সিঁদুরে ঝুলে আছে
জঙ্গল ছেড়ে উঠে আসে ড্রাগনফ্লাই, ঘাসের গন্ধে জট খোলে রাতের,
আমি বেদেনির ঠোঁট জুড়াই; কালো কুসুমের বন্দরে টোকাইর উৎপাত
আঁষ্টে গন্ধে জেলেনির বুকে মাছিদের শ্বাস; আমার চোখে ওরা তবে
মানুষও বটে!
কচুরিপানার তলে টাকিরা তড়পায়, জ্বরে কাতর রাতের নিঝুম বন্দর!
মধ্যে শুধু ঝুলে আছে ভাঙা এক সেতু—সিঁদুর-টুপির অন্ধ হৃদয়
মোমের কান্নায় সূর্যমুখীর দ্বীপে তখন মেঘের ছায়ার লাহান ঘুম নামে…
কী বীভৎস দৃশ্য! সিঁদুরে ঝুলে আছে হৃদয়, বিঁধে আছে টুপির কাঁটাতারে
এক টুকরো হাসি, প্রেমের শাশ্বত মঞ্জুরি…
কী বীভৎস দৃশ্য! তোমার হৃদয় ঝুলে আছে সিঁদুরে, আমার হৃদয় মিনারে!
গুহার শুঁড়
নুয়ে থাকা পাহাড়: এক আশৈশব নতকারক: জুড়ে আছে, জোড়াতে থাকে—নিরন্তর…
সফলতা: এক লম্বা গল্পের বাহক: আরোহণের শেষ নাম: ক্লান্তির ক্লাইমেক্স—নিম্নগামী…
শিখরমুখী কনভয়: ভয় বাড়াতে বাড়াতে পিষে ওঠা এক ক্যাবিনেট…পোষা ঘাস
জেগে ওঠে সব শোধরাতে—স্বাধীনতা এভাবেই ফিরে আসে আয়ুর এই বন্দরে!
অপসৃত মুখ: কত শত অনুগামীর প্ররোচক…প্রদোষে ভিড় করে কত মসৃণ-অমসৃণ…
কচি ঘাসের ফাঁকেও তারাফুল অপসৃত…কখনো কখনো হারানো কিছু মুখ ফোটে
সাদা সাদা রঙে, যেমন ফুটে ওঠে অরণ্যের মাঝে হঠাৎ কিছু দূর নক্ষত্র, তখন দেখি—
কী বিপুল অরণ্যসৌকর্য মেলে দিচ্ছে সাদা বকের জৈবনিক পালক ও রহমের লরি…
ধার: এ এক এমন সম্পর্করজ্জু—সেলাইমেশিন—সেলাই করে মানুষ-মানুষ সম্পর্ক…
পরম শক্তির মাঠে ঝুলে আছে এই সব সম্পর্ক একমুখী-অধমুখী বিপুল-অতুল ঋণে…
এ ঋণ থেকেই শুরু আমাদের আদিম যোগাযোগ, যতসব প্রেমের খেলা—ঘূর্ণমান…
জীবন: আদৌ কি গোছানোর মতো কিছু? এর আছে সম্পাদন অযোগ্য অতীত, আছে
অসম্পাদিত ভবিষ্যৎ…আর প্রবহমানতা—এক বিষম বুভুক্ষু—ক্ষুধা নিবারণে ছোটা প্রাণ…
আসলে এমন অগোছালো থেকেই ফিরে ফিরে আসে শক্তির ভারসাম্য—বিপুল জিরাফ…
ভাঙন: এ থেকেই অগোছালোর শুরু, পৃথিবীর অনিবার্য মহৎ কর্ম—এ থেকেই আসে
আবির্ভাব, জীবন, সৃজন, বনসৌকর্য, শান্তি ও বিলাপ, রাশি রাশি জিরাফ ও লাল ঘ্রাণ…
এ সমস্তই মাঙ্গলিক—ভাঙন এদেরও জনক…
ব্যথা: জীব সম্প্রদায়ের জন্য এ এক রহম—এর মধ্য দিয়েই মহৎ সৃষ্টি বেড়িয়ে আসে
আসে কত আগন্তুক, অপরিচিতের মুখ, বেরিয়ে পড়ে সমস্ত গুপ্ত খনি—গুহার শুঁড়…
পতিতালয়: আসলে এ এক নার্সিং হোম—এখানে কারও কারও আসতেই হয় নবারুণরাতে
বাঘ সিংহ… জিরাফও আসে এই সব হোমে কিংবা নিজস্ব রথে, থাকে কারও নিজস্ব মথ…
নাভিটলা
তোর জন্যই আমি সোনার কলমে ভরে
অষ্টগন্ধের কালি
শুল্কপক্ষের সপ্তমী তিথিতে
তন্ত্রবিধির যন্ত্র লিখি!
আমি তো কালা ফকির, কালীপেতনি আমার দোস্তি…
গঙ্গিমার নামে দেব ভোগ, ঝাড়-ফুঁ, সারবে তোর
নাভিটলা—এ তুই বিশ্বাস কর, নদমালা
রোগে শীর্ণ তোর পবিত্র বুরুজের চিৎকার
বৃন্দাবনে আমার ঝড়ো মেঘের মাতম তোলে
শোঁ শোঁ থই থই…
শোঁ শোঁ থই থই…
মাঝে মাঝে রক্তের আজান কিংবা মেরাজগমন
গৈরিক লতার ঝিনুকে ঝরনায় ঊর্ধ্বগামী আধান—
মাঝির নীরক্ত বৈঠায় সূর্য গলে আরক্ত মাস্তুল…
সমুদ্রের নাচঘরে ফোটে—
বহু মঞ্জুরির
ক্ল্যাসিক—সুন্দর শরৎ কিংবা হাওয়ার বাঁশি…
দেবীর শ্রোণিজুড়ে সমুদ্রের ঝড়, তিমির ভাসা-ডোবা…
এমনকি আড়মোড়া ভেঙে সিংহ জাগে
টবের আরক্ত কুসুম, গানের পাখি…
ত্রাটক সাধনায় সন্ন্যাসঘুমে রক্তপাতায় ঢেউ ফুটাই…
মেঘ ডাকে, ঘেমে যায় আকাশ, হতাশ কিশোরীর
মুখের আবহাওয়া নিয়ে আত্মহত্যার নিঝুম নামে…
প্রাণের বায়ু বের হওয়ার মতোই শেষ ঝাঁকুনি দিয়ে
লুটিয়ে পড়ে লতার গান, যেন কোথাও কেউ নেই!
যেন দূরে ঢিপঢিপ করছে নিঝুম সন্ধ্যার হিমরাগ…
তখন বিধবার বুকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ার ভঙ্গি নিয়ে
বিদ্যুতায়িত মক্ষিমার চোখে নামে নাবিকের ক্লান্তি…
অবশেষে—
মেরাজফেরত লতা ঘুমায় বেঘোরে যেন শ্রান্ত এক নদী—
যেন এলিয়ে পড়া বিকেলে নির্জন সবুজের মেঠোপথ—
গাইনি
ঝুপড়ি থেকেও কখনো এমন আলো আসে,
খোদ কালো মুখের সিংহাসনও ঝলমল করে
হেসে ওঠে, বেজে ওঠে সংস্কারের বিউগল…
এই সব দ্বেষণ পেরিয়ে একদিন তারা খোঁজে
অরণ্যমর্মের স্বাদ, ভানহীন বিপুল সরল মুখ…
দুধালোর হাত ধরে একদিন ঠিক নেমে আসে
কালো পাথরের শোভায় নির্জন করিডরে,
গাইনি তখন চিৎকারের রাজসাক্ষী ও মালি…
সুন্দরে ঠিকরানোর পর জারিত সব বিষবাণ,
ক্ষীণ প্রবাহ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে
বিপুল সম্ভাবনা মেখে তুমুল জোয়ারের বান…
…আর নত হয়ে যায় উৎপাদের শস্যখেত,
আরোগ্যের রহমময় গাইনির সমস্ত বিভাময়ূর…
বয়রা তুফান
ম্লান লুব্ধক! আছলায় ধরা জাতিরে মাদুলি পরায় প্রজ্ঞাবান মন্ত্রক! তেজি ফকির।
কুয়াশায় ধোঁকানীড়। সূর্যরেণুর ফাঁসি। গণ্ডারের মাথায় রাজমুকুট। প্রেতের হাসি।
সিংহাসন অধিষ্ঠিত বয়রা তুফান।
খোলস ছেড়ে এ শীতেই এসো, মায়ারানি। চলো, সাপশীতলতায় ঘুমাই তুমি আর আমি
আরাম আর আয়েশে। রাতের পিনিক লেগে থাক চোখে আর ঠোঁটে। কহরগুচ্ছে
ভরে থাক—শিয়রদেশ। মরণঘুমে লও আমরাও হই মাতাল—বয়রা তুফান!
মিডনাইট রিয়ালিজম
প্রাপ্ত বয়স্ক মীন ও নদীরা মূলত দ্বিভাষী টিয়াপাখি…
তারা জানে—রাতভাষা ও দিনভাষা…তারা জানে—
কীভাবে বাজাতে হয় তর্জমাতীত সুগোল প্রেমের
ভোকাল অ্যান্ড পেয়ার মিউজিক…তারা জানে—কীভাবে
বাজাতে হয় মধ্যরাতের পিয়ানো, সুরের লহর
দ্বৈরথ হারমোনিয়াম, জানে, কীভাবে গলে মোম ও মিড়…
কীভাবে ভেসে ওঠে নদীর কান্নার রোল, দুধের সর…!
কেউ কেউ এদিকেই ছুড়ে দেয় যত সব শৈলীবিজ্ঞান
বর্তুল ভাষা—তন্দ্রাগামী মোজাইককণ্ঠ—বিপুল আজান
আর চতুর্দিক—মিডনাইট রিয়ালিজম অ্যান্ড স্লিম ক্লিক…
আঙিনায় ঝুলছে পায়রার প্রাতঃস্নান
পাখির সিনার জীবন কুয়াশার পথে পথে কুঁজো লতা…ভাগ্য—লটকে থাকা
ওজন লেয়ারের এক কয়েদি। শীত—যেন উলের ওমের উৎস…আর ওপারে
পল্লবীর আগুনেও তাই পরিযায়ী ডানায় হিম নামে কোনো এক অঝোর সন্ধ্যায়…
হাসি ও খাওয়ার ফাঁকে যেসব দাঁত বেরিয়ে আসে, মূলত কাঁটার গোত্র তারা…
আমাদের নয়। চারপাশে এই যে এত মুসিবত—ঢলে যাওয়া কারও না কারও
হাত ফসকানো ফল…বেকসুর খালাস—অপ্রাপ্ত ছোট্ট মেয়ে রিয়াকেও কাঁদায়…
যে ট্রানজিট পেয়ে প্রতিবেশীর একপেশে হাসি ফোটে, মিত্রত্ব বাড়ে; সে ট্রানজিট—
একমুখী স্বার্থবাহক রথ; তুমি—পড়ে থাকা এক অসহায় ধুলা। প্রতিবেশী উদার!
ফ্রি ফ্রি পানিতে মোটা দামে ভাত বেচে! আমরা বুকে বুক মিলাই, কাঁটা দেখি না…!
ব্যাচেলরের যাপনে একদিন ঠিক ছুটে আসে এক বিন্যাসকেশরীর আলতাছাপ
কী বিপুল সমারোহে! আর ক্লিনশেভ মৌনতায় মাখে ভান… মাঝেমধ্যে দেখি,
কমিটমেন্টের সম্পর্ক—যেন ঝুলে থাকা একেকটি ফনা, নেই যার কোনো গান…!
উঠানের ধারে তুলসিগাছ—পূজারির আশি^র্বাদপুষ্ট কপালবান; বৌদি, আমিও
হতে চেয়েছিলাম এমন কপালি, হতে চেয়েছিলাম এমন সব তুলসিগাছের গোত্র!
জানি, নারীর ভালোবাসা—অদ্ভুত এক মিড়—অঝোরধারার কোনো সন্ধ্যারাগ!
জিরাফের চোখে—সমাজ: মূলত এক ধর্ষক, পেটে চর জাগা তরুণীর আত্মফাঁস…
আর ন্যাশনালিজম—মূলত এক অবদমক—ফালি ফালি কেটেছে উটের ডিম,
টেনেছে প্রাচীর—মানুষের এক ইচ্ছাদাহক—কাক্সক্ষা মাড়ানো দুই প্রস্থ মাস্তান…
আঙিনায় ঝুলছে তুমি—পবিত্র প্রাতঃস্নান—শহীদ ঊনমানুষের অ্যাভিডেন্স—
ভোর হলেই রোজ কেউ দেখে জিরাফের চোখে কোনো অবদমিত পুরুষের মুখ!
পুরুষের যাত্রা আসমুদ্র, ওখানে বিড়ালের চোখের লাহান জ্বলজ্বল করে শিশির…
পাখিশিকার দেখে জিরাফ ভাবে—তাহলে বাঘ-সিংহের বাইরেও বাঘ-সিংহ আছে!
আয়ুর পিঠে শত্রুপালের আনাগোনা, তবু আয়ু আয়ুর জন্য মহব্বত ছড়ায় এখানে…
দাঁড়িয়ে ঘুমাতে হয়, তবু জোড়া পারিজাতের মাঝবরাবর চিত্রল প্রেম—রেণুবান…