মৃত্যুর দিন সব কিছু থাকবে স্থির
অলৌকিক সকাল ঘাসফুলের শিশিরে ডুবে মরে ঘাসফড়িং; আহত কথা বলা কবুতর—ছিন্নভিন্ন মাথার মগজ। খোদার কসম আমার ভাই আসবে না শোকের কাতারে; শিয়াল শকুনের মিছিলে; সকাল কিবা বিকালে। যারা ধর্ম মেনে ধ্বংস খেলে নিরুপায় অধিকার; গোয়ালের মুতে প্রতারিত রাজ্যের শান্ত সন্তান।
সান্ত্বনা আমার পোষা মুরগির নাম। তাকিয়ে আছি কখন ডিম দেবে? বাচ্চা ফুটবে। বেরিয়ে আসবে প্রজন্মের গাছ। এরপর নিজের গায়ে ঠোকর দিয়ে গা চুলকানি কমাব। আমার ভাই উঁচু তলা ভবনের বারান্দা থেকে কয়েক মুঠো চাল ছুড়ে মারবে কপালের দিকে। আরেকদিন, দীপনের মতোই জবাই করে রক্ত মিশিয়ে মাংস খাবে আমার।
কুয়াশার প্রতিষ্ঠান
তুমি আবার এলে বামহাতের তালুতে গোলাপচারা রোপণ করব
সীমান্ত আকাশে নকশিকাঁথা ছায়ায় বিছিয়ে—
অন্ধকার আড্ডায়; তোমাদের ঘুমরাতে জেগে থাকব
পাখির কণ্ঠ হতে গান শুনিয়ে আরব্য রাতের গল্প বুনব
মাথায় সিঁথি কেটে;
ছড়িয়ে ছাপিয়ে রাতের নির্জীব পাতারা
সকালের কুয়াশায় অনন্তকাল ভিজতে থাকব।
প্রজাপতিফুল দাদার চাদর মুড়িয়ে জিইয়ে রাখব মায়ের ধানভর্তি মটকায়;
ভাপাপিঠার লু হাওয়ায়
মাঝে মাঝে হৃদয়ফুল পুড়ে ধোঁয়া উড়বে আকাশে বাতাসে—
ভরা বর্ষার রাতে আমার বুক বাষ্প হয়ে…
নিরানন্দের বাগ্-বিতণ্ডা মহাঝড়ের রাতে উড়িয়ে
আতশবাজির ভাঁজে লুকিয়ে থাকব তুমি আবার এলে আনন্দে ফুটব;
গাছ হতে ঝরাপাতা পড়ে যাব
অথবা পৃথিবী সমান বয়স পাব নদী প্রজাপতি ও নারীর স্পর্শে।
নৈঃশব্দ্য
কথা ফেলার ডাস্টবিন নেই কোথাও। যেখানেই থুথু ফেলি সেখানেই মক্কা মদিনা। পীর-মাশায়েখ মানুষ। অথচ পর্দা খোলার পর দেখি কেবলামুখী শয়তান। আমি শয়তানের আড়তে কাঁচামাল। প্রতিদিন বিক্রি হই কম দামে বাতুল সময়ে।
শ্রম ও শ্রমিকেরা এখনও ঘুমায় নিঃশব্দে।
মুখ
প্রিয়তমা রজঃস্বলা, তোমার রক্ত সময়ের বুক থেকে ঝরছে। অসহ্য যোনি যন্ত্রণায় কমে গেছে সোনালির সহ্য শক্তি। বিশ্রামের বিশ্বাস ডান কাত বাম কাত স্বজন। তরবারি হারিয়ে উলঙ্গ মাতৃগ্রাম। হাজার বছর মায়ের দুধ ও দমে বাড়ে হারামজাদা সন্তান।
নারীর মাসিক জিহ্বায় চাটে পাতিকুত্তার দল। আমি কুত্তাদের দেখেছি অলিগলির ফাঁকে দুর্গন্ধময় খাবার খেয়ে প্রচারণা চালাতে। আমাকে বলতে হচ্ছে অসুন্দর সন্ধানী কথামালা। মাসিক বন্ধ হওয়া বন্ধ্যা নারীর সন্তান। ফুল ও ফসলের আপনজন। কৃষকের ভাই। রক্ত ঝরতে ঝরতে মাতৃগ্রামের বুক এখন মরুভূমি। লাল সবুজে মোড়ানো মুখ আমার মায়ের; আমার বাংলাদেশের।
খ্যাতি
বিখ্যাত’র বিভ্রান্ত বগলে তুমি লোমগাছ হও;
বিহঙ্গ আদলে আকাশপথ পাড়িয়ে
মুক্তিমন্ত্র শোনাব ভদ্রবাড়ির ডালে;
একালে—আগামী সকালে।
শিশুমেলা স্কুল ও অচেনা অসুখ
উৎসর্গ: শিশুমেলা স্কুলের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে
অ-নে-ক দিন পর শিশুমেলা স্কুল স্বপ্নে দেখি। বাচ্চারা একজন আরেকজনকে ধাক্কা দিচ্ছে বেঞ্চে পেন্সিল দিয়ে আলপথ আঁকছে। কাসের দুষ্টু বালক বর্ডারে দাঁড়িয়ে দুই দেশ দেখছে ছাত্র-ছাত্রীরা চিৎকার চেঁচামেচি করছে—চকলেট খেতে দিতে হবে। আজ কাসের সব বিষয়ের পড়া পারি—বাচ্চাদের শব্দ ম্যাডামের কান ঝালাপালা করছে।
রাশভারি আমি গেইটের ডানপাশের কাসঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছি—লিজা, শাহনাজ স্বামীর সংসারে। আনিছ, ইব্রাহিম দূরের বাজারে ব্যক্তিগত ব্যবসায়। নতুন শিকের আনাগোনা—তাঁরা কেউ আমাকে চিনতে পারছে না লজ্জায় আড়ষ্ট কুমারী জড়সড়ভাব। আমি স্কুলের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি। একজন ম্যাডাম জানতে চায়, কাকে চাই? কোন বাচ্চার অভিভাবক? আমি ম্রিয়সুরে বললাম, আপনাদের সবার। পিয়ন জানায়, স্কুল চলাকালীন সময়ে বহিরাগত প্রবেশ নিষেধ। অপ্রতিবাদী আমি নবাগত শ্রেণির কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীর দিকে হাসিমুখে তাকালাম।
শ্রেণিকক্ষে বাচ্চাদের গতকালের পড়া আদায় করতে পারছে না নবাগত শিক্ষিকা। বাচ্চাদের পিটানো হয়—সিলিং ফ্যানের নিচে কেউ কেউ খুব ঘামছে; বহিরাগত আমি মুখ খুলতে পারছি না। একটি বাচ্চা মেয়ে দাঁড়িয়ে ম্যাডামের কাছে প্রশ্ন রাখে—আপনি জানেন শিশুমেলা স্কুলের সভাপতির নাম? ম্যাডাম ভুলনাম উচ্চারণ করলে আঘাতপ্রাপ্ত বাচ্চারা হে হে হি হি শব্দে হাসতে থাকে।
পূর্ণযাত্রার দিন লণ্ঠন হাতে দুয়ারে দুয়ারে স্কুলের খোরাক জোগাতে দৌড়িয়েছি দিনের আহার নিদ্রা ভুলে। বন্ধুরা পরীক্ষার (ব্যক্তিগত) অজুহাত দেখিয়ে গাধা ভেবে ফাঁকিবাজি করেছে রোজ। যৌবন ধরতে গেলে বন-বনাজি সেবা নিয়ে বহুদূর হাঁটতে হয়। ক্ষয়রোগে ক্ষত পরিচালনা ও শিশুমেলা কোলে নিয়ে ডাক্তার বাবুর চেম্বারের দিকে দৌড়ালাম।
ডাক্তার, অচেনা বেয়াদব অসুখ চশমা পরে থাকে; অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে তাকে সারাতে হবে; রাষ্ট্রের কোথাও যেন পচন পতন না ধরে।