হিঙ্গুলা
পাথরেরও ঢেউ ওঠে, কাতরায় কুড়ি কুড়ি যুগ।
খুলে যায় পরিপাটি খোঁপা
জলের কামড়ে বাড়ে অনাদি অসুখ।
চুকালে লেনদেন স্ববিরোধী দরবার শেষে—
হয় না খোলা তবু ব্যথার ছিটকিনি।
স্বতঃসিদ্ধ বদান্যতায় দিয়ে দিলে সবটুকু ভার
কে আছে নেবার, দায়টুকু? আকাশহীন নষ্ট জোছনার!
মিঠে রোদেরও থাকে গোপন দীর্ঘশ্বাস
মিটে গেলে শরীরী সুখ;
অনুচ্চারিত জখমে বিছানাও মুখ লুকিয়ে কাঁদে।
নষ্টকষ্টে যতটুকু ক্ষতি, তার চেয়েও অধিক অতি
ছুঁয়ে গেলে প্রতারকের ঠোঁট।
জীবন জড়িয়ে গেলে ভুল অর্গাজমে
আড়ম্বরহীন নিস্তরঙ্গ প্রবাহে দুমড়েমুচড়ে যায়—
পিতলের ঘটি।
পেয়ে গেলে সবিশেষ না পাওয়ার ছল
নিভে গেলে শখের আগুন;
অবশিষ্টে পড়ে থাকে শেয়ালের ধূর্ততা।
ঝড়ের কবলে যখন দরিয়ার জল
তরঙ্গে তরঙ্গ ওঠে
বেহিসেবের দেনায় লুটায় ঘনবাদ্যের ধ্রুপদী মল।
তবুও জীবন ধায় আদি অকারণ
না থাকুক হাতের কাছে হিঙ্গুলার বন!
ঝরাপাতা
এখানে মেঘেরা রাত করে বাড়ি ফেরে
এখানে আঁধার আলোর কাছেই থাকে।
মৃত্যুনেশায় জীবন এসেছি ছেড়ে—
যাপন এখনো জাগতিক ছবি আঁকে।
পাখিরা বলেছে ফুলেদের মৌসুমে
ভ্রমণের গানে চলে যাবে দূরদেশে।
অযুত রাতের হতাশা যেখানে ঘুমে
সেখানে কিছুই থাকে না তো অবশেষে।
সেখানে কেবল রাত-পাপিয়ার হাসি
কালো কালো দহ, মিশে যায় দূরবনে।
মেঘের ভেতরে বিদ্যুৎ বারোমাসি
জ্বলতে জ্বলতে ভেজানোর আয়োজনে।
জীবনতৃষায় চপল-মৃত্যু চুমে
মানুষ এখানে মানুষের কাছাকাছি!
পরিযায়ী পাখি অনন্ত শীতঘুমে
উড়ে যেতে যেতে বলে যায়—আমি আছি!
বিচ্ছেদ বাড়ে নির্মম ব্যবধানে—
অবহেলা নিয়ে গাছের পাতারা ঝরে!
বিদায়ী বেহালা বাতাস-বাঁশির টানে
এখানে পিপাসা তরল-তিয়াসে মরে।
যেমন তিয়াসে কবির হৃদয় কাঁপে
ঝরাপাতাসম—ব্যাকুল মনস্তাপে।
অসুখ
আপেল পাতায় আটলান্টিকের ঘ্রাণ
ডাহুক-সময়ের বুকচিরে নেই গৌণ আপত্তি।
আয়েশী ঢেঁকুর তুলে
বয়সী চশমার কাচ জোড়ায় চলছে
কিছু অভিধাযুক্ত শব্দের বেমালুম ওড়াউড়ি।
কোথাও চুম্বন থেমে নেই; নেই আগামীর অপেক্ষা।
ঘোড়সওয়ারদের পাশকাটিয়ে
সমকালীন ভালোবাসারা
ব্যর্থ-বিগতদের
বেশ করে জানিয়ে দিচ্ছে সফলতার সংজ্ঞা।
মেঘদল নিয়ম করে বাড়ি ফিরছে।
আদিগন্ত ফুঁড়ে আলোর জোয়ারে ভাসছে দীর্ঘ ডানার চিল।
উপোষী শরীরজুড়ে অভিসারের ঢেঁকুর তোলা গল্প।
পৃথিবী নিলামে উঠবে বলে নতজানু বারান্দার কোলঘেঁষে
কাকের জনসভায় বাড়ছে হট্টগোলের ধুম।
দেবতা নয়, ঋতুচক্রের প্রতারণায়
অসুরের হাতে নাচে অঘটনঘটনপটীয়সীর চাবিকাঠি।
দূরে জাহাজের সিম্ফনি!
বিমূর্ত জানালায়
রাতগুলো রাতের মতো, দিনগুলো ভীষণরকমের দিন!
মুঠোয় নিয়ে অফুরন্ত হোমানল- বসে ছিল যে,
তারও ফিরেছে সময়।
বইছে কালিন্দীর গল্প;
বাতাস কাঁধে নিয়ে উড়ছে প্রার্থিত ভোর।
সবই ঠিকঠাক—
কেবল আমার এমন অসুখ কেন?
সুখতিলক
তুমি শুভ সকাল বললেই—আমার দিন খুলে যায়।
ঊষার শরীরে নামে খুশির নহবত,
হেসে ওঠে পৃথিবী
হলি খেলে আদুরে সন্দেশ!
শিশিরের টুপটাপ ভেজা ভেজা ঘাসে!
আদি আরশিতে মুখ দেখে কেবল ভূমিতে নয়;
পাখোয়াজ তানপুরা বাজে আকাশে আকাশে।
তুমি শুভ সকাল বললেই—ব্যাকরণহীন সময়!
মিহিদানা রোদের সাথে
বুকের ব্রোথেলে নামে সবুজ অরণ্য।
পরিত্যক্ত ডাকঘরে চিঠি আসে!
ভরা গ্রীষ্মে শুরু হয় বরফের ঝুমুর নাচ, মীরার ভজন।
ঘুচিয়ে পাণ্ডুলিপির দেনা
বুকের চাতালে বাড়ে সোনাদীঘি জল
গ্যালিলিওকে পাশ কাটিয়ে
খুলে যায় নতুনত্ব সন্ধানের অবারিত দোর।
তুমি ভালোবাসি বললেই—মৌনতার পদাবলি ভর করে!
শ্রীহীন শহরে ফেরে মহৎ অঙ্গীকার
ফিরে আসে ছেড়ে যাওয়া রাত
জিপসি ফুলগুলো পায় দীর্ঘজীবন
অমরতার আদর আলেখ্যে
ঠোঁটের কোণে জন্ম নেয় এক খুনপিপাসু সুখতিলক!
তুমি ভালোবাসি বললেই—আমি অদম্য ইচ্ছে!
কালস্রোতের সবটুকু সময় আর অসময় আমার হয়ে যায়।
ইথারে ইথারে ভাসে তুমি-তুমি ঘ্রাণ,
ন্যানো সেকেন্ডেই বেশুমার বেড়ে চলে হৃদয়ের রোগ
তোমার ‘শুভ সকাল’ই আমার ভালো থাকার অমৃতযোগ।