রাজনৈতিক
সব দিকেই সে।
কেউ কি জেনেছ—
কোন দিকে তাকে পেলে
বোধগম্য হবে গান,
আর জনতার অভিমান?
শুভঙ্কর
শাসক ও শোষিতের ঠিক মধ্যখানে
যে-ফাঁকা, যে-ফাঁদ,
সেইখানে বাঁকা হয়ে আছে রোদ।
সেইখানে বাস করে শুভঙ্কর—
গন্ডমূর্খ, সাদাসিধে, আর তুলনাবিহীন।
হরতাল
ককটেল ফাটে—
এই শব্দ গিলে খায় দোয়েলের শিস্।
রাস্তায় টায়ার পোড়ে—
এই ধোঁয়া ছেয়ে ফেলে সুনীল আকাশ।
ছর্রা গুলি
মাতৃগর্ভের নির্জনতাকেও খুন করে।
আমার শহরে আমি আগন্তুক, মাগো!
কার কাছে যাবো!
ঢেঁকুর
ডাইনির তৃপ্তির ঢেঁকুর এসে বিদ্ধ করল আমায়।
আমি ছোট, ছায়াচ্ছন্ন, চুমু খেয়ে প্রাতঃরাশ সারি,
আমি অস্পষ্ট-পিঙ্গল, অনেকটা বিয়োগান্ত—
আমি তুলতুলে,
বর্ণ, স্পর্শ, গন্ধ আমি অধিকাংশ জনতার।
তথাপি ঐ ডাইনি ডেকেছে
ঢেঁকুর তুলবে বলে, আজও।
যে ফুল ফুটতে ভুলে গেছে
যে ফুল ফুটতে ভুলে গেছে
আমি সেই ফুলের পাগল,
ফেসে গেছি লতাগুল্মজালে
আর জনসমুদ্রের দীর্ঘশ্বাসে।
কোন বনে ফুটেছে তমাল
জানা নাই, কোন বনে জুই
চামেলী গোলাপ প্রস্ফুটিত
হবে, তাও জানা নাই, শুধু,
জনমনের আগুন দিয়ে
গেয়ো মাঠে ফানুস উড়াই।
যে ফুল ফুটতে ভুলে গেছে,
সে কুঁকড়ে গেছে অভিমানে
আর অপমানে, ঠিক যেন
জনতার চাপা ক্ষোভ, প্রভু,
লাজে, ভয়ে, ফুটে না কখনও।
অনাগত
ডাকিনীর জিভ থেকে ফিরে আসা যুবা ভাবে—
হৃদযন্ত্র হস্তান্তরযোগ্য, ভালোবাসা নহে।
জল তার আপন স্বভাবে, ভিজতে ভিজতে আর
ভেজাতে ভেজাতে, নিজেই শুকিয়ে যায়।
জল হস্তান্তরযোগ্য, কলধ্বনি নহে।
নিজ রক্ত বেঁচে জমকালো সন্ধ্যা কিনে দেয়া যায়
সন্ধ্যা-রাগিনীর তাতে কোন ক্ষতি নেই।
হে মনুষ্যমণ্ডলী, জন্মলগ্নের অস্থির জলপিণ্ডে
ভাসছে শিশুরা, দেশে-দেশে,
তাদের চোখের অনাগত স্বপ্নগুলোও
হস্তান্তরযোগ্য নহে।
নদী এক জন্মান্ধ আয়না
কার পথে গোধূলি ভাসিয়ে তুমি সূর্যাস্ত দেখেছ?
সে তো এক জন্মান্ধ আয়না।
প্রেম নেই, প্রহেলিকা নেই,
অনুভবে আছে শুধু অনঙ্গ-বাসনা।
তবু তারই রক্তে গোধূলি ভাসিয়ে,
প্রত্যাগমণের কোন পথ কেন খোলা রাখোনি হে?
কবরের তল দিয়ে বয়ে যায় নদী।
লোকালয় দিয়ে কত বয়ে গেছে নদী।
প্রতিবেশী দেশ থেকে ধাওয়া করে নদী।
অর্থহীন পায়ে পায়ে মরুভূমি জাগে, তৃষ্ণার্ত হোসেন হায়!
কার জলে গোধূলি ভাসিয়ে তুমি সূর্যাস্ত দেখেছ?
নদীও কূটনীতি জানে,
কথা দিয়ে কোনদিনও জল সে দেয় না,
কোনদিনও সমুদ্রে মেশে না,
তৃষ্ণার্ত হোসেন হায়! নদী এক জন্মান্ধ আয়না।
গণতান্ত্রিক
ধরো আমি ইঁদুর
আর তুমি উদ্ধত বিড়াল
ধরো তুমি আমাকে ধরতে চাইছ
আমি লুকিয়ে আছি পালঙ্কের আড়ালে
বাগে পেয়েও আমাকে ধরছ না তুমি
এরকম খেলতে খেলতে ক্লান্ত হয়ে
একসময় আমার ওপর আছড়ে পড়লে তুমি
ধরো তোমার থাবায় আমার কপাল চিরে রক্ত বেরুল
এপর্যায়ে আরেকটি বিড়াল এল, আরও উদ্ধত,
তবে সে তোমার বিরুদ্ধে—
আমারই পক্ষে মাঠে নামল সে,
আমার দুঃখে দুঃখিত হল, আমার কান্নায় তার চোখজোড়াও ভিজে এল
একদিন তোমাকে হটিয়ে সে আমার বন্ধু হল
ধরো তারপর একদিন খেলাচ্ছলে সেও হামলে পড়ল আমার ওপর
ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল আমার নাড়িভূঁড়ি
তখন তুমি এসে আমাকে অশ্রুজলে সমাধীস্ত করলে
অতঃপর, ধরো, আমার শোণিতের ধারা সমুদ্রে গড়ালো
আর সমুদ্রের নীল জলে ফুটে উঠল এক রক্তিম গোধূলি
ধরো, তোমরা দু’জনে একসঙ্গে উপভোগ করছ সে-গোধূলি।