একটি অসরল কবিতা
ল্যাম্পোস্ট ভেবে হাফপ্যান্ট খুলে নিতেই সামনে এসে দাঁড়ালো
ভূমিবিদ্ধ স্বর, কোনও কোনও ভ্রান্তিতে ভাঁজমুক্ত সন্ধিপ্রস্তাব।
তার অধিকাংশই মানা যায় না। আর সব কবিতাও এক তালে
যায় না। কতক হত্যে দিয়ে পড়ে থাকা শূন্যতা। অরুনিমা এসে
উল্টে দিলে ছায়া—কয়েকটি গর্দভ গান তোলে মানুষের গলায়।
ল্যাম্পোস্ট ভেবে হাফপ্যান্ট খুলে দিতেই চিকচিক, অসংখ্য বুননে
চুড়িদার পাজামা। মূলত তাতে আমার তাল ভালো যায়। আমি
চাই না চাই—অরুণিমা এসে বারবার খুলে ধরে কবিতা। কতক
সূচিকর্মে কতক স্পর্শে একটি নেংটি ইঁদুর গর্তে লুকায়। ফের
উল্টে গেলে ছায়া—কয়েকটি গর্দভ গান তোলে মানুষের গলায়।
প্রত্যাবর্তনের আগে
প্রতিটি সঙ্গম শেষে শিশ্নের শিথিলতায়
মানুষের মনে অক্ষমতা জাগে ভ্রমে,
. ভয়ে কি বিষাদে,
. কি বিষণ্ণতায়
জমে যায় শরীরের কোষ!
. তেতো স্বাদ,
. ওষ্ঠের চুম্বনে নামে বিষ।
প্রতিবার সঙ্গম শেষে নারীর যুগল স্তন
সাপের ফণার মতো দুলে ওঠে।
আমি ও ঈশ্বর
আমার ভেতর বয়ে চলে কোনও এক নদী, কোনও স্রোত নেই
অপুষ্টির এই নদীটিতে, শ্যাওলা জমেছে প্রচুর। আত্মার
আবর্জনায় জমেছে নীল। প্রণয়ের নীলে বিদ্ধ হতে হতে
পলাতক যযাতি নীলের খুব গভীরেই ডুবেছে অরণ্যে।
আমার ভেতর বয়ে যাওয়া নদীতে কুলকুল শব্দ নেই,
জেলেদের চলাচল নেই, মাছ নেই, মাছরাঙা পাখিদের
সুতীক্ষ্ণ শিকার নেই। জেলে মাছ মাছরাঙা পাখির চোখের
আলোয় ঝলক নেই। প্রতিটি শিকারে নিজস্ব সংকেত থাকে,
শিকারির চোখের কম্পনে সময় মুহূর্তে মুহূর্তে ভাগ হয়।
আর আমি বুকের ভেতর এক মরা নদী নিয়ে বসে আছি।
এখানে শিকার কিম্বা শিকারির কোনও প্রতিদ্বন্দ্বীতা নেই।
আমি ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী নই অথচ ঈশ্বর খেলছেন এক
মনোহর খেলা। জন্ম মৃত্যু আর বিলাপ বিনাশ ভিন্ন ভিন্ন চালে
আমার বুকের স্রোতহীন নদী থেকে তুলে নিচ্ছেন চতুর ঈশ্বর।
আমার শীতকাল
আমার আত্মার ভেতর বাস করে একটি শীতকাল,
পাতাঝরা বিবর্ণ শীতকাল নয়, অপাপবিদ্ধ কিশোরীর
শরীরে সদ্য জেগে ওঠা অনিন্দ্য সৌরভের মতো
একটি শীতকাল বাস করে আমার আত্মার ভেতর।
আমার আত্মার ভেতর অসংখ্য মানুষের যাতায়াত,
তাদের অধিকাংশ মদ পানে নিমজ্জিত থেকে অকস্মাৎ
বসন্ত বসন্ত বলে চিৎকার করে নেমে যায় নর্দমায়।
শুধু একটি চন্দ্রমনি তার নরম চঞ্চুয় তুলে নেয়
. আমার শীতকাল।
ধানগীত
সূচনা
ও নাগর তুই কেন গেলি মরে, নিশুতি রাতের মধু
জমে আছে চাকে, উনুনে আমার চড়ে না হাঁড়ি।
কতিপয় গীতবাদ্য পলকে বাজিলে,
আমার শিশ্নে নাচে আমলকী হরিতকী।
বিস্তার
হিসেবের খাতায় ভীষণ কাটাকাটি,
কী যে ভ্রান্তি!
জোড়ে জোড়ে কোনও দিন মেলেনি বেজোড়…
ওগো মেয়ে শ্রাবন্তিনী,
তোর গতরের ওমে আমি মেলাব হিসেব।
বিলাপ
নীল তাপ জমে আছে শরীরের খাঁজে,
ওমের উত্তাপে আজ গলে যাক মোম-
নিশীথে এসো তুমি মধুফুল্লবনে,
নাগরের সব সুখ বিকাবো টাকায়।
বিনাশ
এই সব দৃশ্যচিত্র ধান-চালে মাপি,
ধানের চাতালে আজ শুয়ে থাকে পাখি।
রতিস্রোতে প্রবাহিত ধানের শরীরে,
প্রতিটি ধানই আজ হয়েছে পোয়াতি।
পরাবৃত্ত কথন
পরাবৃত্ত: এক
আধুলি সমান নীল চাঁদ লুটিয়ে পড়েছে আমার শরীরে, কী এক
আদিম উষ্ণতায় আমি মত্ত হয়েছি খেলায়, যেন বুনো নিঃশ্বাসে
বিনাশে ও ভালবাসায় খুন হচ্ছে জমাট রক্তের একখণ্ড বাদামি
আদম আর নীল ইভ।
পরাবৃত্ত: দুই
একটি নদীর গল্প বলতে বলতে আমরমা অন্য একটি নদীতে চলে
এলাম, একটি অপরিচিত নদী, অন্ধকারে জমে থাকা এই
নদীটিকে আমি কখনো দেখিনি, চমকে উঠে চোখাচোখি হলাম,
তোমার চোখ আমার ভীষণ অপরিচিত মনে হলো, তোমার
চোখে আমি একটি অচেনা নদী দেখতে পেলাম।
পরাবৃত্ত: তিন
অতঃপর যখন আমাদের চেতনা থেকে বিভক্ত হলাম—অন্ধকার
রাত্রির হাত ধরে হাঁটতে থাকা তিনটি শেয়াল ডিগবাজি খেতে
খেতে আমাদের সঙ্গী হলো আর আহ্লাদে শব্দ জমে গেল
পত্রপল্লহীন শূন্যে।
পরাবৃত্ত: চার
মৌনতার দীর্ঘ পথ একা একা হেঁটে যখন আমি এসে দাঁড়ালাম
কোলাহলে, দেখলাম একটি অক্ষর গ্রন্থিত বাক্যের শরীর থেকে
নিজেকে খুলে নিয়ে শব্দহীন চলে গেল দৃষ্টির আড়ালে।
পরাবৃত্ত: পাঁচ
একাকী নিষিদ্ধ জীবনের স্রোতে ভাসতে ভাসতে অবশেষে
বুঝলাম, জীবনে নিষিদ্ধ বলতে কিছুই নেই। তুমি যাকে নিষিদ্ধ
বলো কারও কারও কাছে তা-ই পুণ্য তীর্থ জল।
পরাবৃত্ত: ছয়
একটি পূর্ণগর্ভা রাত এবং তার অনিন্দিত মুহূর্তের সম্মিলিত
শিহরণ আর স্পর্শহীন উচ্চতা তোমাকে দিলাম। বিশ্বাসের
সমস্ত উজ্জ্বলতায় এই রাত কী পবিত্র সারল্যে কেমন ক্লান্তিহীন
উষ্ণতায় শুয়ে আছে জীরকের ওমের ভেতর!
যমজ
আমার রক্তের ভেতর অন্য এক রক্তের উত্তাপ!
. সঙ্গমে যেরকম উত্তাপ জাগে ঠিক
. সেরকম নয়;
কিংবা নিষ্কাম ভালোবাসাও নয়,
অন্য এক উত্তাপ জেগে আছে রক্তের আকরে।
আমরা হাসি-খেলি নগ্ন হই,
শরীরে শরীর জমে থাকে,
. প্রতিটি খাঁজের সঙ্গে খাঁজ,
মগ্ন চেতনার বিবরে জেগে ওঠা অন্য এক ভাবনার দ্বিভাঁজে
ডুবে যেতে যেতে হঠাৎ দেখলাম, আরে এতো আমারই জমজ!
পোড়ে নীল গ্রাম
স্টীল জঙ্গলে ক্রোমিয়াম ফুল নেবে ফাগুনের শ্বাস
মারকারি হ্রদে ডানা ঝাপটাবে অ্যালুমিনিয়াম হাঁস।
. —রূপঙ্কর সরকার
১.
এই সভ্যতা কবে থেকে শুরু…
আদি পিতা লিপ্ত সঙ্গমে।
ভাষা বলতে শুধু শীৎকার, উল্লাস
আমি সভ্যতার পাঠ খুঁজি আরশোলার গায়ে।
২.
সভ্যতার জল গড়ায় কুয়ো তলায়।
কুয়ো তলায় খুনসুটি, যুগল স্নান।
সভ্যতার উষ্ণতায় জাগি উদোম উত্তাপে।
৩.
গোর খুঁড়তে খুঁড়তে উঠে আসে সভ্যতা।
সভ্যতা অচল, অন্ধ ও বিনাশী।
চাতুরির ভেতর নিমগ্ন দীর্ঘকাল।
বাড়িটা
ওই যে উঠোন একা একা চলে যাচ্ছে,
তার পেছনে ফিরে যাচ্ছে রোদ্দুর।
কিন্তু সারিবদ্ধ গাছ, দরজা জানালা
কিম্বা খাটসমেত বাড়ি কোথাও যাচ্ছে না।
বাড়িটাকে মূলত একা ভাবা যায় না।
তবে বাড়িটার এপাশে আগুনমুখী,
ওপাশে কমলা সুন্দরী হাট।
অথচ বাড়ি জুড়ে এখন ক্রিয়াশীল
. উপবৃত্ত এবং শূন্যতা।
কফি সপে
আমরা মুখোমুখি কফি সপে।
আমরা আঙুলে ছুঁয়ে দেই,
আমরা ঠোঁটে ডুব দেই,
আহা, আমাদের ভালবাসা জ্যোতির্ময়!
আমরা ঈশ্বর।
তুমি ব্যাংক নোট গুঁজে রাখো রাজসিক।
আমি চুরুটে ধোঁয়া ছাড়ি রাজসিক।
আমরা বাতাসে ছুঁড়ে দেই কথা,
একটি ব্ল্যাক কফি একটি লাত্তে।
আমাদের ভালবাসা ঠোকাঠুকি,
আমরা মননে আলাদা।
আমরা আবেগতুঙ্গ,
আমরা মগজে আলাদা।
আহা, আমাদের ভালবাসা জ্যোতির্ময়!
চারিদিক কী নিশ্চুপ!
টেবিলে দুটি মগ….
একটিতে ব্ল্যাক কফি বাকিটা লাত্তে।
কবি পরিচিতি:
ত্রিশাখ জলদাস
এই পর্যন্ত প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ
জড়তুল্য পাথর
মোমঘর