বাড়ির পাশে টাখনুজলে
ঘাসি মাঠে খেলছে কিশোর
নাঙা গায়ে জল ছলাৎছল
জল ছলাৎছল
এই বিকেলে—
বুড়িবুড়ার চোখের কোণে
পেঁজা মেঘের আঁচল ওড়ে
তুমুল বৃষ্টি টিনের চালে
চোখের কোণে কবর ভাসে
এই বিকেলে—
পিয়াস মিটায় ঘাসের ডগায়
গরু-মহিষ-ছাগল-ভেড়া
ফুল খেল তাই নির্বাহী ভাই
বেচে দিল চড়া দামে
গরিব চাষি করছে হায়! হায়!
এই বিকেলে—
নেশার চোখের লালের ছোপে
সন্ধ্যা তখন আবির আবির
সাইকেলযোগে যাচ্ছে পাখি
কোন বনেতে কিসের খোঁজে
এই বিকেলে—
বাগাড়-বোয়াল কিনে নিচ্ছে
চারণভূমি, সকল চাতাল
তাই তো বনসাই নতুন শিশু
ভার্চ্যুয়ালে খেলা করে, পাখি কাঁদে
এই বিকেলে—
এই বিকেলে—
তোমার সাথে খেলার ছলে
ফুলের কাঁটায় বিদ্ধ করে
পাড় উপচানো শৈশব নিয়ে
দিচ্ছি পাড়ি আকাশগঙ্গা
চোখের কোণে কবরজবা
কবরজবা
এই বিকেল!
আরও পড়ুন: সান্ধ্যকোরাস ॥ সানাউল্লাহ সাগর