অপ্রেম
০১
তোমাকে পরিষ্কার সাবান ভেবে
ঘষে ঘষে কয়লা হই রোজ!
০২
নদীর পবিত্র জলে নেমে দেখি—
ময়লার প্রলেপে হৃদয় নিখোঁজ।
সুরিয়া
সুরিয়া, পর্তুগাল প্রেমিক তোমার সাগরে নেমে বালু উত্তোলন করছে কোন দুঃসাহসে?
ভিখারির অন্ধবিদ্যালয় মাঠে শুরুর ঘন্টা বাজছে গত কয়েকশতাব্দী;
সুবহে তসবিহ হাতে জপি নিরিবিলি
পান করে তৃষ্ণা মিটবে।
বালুব্রিজ বানিয়ে গোধূলিলগ্নে ধ্যান ভেঙে-
করাতকলে অন্ধকার কেটে কেটে তোমার ডান হাতের কনিষ্ঠা আঙুলস্পর্শ করলে পৃথিবী খুশি হয়ে অভিনন্দন জানাবে।
বাঙালি প্রেমিক আমি তোমার গভীরে নেমে ভাষাজ্ঞান আয়ত্ত করছি। আঁতুড়ঘরে মাছেরা সাঁতার কেটে পৃথিবীকে জানিয়েছে, আমিও মাছবংশের লোক।
তুমি ফিরে এসো আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে বঙ্গোপসাগরে; বাংলাদেশে। তোমার বোন গুলবদন এখানে রাজরানি। যার মুখমণ্ডলে তাকালে বিশ্বসুন্দর দেখার কথা ভুলে যাই! আর পর্তুগিজরা একদা ভ্রমণ বাণিজ্যের নামে উপমহাদেশের ভূ-গোল হতে কেড়ে নিয়েছিল তোমাকে।
এখন এখানে পাখিরা মুক্তমনে আকাশে ওড়ে; শিশুরা নিরাপদে মাতৃস্তনে মুখ রাখে; যুবক-যুবতী শততম প্রেমের পরেও নতুন প্রেমের প্রস্তুতি নেয়।
বহুরূপী সুরিয়া প্রবল প্রেমের বাগানে হারানো ঢেউ!
আনন্দ বণ্টন খেলে সঙ্গী-সাথীরা একমনে হৃদয়ে ঢেউ তুলে বর্ষা আনে শক্ত মাটিতে।
যদি তুমি ফিরে না আসো হারানো বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করব।
সুরিয়া, তোমাকে অন্ধের মতো পান করে জড়িয়ে ঘুমাব আগামী কয়েক শতাব্দী।
কবির কফিনে মোড়ানো বাংলাদেশ
গতকাল গুলবদনের সাথে শুয়োরের মাংস দিয়ে যখন রুটি খাচ্ছিলাম
সূর্যের আলো আমাকে তুড়ি মেরে—
আগুনে না পোড়া মহামানুষের নাম
তীক্ষ্ম ছুরিতে বেঁচে থাকা অন্যজন
স্রোতস্বিনী নদীতে ডুবতে থাকা স্মৃতি
মাছের পেটে ইউনূছের সাথে আঞ্জাম
মায়ের কোলে ঘুমানো শিশুর তাড়া খাওয়া মাছের জীবন।
শুয়োর আমদানি হয় গরুর বদলে; ছাগলের বদলে শিয়াল
দুটোই অপছন্দ আমার প্রিয়তমার।
আজ শহীদ মিনারে আনা হবে কবি শহীদ কাদরীর লাশবাহী কফিন
শাদা মার্কিন কাপড়ে চকোলেটের মতো মোড়ানো;
কফিনখুলে দেখলাম মরে আছে বাংলাদেশ
অঘোরে ঘুমাচ্ছি আমরা।
কফিনে সংসারের দায়িত্বশীল বাবা
পাঞ্জাবি ও পায়জামা পরিহিত শুভ্র সুন্দর দস্তানায় ইস্ররাফিলের বাঁশি হাতে
তাড়া দিচ্ছেন আমাকে—বেঘোরে ঘুমোতে।
স্মরণিকার সামনে দাঁড়িয়ে মৃত সব কবি আত্মা
ছিপি খুলে আতরের সুগন্ধ ডান হাতের কব্জি ও নাকে
মুগ্ধতায় মিছিলের অগ্রভাগে মৌন মিছিল— ৪৭ ও ৫২ সাল
আমার দিকে আজরাইল ৭১’র মতো এগিয়ে আসছে—
সামান্য উবু হয়ে নিসর্গের মতো ছায়া বিলিয়ে যাচ্ছি
শোকের কাতারে; সহকর্মী ও কবি বন্ধুদের জিজ্ঞাসুক চোখ
লাশ আনা হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জামে মসজিদে
এমন সুযোগে কবি কাজী নজরুল ইসলাম আর জয়নুল আবেদিন
ফুলের মালায় প্রথম অভিনন্দন জানায়,
আলসেমি রেখে পটুয়া কামরুল জানাজার ইমামতিতে দাঁড়ায়
লাল সবুজের টুপি মাথায়। হায়! এখানেও সাইফুদ্দিন নেই।
পটুয়ার টুপি বর্গা হয়ে গেছে, আমরা খুঁজে হয়রান।
কোথায় পাব দিজেন্দ্রলাল? শেষতক টুপি না পেয়ে
কফিনবন্দি বাংলাদেশকে মাথায় নিয়ে আমরা হাঁটতে থাকলাম
মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের দিকে।