শঙ্খচূড় ইমাম
বিশ্বাস
চীনা হাঁসের মতো মেয়েটির গ্রীবা ঘিরে
গেঁথে আছে লাল টোস্ট বিস্কুট
টোস্ট বিস্কুট মানে—
কাম হারানো বৃদ্ধের সকালবেলা
কাম একটি ইসকুল
যেখানে শিক্ষার্থীরা
ঈশ্বরকে লালন-পালন করেন
ঈশ্বর সুন্দর—এবং এক
তিনিই একমাত্র মেয়েটিকে
বাঁচিয়ে রাখার ক্ষমতা রাখেন—
মানুষ মূলত
তুমি চলে যা্ওয়ার পর
পুরোনো দিনের ছায়া
উজ্জ্বল হয়ে উঠলো
স্থবির হলো দূরত্বের রঙ
আজকাল—
নির্ভয়ে হাত ওঠে আয়নায়
ট্রেনের ইতস্ত হুইসেলে
ঘুম ভাঙে বিছানায়
তুমি চলে যাওয়ার পর
প্রবল বর্ষণে ভিজে ভিজে
প্রায়ই কুঁকড়ে যাই
নগ্ন হয়ে দেখি—
মানুষ মূলত ঝড়ের তলে
দাঁড়িয়ে থাকা একেকটি গাছ
গার্হস্থ্য জীবন শেষে
দুয়ার খুলে দ্যাখো
তোমার গার্হস্থ্য জীবন শেষে
বেজে যাচ্ছে তীব্র সংগীত
জেনে নেও হে প্রিয়তমা
সেইসব সমুদ্র বরাবর
পৃথিবীর সবকটি সারস
হা করে আছে
যেমনটা তুমিও ভারক্রান্ত রোদে
ফেটে যেতে চাচ্ছো অহর্নিশ
আমি বলি—
শোকের নাভি পেরিয়ে
পৃথিবীর হাতে তুলে দেও
তোমার ফুটন্ত সন্তান!
কলিংবেল
একটা কলিংবেল—
যেখানে ঘুমন্ত প্রজাপতির
উচ্চতা মেপে
রেখে দেয়া হয়
সমূহ সম্ভাবনা।
যদি ফিরে আসে
লাবণ্য দিনে বিমুগ্ধ ব্যথা
যদি ফিরে আসে এই দ্বারে
তবে নিও না আঁচলে বেঁধে
জলের বলগ
ছড়িয়ে পড়ছি আঁধারে আঁধারে
মোরগের বিপন্ন ডাকে
অদ্ভুত ধ্বনির দিকে
বেজে যাচ্ছে যে সুর
তার নিরর্থক আপসে
আটকে যাচ্ছি এই আমি
তবু জেনে রেখো
অতন্দ্র প্রহরীতে চারদিকে
যেসকল রাঙা চোখ খেলছে
তা নতজানু হবে
এই ব্যথার তরেই…
শামস আরেফিন
মন
মন তুমি জৈষ্ঠ্যের খরতাপে বিরহী মরুভূমি হয়ে গেছো
বর্ষায় স্নান করে সতেজ হও আরেকবার
তোমাকে খুঁজে জোছনার শীতল পাটি হারায় হতাশার বনে
তাই দ্বিতীয়বার জন্ম নেয়ার আগে সূর্যমুখী হও
যার মেরুদণ্ডের সামনে মাথা নত করে আলোর গতি
যাকে ঘিরে মৌমাছি ও টিয়ের সুর বাতাস নাচায়
যাকে তুমি তপ্তদুপুর বলো; সেও শ্রান্ত হয়ে
তোমার তালপাখায় তৃপ্ত হতে চায়।
অর্ধ ফোটা শাপলার মুচকি হেসে কতকাল মোচড়াবে হৃদয়
মানবতার পাঠশালায় এবার প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করো
প্রেমকানা কাঠঠোকরা হয়ে বিরহ খুঁড়ে বেদনা এনো না
বাতাবি-দেহের ঘ্রাণে উসকে প্রেমমন্দায় আক্রান্ত আবেগ
তাই তুমি লাইলি হও।
তোমায় দেখে মজনু-ভালোবাসা ম্যাচের কাঠির মতো ছড়াক প্রেম
মন তুমি এবার মানুষ হয়ে ওঠো—
কারণ, মানুষের জন্য মানুষ হওয়ার মতো কঠিন কাজ আর নেই।
জীবিকার চাবুক
শহুরে-বকুলগাছ হয়ে ভোরের প্রেম দাঁড়িয়ে আছে
যে সুঘ্রাণের বদল ভালোবাসা বিলাতে বিলাতে নিঃস্ব
কষ্ট হজমের জন্য আবেগের পুদিনাপাতা যার নেই
বিজলি পোড়া তালগাছের হাহাকার যার একমাত্র সহায়।
অথচ কিচিরমিচির তালে চড়ুই-রমণ দেখে রমক হতে চায় মন
কিন্তু বেদনার কাদায় আটকানো পা তার হাঁটতে জানে না
স্মৃতির হাতুড়িতে চূর্ণবিচূর্ণ স্বপ্ন প্রত্যাশার গ্লুতে জোড়া নেয় না
তৃষ্ণার্ত আবেগ মরীচিকায় তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে আত্মপ্রতারক সাজে
তাই সম্পর্ক বাঁচে শিশিরের মতো সূর্য ওঠার অপেক্ষা পর্যন্ত।
পুরনো স্মৃতি বিরহের ছাই ঘষে কি সতেজ হয়?
হতাশায় মোড়া স্বপ্নে কি ঘুমকাতর প্রেম জাগে?
ডানপিটে সাহসকে কানে ধরালেই কি ভদ্রতা শেখে?
বরং জীবিকার চাবুকে সহজেই আহত মধ্যবিত্তের পিঠ
যাকে অস্বীকার করার মতো কোনো স্রষ্টা পৃথিবীতে নেই
কারণ, কুকুরের মতো নিয়তি শুধু জীবিকারই অনুসরণ করে, আমাকে নয়।
খরা
অনুভূতিহীন কলম, কবিতা নয় এবার বেদনা প্রসব করো
স্মৃতিকে মুচড়ে বের করো এক ফোঁটা হাস্যোজ্জ্বল-মুুহূর্ত
যন্ত্র বাস্তবতা বিরহের পাইলিঙে আমাতে গড়ে নিষ্ঠুরতা
জীবিকা ভালোবাসার কলার টেনে শেখাল পাথুরে জীবন
জানো, কাঁদতে না পারার মতো কষ্ট পৃথিবীতে নেই
শুকনো শামুক বোঝে খরায় মৃত হৃদয়ের আর্তনাদ।
হরিণী চোখের চেয়ে ডাগর যে আফ্রোদিতির চোখ
হীরা-ধার হাসি যার ব্যবহার করে অজস্র হৃদয়
বিরহে ভাজা পাকুরা এ জীবন থেকে কোন লাভ?
যদি প্রাণ উৎসর্গে প্রেমের নামতা শেখা না যায়?
প্রেমের পরিযায়ী পাখি মনদিঘিতে সাঁতার কাটো?
শুধু স্মৃতির বাগানে হাসনাহেনার ঘ্রাণ ছড়াও।
ভালোবাসা মানে—কিশোর বোঝে প্রেমিকা ছোঁয়ার অজুহাত
সংসার বোঝে—বিশ্বাসের থালায় দুজনের প্রেমের আহার
জীবনও বোঝে—বিরহের উষ্ণ পানিতে নবজাতক আবেগ
আর কবি বোঝে—অন্তহীন কালে নৈঃশব্দ্যের হৃদয়ে এক বুক গোঙানি।
প্রকৃতির কান্না
পূর্ণিমার আলো কোথাও প্রবেশানুমতি নেয় না
যেমন অনুমতি নেয় না মন তোমাতে প্রবেশের
মনের উঠোনে ভালোলাগা জোছনায় পুড়ছে
তবু বৃষ্টি আছে বলে নদীরা পোয়াতি হয় মাছে
ঊর্বর মাটির বুক স্তন হয়ে শস্য বিলায়।
যার জানুতে ঘুমায় সৃষ্টিশীল হৃদয়ের বেদনা
তাকে কাঁচা হলুদ প্রেমে গোছল দিয়ে লাভ নেই।
অনুভূতির আখ তার বহু আগে গেছে শুকিয়ে
এ যেন সরকারি আবেগ পায়নি সততার জৈবসার
যাতে পূর্ণিমার বাতাস প্রজাপতির উষ্ণতা ছড়ায় না
যাতে আবেগ ও অনুভূতির ঊর্বরা মাঠ হয় না।
ভালোবাসার তুলতুলে পাটিসাপটা পিঠা হতে পারো
তবু হৃদয়ের চৌচির কাঁচে দেখাতে পারো না প্রতিবিম্ব
ভালোলাগা ভালোথাকা সবকিছু আঁধারের আলনায় রেখে
হতাশায় বোনা ভোরগুলো দিয়ে আর দেখো না স্বপ্ন।
তোমাদের আবেগ ভেজা ঠোঁটে হৃদয় বসিয়ে লাভ নেই
বাস্তবতার কাঠঠোকরা তবে বিরহের বাসা খুঁড়বে।
জীবিকার বোঝা যাকে করে তুলেছে করপোরেট ভাঁড়
তার হৃদয় ঝিনুকে প্রতি ফোঁটা সঞ্চিত আবেগ
প্রকৃতির একফোঁটা কান্না মুক্তার চেয়ে দামে কি কম?।
স্মৃতির ব্ল্যাকবোর্ড
সামাজিকতার মাচায় সীমাবদ্ধ হে পরাধীন চিচিঙ্গা লতা
আমাকে ছুঁয়ে হৃদয়ে আঁচড় বসিয়েছো এ কথা বলবো না
বলবো না এ সাহস ঘাসফড়িঙের উত্তেজনায় ক্লান্ত লাফ
বা পাপের সাবানে গোসল করে সূর্যমুখী হতে চেষ্টা
বা রাতের ময়লা ধুয়ে ক্লান্ত চাঁদ অস্তমিত হওয়ার ভান
বা হৃদয়ের মোনাজাতে এক ফোঁটা বিরহ ঝরিয়ে পবিত্র হওয়া
বা প্রশান্ত মুটকিতে পুরানা চালে ভাতে বাড়ার প্রশিক্ষণ নেওয়া
বা পাকা ডুমুর রসে টুপটুপ লাল ঠোঁটের আদিম আস্ফালন।
পাকা ডুমুর-ঠোঁট; আর ডেকো না কাশফুলের নরম স্পর্শে—
ঘুমপাড়ানো মাসীকে এনো না বিষণ্ন হেমন্তের ঘাটে
স্বপ্নসুতোয় বাস্তবতার নকশিকাঁথা সেলাইয়ের চেষ্টা করে
মানুষের মতো আশা নিয়ে বাঁচো বা হতাশা নিয়ে মরো
তবু ডাঙার ব্যাঙ হয়ে আর্তনাদভরা মুহূর্ত নিয়ে ফিরো না
পরকীয়া সহোদরকে মানবিকতার নামতা পড়িয়ো না।
স্বার্থ সুগোল জোছনায় চিড়া ভেজাবে খালি কথায়—
জেনে রেখো, লোকসান আছে বলেই হৃদয়ের আদান-প্রদান
আত্মাকে চিবিয়ে তৃপ্তি পায় বলেই প্রেমের জাবর কাটে জীবন
তাই তো বাইন তালাকের ডাস্টারে মোছে না স্মৃতির ব্লাকবোর্ড।
গিরীশ গৈরিক
ডোম-১
সকল রং এক সরল রেখায় এসে সাদা হয়ে যায়
এসব কথা লাশের কাফনে-বাতাসের রঙে লেখা আছে।
বাতাস রঙের লেখা পাঠ করতে পারে এক ডোম
অথচ সে বলতে পারে না, মানুষ কেন মরে গেলে সাদা হয়ে যায়।
যদিও তার পূর্ব পুরুষ মৃত মানুষের হাতের রেখা দেখে প্রথম ভেবেছিল
পৃথিবীর একটি মানচিত্র দরকার
সেই থেকে পৃথিবীর মানচিত্র হলো হাতের রেখার মতো।
তোমার ও আমার রক্তের ভেতর এসব ইতিহাস লেখা আছে
তাই মানুষ মারা গেলে মৃতদেহ সাদা হয়ে যায়,
রজনীগন্ধার পাপড়ির মতো সাদা ও সুগন্ধ ছড়ায় আমাদের মৃতদেহ থেকে।
যদিও এসব গন্ধ জীবিত মানুষের খুবই অসহ্য
তাই জীবিতরা মৃতদের ভাসায় অগ্নিস্নানে কিংবা পুতে রাখে কবরে।
ডোম-২
নিঝুম নদীতীরের সাথে ঢেউ-এর অভিমান বেজেই চলে
তীর প্রায়ই বলে: ঢেউ তুমি আমাকে অভিমানে স্পর্শ করো না।
আমরা সেই শান্ত নদীতে হাঁসের মতো ভেসে চলি-ধীরে ধীরে।
আমাদের ভেসে যেতে হয় স্রোতের টানে ভাটির পানে ফেরার ক্ষমতা নাই।
তবুও সন্ধ্যা হলেই নিঝুম দ্বীপের শ্মশান থেকে শব্দ আসে
চৈ-চৈ-চৈ-চৈ।
আর আমরা সেই শব্দে প্যাঁক-প্যাঁক-প্যাঁক-প্যাঁক করে ডেকে উঠি।
আমরা ডাকতে ডাকতে দূরে বহুদূরে ভেসে যাই
যেখান থেকে চৈ-চৈ ধ্বনি আর শোনা যায় না।
চতুর্দিকে অবারিত রক্তমেঘ আর ধূ-ধূ জলরাশি
আমরা এই জলরাশির গভীরে কেন অনন্ত নিঃসঙ্গতায় ডুবতে পারি না!
আমরা কেন নবলব্ধ আকাশে মানুষের মতো উড়তে পারি না!
তাই আমার এই হাঁস জনমের বেদনা-ফাঁস করে গেলাম কবিতায়
যে কবিতা পাঠ করলেই শুনতে পাবেন : চৈ-চৈ-চৈ-চৈ।
ডোম-৫
আমার স্মৃতির ভেতর নদীর স্রোতে তোমার ভেসে যাওয়া
এ যেন আমি ডোম বংশের বেহুলা তুমি লখিন্দর।
আমার কামের ভেলায় তোমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছি—
যেখানে কবিতার অনুরাগে মৃতদেহ প্রাণ ফিরে পায়।
এই ইতিহাস আমি লিখে রাখি কবিতায়
সেই কবিতায় তোমার স্মৃতির স্পর্শে—
আমার কলমের কালি রক্ত হয়ে যায়।
আমার নিভৃত প্রার্থনায় তোমার এই রহস্যাবৃত জন্ম ও মৃত্যু
কেন যেন আমাকে মহাপ্রকৃতির কাছে নত করে দেয়।
হে অগ্নিপ্রভ জীবন জিজ্ঞাসা তুমি আমাকে বলো:
প্রাণ যদি দেহের ভেতরে বাঁচে
তবে কেমন করে দেহের বাহিরে প্রাণ বেঁচে রয়।
তাই আমার এই বালকোচিত মনোবেদনা-থেকে থেকে মৃন্ময়ী হয়ে
বেহুলা ও লখিন্দরের ভাসানযাত্রায় অভিনীত হয়, অভিনীত হতে হয়।
মা-৩
শহরের বাড়িগুলো খুব পাশাপাশি
অথচ ভেতরের মানুষগুলো অনেক দূরে দূরে বসবাস করে।
তাই আমার মা কোনোদিন শহরের অধিবাসী হতে পারেনি।
সে এখন গ্রামে বসে প্রতিভোরে গোবর দিয়ে উঠান পবিত্র করেন;
পূজায় বসেন
পূজা শেষ করে খোঁজ নেন হাঁসমুরগিগুলো কোথায় কেমন আছে।
লাউয়ের ডগা আর কতো বড় হলে মাচাটা কতটুকু করতে হবে।
আমি শত শত পথ দূরে থেকেও মায়ের এসব কাজ দেখতে পাই
আর শুনতে পাই—মা আমাকে কখন কী বলছেন।
যেমন করে শত শব্দের ভিড়েও বাসের ড্রাইভার—
হেলপারের কথা শুনতে পায়।
শ্লোক
এই অভিধানে গুড় জাতীয় কোনো শব্দ নেই
কেননা তার বাড়ির পাশে খুনি পিঁপড়েদের বসবাস
যৌনতাত কিংবা মহুয়াবসন্ত শব্দবীজ বুনতে পারে
কিন্তু কলসির তলা ফুটো হলে—কৌমার্য ঘুঙুর আর বাজে না
এ সকল বিষয় অধ্যয়ন করে বুঝেছি—জন্মদাগ ঘষে ওঠানো যায় না
বিষয়টা বাহিরের নয়—ভেতরের
কপালের ভাঁজ গুনে জীবনের অর্থ না জানলেও
খেজুরগাছের খাঁজ গুনে বলতে পারি তার বয়স কত
কিংবা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চোখে চোখ রেখে বলতে পারি
কাঁদতে পারা মানুষের একটি বড় গুণ
যদিও আমি জন্মের সময় কাঁদিনি বলে—মা জ্ঞান হারিয়েছিলেন
যেমন জ্ঞান হারিয়ে ফেলে—ব্যবচ্ছেদবিদ্যায় ব্যবহৃত ব্যাঙ
সানাউল্লাহ সাগর
মানুষ
কাউকে কখনো মানুষের মতো হাসতে দেখিনি।
অথবা এমন কিছু দেখিনি যাকে মানুষ ভেবে নিজেকে
মেপে দেখা যায়—কতোটুকু মানুষ হলাম!
আগামি স্বপ্নে একটা বিড়াল কিনবো;
হলুদ মেখে— নাম রাখবো মানুষ!
নিকটবর্তী কোন ডোবায় নাচতে দিয়ে— দেখতে থাকবো
ভেতরের নাচগুলো কতো মুহূর্ত বাঁচতে পারে।
…আর বিড়াল থেকে সেই নাচগুলো কিভাবে মানুষ হয়!
কোরাস
তোয়াজ দেখে মহাজন ভাবলো
রিক্সা বোজাই ক্রিং ক্রিং
ঘোড়া হতে পারে!
…পাশ ফিরে ভুলে গেলো মুখের দাগ।
—কবর খুড়ে
মাগীবাড়ি যাওয়া মাথাটুকু
আলাদা কেতাবে ছেড়ে এসেছিল মহাজন।
আসছে গর্ভপাতে ক্লিন করে দিতো
পেশাব-পায়খানার বোমা…
থুথু ফেলার রূমাল সাবধানে রোজা ভাঙে
নাগরিক কোকিল—লাশ আর ভীতু ইলিশের ব্রা দেখে থ!
নার্স—ডাক্তার কখন আসবে?
আমার মুখডগায় তেলাপোকা
আমি আর ঘুমাবোনা…
ভাঙারি
নিলামে তুলে হাটবার
হলুদের বিনিময় শেষে
আরেকটু এগিয়ে যাবো;
মোলাকাত হবে ঘড়ির গোপনে।
নির্মাণ শব্দের সাথে ছোহবাত ভেঙে
দাঁড়িয়ে ঘুমাতো যুয়ান দৌড়
পিতামহের গামছা বেচে
সে ফিরেছিলো পিতার গলায়।
এতিম উঠোনে সন্ধ্যা—
আমি ঘোর কিনে ঋণী তখনো; চুপকন্যার সিঁথিতে গাঁথিনি লাল।
চোখ ফেলে
তোমার মাথাটা বিচ্ছিন্ন অভ্যাসে ছুড়ে দাও
আমি নিঃশব্দ; আবাসন খুইয়ে আসা জজমে
নিলাম উপভোগ করি…
চোখের লিরিক
প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিলে মুখোশ ফেটে রক্তেস্রোত;
জোনাকীর হাঁটাচলা রোগের আয়ু নিয়ে
এখনো বিভোর! সাঁতার ভুলে আসা
পিপাসা, দূরত্বে—
প্রশ্নটা তবু হাতে হাতে পাড়ার মজমায়…
প্রেমবুকের পেছনে; গুচ্ছরাত বছরব্যাপী আলোহীন
অন্য চোখ; চোখের গানে—
খুকি তোমার কোমরে কিসের নামতা?
বেলুনের ঘোরবাজী খেলছে টান—
আয়নার লকেট থেকে নেমে আসো উদ্যত প্রশ্ন,
আমার পুরানো কবর
তোমার কাছে আধেক প্রশ্ন করবে…
সেকেন্ড হ্যান্ড
পুড়ছে পোয়াতি। অস্ফুট আলোর বৈঠা শানাও; ঘিরে রাখো অপূর্ব রাত।
জলের হাততালি জানাজানি হয়ে আছে পায়ে পায়ে; আবরন ছিঁড়েছে তেঁতুল!
শোকদাঁতের পাঠান্তে তুমি
নেমে
আসো;
কানের কাছাকাছি।
ঘেমে উঠি তরল দানে। তুমি সাপের স্পর্শে ফুড়াও— ঘিরে রেখে বিভেদ
প্রত্যয়। ততটুকু উড়াও—
ঘোরাও মেদের মায়া;
ঘুড়ি স্বাদের ইশকুল; মায়া তবু জমে থাকে পালকীর নাকে, ঠোঁটে।
খিড়কি ডাকে—মনোযোগ ভানে মসলার কারুকাজ!
এতেকাফ বাদে— জ্বলে ওঠে পড়শি চুমু
তোমার বকেয়া হাত থেকে হাতে
নেমে
আসে
কবর দরজায়।
গলিপথ
উঠে আসা ধোওয়ার মতোন কেঁদে কেঁদে ডাক দেই।
বাতাসের ঘরে খেলনা বউটা দেখে কেউ ভয় পেলো না
অজানা শৈবাল-অচেনা ডাকে হই হই করে
তুমুল হতে পারে
অথবা আর্শ্চয এসব বিদ্যা
হাসি জমিয়ে রাখতে পারে— সন্ধ্যাতাসে।
কোথাও যদি আগামির চোখ পাখির পিছু নেয়
তবে সরল সমীকরণে আমরা তাদের গল্প সাজাতে থাকি
পড়শী চুড়ির টুঙটাঙ তখন আলসেমি বাজিয়ে
আরও কাছাকাছি আসে।
আর হারানো পুস্তকের গ্রাম!
গন্তব্যের উঠোন ভাবতে ভাবতে
নিজেকে একখ- উঠোন বানিয়ে নেয়—
যেখানে আমরা থাকি
অথবা
আ
মা
দে
র
ছায়াগুলো খাল-বিল আঁকতে আঁকতে
নিয়ন্ত্রণ হারানো কোন বাসে উঠে যায়…
চাঁদনী মাহরুবা
যেভাবে পা টেনে চলো
এইসব খসে পরা চুন-সুরকি কোঁচড়ভরতি করে
পাড়ি দে্য়ও মেঘনার কনিষ্ঠ বুক।
যেখানে জল ও গভীর হয়
আর একটু করে বাড়তে থাকে জলডুগি মাতাল দহন।
আমরা কামরাঙা গাছে পা ঝুলিয়ে সাবালিকা হবার গল্প করেছিলাম।
কিভাবে একশ’ একটা হাতের তালুতে গজিয়ে ওঠে বনসাই।
বনসাই না ব্রকোলি?
ভাজ খুললে উঠোন খরায়
গিট খুললে ঢাউস দুপুর।
ঈশ্বর সাথে করে নিয়ে গেছে,চৈত্রের বেদাত পুকুর।
চোখের বালি ২য় পত্র
পৃথিবীর তাবৎ আখ্যানশাস্ত্রে কে যেন লিখেছিল, রবি বাবুর প্রেমিকার আরেক নাম বালি!
বয়ামভর্তি জামার গল্প নিয়ে আমরা সই পাতাই
অড়বড়ই গাছে সেবার হলুদ গড়ায় ভীষণ।
চোখ চিবুক চিড়ে কে কার মায়াখন্ড খুজতে যায় বলো ? আমরা তবু হাতরাই লোমকূপ ভিড়।
আমাদের আঙ্গুর ক্ষেত পুড়ে গিয়েছিল,
পুড়ে গেল শামিয়ানা
কচু পাতায় জল! জলজ ঘ্রান খুটে খেল ডাহুক।
দেড়শ বছর থেকে দু হাত অতল , দু হাত গভীর ক্ষত এক!
আর কতটা ঢাকা যায় বল ভেলভেট থানে?
সেই শোক বুকে নিয়ে ফিরে গেছে ক্রুশবিদ্ধ জেসাস! আহা তার পানপাতা হ্রদ।
জেসাস কে চিনতে তুমি? ডাহুকের ইতিহাস?
এভাবে জল বাড়লে আমি মিথ্যেবাদী হয়ে যাব
জলের মতো বাড়ছে অসুখ। তুমি কি পড়তে পার এই সব জলঝড়? জলঙ্গা কবিরাজি যত…শিখেছিলে কোনদিন? মাছরাঙ্গার ঠোট খসে পড়ে এই জ্বরে! আমার ঢের আগে হাওয়াঘরে লিখেছিলে যাদের নাম তাদের কেউ কি পেয়েছিল অসুখের ঘোরে পাখিজন্ম এমন?
রেডিওমুখর শহরজুরে বেজে চলে যে ব্যাথার বিউগল
এইসব চৈত্র দিনে তলপেটের মত মসৃণ চালায় নামে আমার জ্বরভাব । বয়ামভর্তি আচারের কাছেপিঠে ছুড়ে দেই দুপুরের স্কুল ব্যাগ। মেন্দার পাত পেড়ে বসে আছে পানপাতা মুখ। আজানের শুন্যতা শোক হয়ে নামে কারো কারো বুকে।নিপাট মাদুরে নিয়ে সেলাইয়ের ব্যাথা। আসামলতার ঝোপ থেকে যেন উড়ে যায় মায়ের ঘ্রান!
জল কি নির্জন নাকি কোলাহল?
জল একটি ধারনা মাত্র। কতগুলো আঘ্রাণ দুপুর সেকে দিলে, আস্ত এক হিজরী সাল গোপনে সফর হয় জানো তো?
এটা আসলে কিছুটা জেনে যাবার ব্যাপার। ফ্লাইওভার জুরে জ্বর নামলে, রাতের নির্জনতা ভাঙে জীবনানন্দ দাশ।
আমিও ঠিক জেনে যাই
ঘামজলে ভিজে যাও তুমি।
মহিম সন্ন্যাসী
তরমুজ
তরমুজে চোখ রেখে জেনেছি এ পৃথিবীতে এরচে’
কঠিন আর অধিক কোমল কিছু নেই
যতবার কাটি তাকে, ফালি ফালি বিচ্ছেদ ফিরে ফিরে আসে
তুমি তরমুজ দেখে কাঁদো
চোখ দুটো টকটকে লাল, চোখ দুটো বীজে ভরে ওঠে
চোখের ভেতর কিছু থাকে না আসলে, থাকে না যে কেন
দৃশ্য বাইরে থাকে, দৃশ্য বাইরে থাকে—দৃশ্যে ময়লা লেগে যায়
যেভাবে প্রেমের কথা বলি
টুকরো করার আগে সেইভাবে চেয়ে থাকি অন্ধ তরমুজের দিকে
দোহন
দুইতে যাবার দিন আজ
তুমি কি জানতে ওরা শুধুই আঙুল দিয়ে করে
শুধুই আঙুল দিয়ে ভরে নেয় টিনের কলস?
তুমি কি ওলান চেনো? ওলানে কয়টি ঘর, কয়টি জানালা
কতগুলো সিঁড়ি থাকে, কীভাবে সেখান থেকে পিছলিয়ে পড়ে যায় দুধের নহর
এবং তুমি কি জানো দুইতে যাবার আগে ওরা কাকে বেঁধে রাখে
কাকে সান্ত্বনা দেয়, কাকে ভালোবাসে?
জলাশয়
লাশগুলো ফুলে যাচ্ছে, ভেসে উঠছে জলের ওপর
খাদ্যশৃঙ্খলের অমোঘ নিয়ম ভেঙে কাদার স্তর থেকে মাগুরেরা বেরিয়ে এসেছে
জাল ফেলবার কথা ভাবছ তুমিও
মৃত মানুষের চেয়ে মোক্ষম টোপ কে বা বানাতে পেরেছে?
কফিন
নামাও, নামিয়ে আনো, ফাঁস খুলে শোয়াও শরীর
তোমাদের হৃদয় বিছিয়ে
যে হৃদয়ে রেখে তার পা, জীবিত মানুষ গাছে ওঠে
রশি বাঁধে সস্নেহে নিজের গ্রীবায়
তোমাদের হৃদয়কে পায়ে ঠেলে অবশেষে পরম যত্নে মরে যায়
সদ্যোমৃতের ছায়া দুলে ওঠে ভোরের বাতাসে
সদ্যোমৃতের ছায়া ফুলে ওঠে রোদে, আরো রোদে
অপরাহ্ণের নিচে সদ্যোমৃতের ছায়া ফিকে হতে থাকে
তোমরা কি তারপরও নিথর পায়ের নিচে পেতে দাও নরম হৃদয়?
ছায়ার ব্যাপারে কোনো কথাই বলো না
এমনকী দুপুর বা বাতাসের প্রসঙ্গ বেমালুম চেপে গিয়ে
যে শরীর ঝুলে থাকে বৃক্ষশাখায়
যে শরীর দোল খেতে চায়
তাকেও নির্দ্বিধায় সটান শুইয়ে রাখো কাঠের কফিনে!
বাস্তবতা
পরমতসহিষ্ণু নিরহংকার ঢেঁকিশাক
সত্য খুঁজতে গিয়ে তোমার নম্রতায় মুগ্ধ হয়েছি
কত মানুষের বাড়ি, কত রেস্তোরাঁ, পাঠাগার
সুদৃঢ় গাছের ডাল, নিস্তরঙ্গ জলাধার
প্রেক্ষাগৃহের ছাদ, ঘেসোজমি, মালবাহী ট্রেনে
সত্যানুসন্ধানে হারিয়েছি সংযম আমার
এখন যদিও জানি গোলাভরা সোনালি ইঁদুর
পানাপুকুরের ধারে গোসাপ গর্ভবতী হলো