জঙ্গলায়ন
দ্যাখো—এক থাবার নগ্ন সাফল্যে উজ্জীবিত আরও
এক থাবা; উভয় ক্ষেত্রেই থাবাগুলো সংখ্যাগরিষ্ঠতার
আর তাদের আঘাতে স্বভূমে সমুলে উৎপাটিত
বাতাসের সঙ্গীত শুনে বেড়ে ওঠা দুই ভূগোলের
সংখ্যালঘু বৃক্ষরাজি যারা দিয়ে এসেছে ফল ও ছায়া,
শোভা ও অম্লজান, দিনের পর দিন, যুগের পর যুগ।
কী দোষ তাদের? হায়, তাদের পূর্ব-প্রজন্ম নাকি পড়শী
ভূগোলের আমবাগান ছিল অপ্রমাণিত কোনো এককালে!
অতএব তাদের শান্ত শাখায় থাবা, সমূহ শেকড়ে দাঁত!
মানুষ নেকড়ে হলে বৃহত্তম গণতন্ত্রও জঙ্গল হয়ে ওঠে।
চুমু
চুম খাও—চুমু খাও!
চুমু খাও হাতে—চুমু খাও গালে
চুমু খাও উত্তেজনায়
চুমু খাও আবেশে
চুমু একটি ফার্স্ট গিয়ারের নাম
চুমু খাও—
অতপর দুরন্ত ছুটে চলা
জেনে বা না জেনে গন্তব্যের নাম;
চুমু খাও চুমু খাও
চুমু খাও বুকে—চুমু খাও স্তনে
চুমুর লালায় মিশে আছে
সমুদ্রের স্বাদ
চুমুর গায়ে লেখা আছে
মোহনার স্রোতেলা ঠিকানা
ঘনজলের বর্ণমালায়;
চুমু একটি দুরন্ত নদী
যা আনন্দ সাগরে গিয়ে
হারিয়ে ফেলে অস্তিত্ব
অতপর মেঘের পাখায় ভর করে
পুনরায় বৃষ্টি
পুনরায় নদী হয়ে বয়ে যাওয়া;
চুমু খাও—চুমু খাও
চুমু খাও নাভিতে—চুমু খাও নিতম্বে
চুমু একটি নিবন্ধন নম্বর
অতপর—
অটো-ইস্টব্লিশমেন্ট অব এভরিথিং
আর হরমৌসুম
ভালোবাসার কারখানায়
উৎপন্ন ভালোবাসা-লাল নীল শাদা;
চুমু খাও চুমু খাও
চুমু খাও কানে—চুমু খাও জিহ্বায়
চুমু একটি অব্যর্থ এসএমএস
যা তোমাকে ডেকে নবে
প্রণয়ের মধুর ক্যান্টিনে
তৃপ্তির ধোঁয়া মেখে ঠোঁটে
তুমি হেঁটে যাবে
হাতে হাত—সুরের বকুলতলায়;
চুমু খাও—চুমু খাও
চুমু খেতে না পারো যদি,
সাফল্যের চূড়োয় পৌঁছাবে না
রান করে যাবে
অথচ পাবে না মেডেন সেঞ্চুরি;
চুম খেতে না পারলে
অনেক কিছু করেও তুমি
অ্যাবসেন্ট রয়ে যাবে ইতিহাসে
দেখবে নাকো প্রথম বিজয় দিবস
যা কুমারী রাতের আড়াল ভেঙে
বেরিয়ে আসে ঠোঁটে নিয়ে
সুবেহ-সাদেকের হাসি
আর মাথায় বেঁধে লালরঙের সূর্য;
চুমু খাও—চুমু খাও
চুম খাও আড়ালে চুমু খাও প্রকাশ্যে
চুমু একটি স্বর্গীয় মদের নাম
যা খেয়ে তুমি হারিয়ে ফেলবে
ভারত-পাকিস্তান জ্ঞান
অতপর আদম-ইভের মতো
জেগে উঠে দেখবে
শুয়ে আছো প্রস্ফুটিত গন্দম বাগানে
তোমার চারপাশের বাতাসে
উপচে উঠছে তৃপ্তির ঢেঁকুর;
চুম খাও—চুমু খাও
চুমু খাও সকালে—চুমু খাও সন্ধ্যায়
চুমু একটি রোমান্টিক সুইচের নাম
যেখানে টিপ দিলে
খুলে যাবে
ভালোবাসার হাজারদুয়ারী মহল
তুমি হেঁটে যাবে এ ঘর থেকে ও ঘর
আহ্নিকগতির মুখে বাধ দিয়ে
দাঁড়িয়ে থাকবে অনুগত দিন;
চুমু খাও—চুমু খাও
চুম দাও কপালে—চুমু দাও চোখের পাতায়
চুমু একটি উচ্চারণের নাম
যা তোমাকে রাতারাতি বানিয়ে দেবে
স্বাধীনতার ঘোষক
প্রতিটি মহামিলনে
তোমাকে অভিবাদন জানাবে
ভালোবাসার সেনাবাহিনী
অনুরাগের ভিভিআইপি উপস্থিতি;
চুমু খাও—চুমু খাও
চুম খাও অনুরাগে—চুম খাও আসক্তিতে
চুমু একটি স্বর্ণশপথপাঠ
যা তোমাকে বসিয়ে দেবে
ভালোবাসার বঙ্গভবনে
তোমার আসন ঘিরে
কুর্নিশ জানাবে কিউপিডের
অমাত্যবর্গ-ইউনিফর্মে সুসজ্জিত কর্মচারীগণ।
চুম খাও—চুমু খাও!
চুমু দাও অধরে—চুমু দাও হৃদয়ে
চুমু খাও প্রেমে—চুমু খাও প্রার্থনায়।
একাকী, অবরণ্যে
দোহাই তোমার ভুলিনিকো নীলুফর
তেমনি থাকার প্রয়াস বিরামহীন
বাতায়ন খুলে দৌড় দিতে চায় ঘর
চেপে ধরি চোখ যেই জাগে নিদহীন।
হেকিমী দাওয়াই—অন্যথা তার নেই
লখার বাসর রচেছি শপথে এঁটে
বায়ু ছাড়া আর অনুমতি কারও নেই
দুঃখের প্রহরী দাঁড়িয়ে বাহির গেটে।
সাঁঝের আকাশে এখনো কি ফোটে তারা?
রাতের নদীতে এখনো কি জাগে ঢেউ?
খোলা বাতায়ন এখনো কি চায় সাড়া?
আমাকে পোড়াতে এখনো কি পোড়ে কেউ?
কতদিন হলো—নই মিছিলের মুখ!
কতদিন হলো—নই কোনো শিরোনাম!
কতদিন হলো—হই নাকো উৎসুক!
কতদিন হলো—ডাকহীন এই নাম!
টেবিলে দেরিদা ফুকো ওপরের তাকে
চোখ মেলে চায়—হারালো কি কবি খেই!
প্রভাত চৌধুরী রয়েছে হাতের কাছে
অঞ্জন সেনও—কোনো কথা উঠলেই!
তথাপি আমার কানে পাকে তালগোল
বুকে এসে ভিড়ে ভিটেমাটিহারা শোক
জল কাঁটাতার ভেঙে চলে আসে রোল
কিসের বেগানা? সবাই আপন লোক।
সুদূরে বোমায় মরছে শিশু ও নারী
একই ঘটনা মাঝখানে এশিয়ার
গণতন্ত্র আজ জঙ্গলের অনুসারী
যত বড় সে যে তত বড় থাবা তার।
ভেঙে যায় ঘুম—উঠে বসি ফের খাটে
জগৎ আসিয়া রচে বেদনার হাট
শপথের কথা বেবাক উঠায়ে লাটে
লাল কালি দিয়ে লিখে দেই প্রতিবাদ।