ছুরত আলীর চাষবাস
শীতললক্ষ্যা নদীর ছোট কন্যা জানের খাল,
তারই দক্ষিণ পাড়ে ছুরত আলীদের চাষবাস বহুকাল।
ভাওয়াল রাজার পত্তনী পূর্বপুরুষের পুণ্যভুমি,
খাজনার দায়ে বহুবার গিলে খেতে চেয়েছে এই জমি।
যা ছিল রক্ত-ঘামে কেনা শেষসম্বল
পিতৃভিটেমাটি রক্ষায় ক্ষয়েছে সব
তবু হারায়নি মনোবল।
কিন্তু আজ বড়ই ক্লান্ত ছুরতআলী
পুরো জীবনটাই যার জোড়াতালি।
জমিতে লাঙ্গল টেনে ক্ষুধার্ত বলদ দুটো
পরম তৃপ্তিতে খাচ্ছে
. চারিতে ভিজিয়ে রাখা খড়কুটো।
এইবার ছুরতআলীর পালা
হালকা ডুব সেরেই মেটাবে ক্ষুধার জ্বালা।
কিন্তু এলোমেলো হয়ে গেল সব হিসাব,
‘হেনকাফ’ হাতে দুয়ারে দাঁড়িয়ে ‘দার্গাসাব’!
অতিথি আপ্যায়নে গাছ থেকে পেড়ে দিতে চাইলো ডাব,
কিন্তু তার আগেই লাঙ্গল-ধরা শক্ত হাতে
পরিয়ে দিলো আরও শক্ত হ্যান্ডকাপ!
‘হায় আল্লাহ! কী অপরাধ করেছি আমি?’
দারোগাসাব বললেন, ‘তুমি ডাকাতি মামলার আসামি।’
হলো না আর ছুরুতালীর খাওয়া-গোসল,
বুঝে গেছে কে নিচ্ছে হিসাব সুদে-আসল।
‘দার্গাসাব! আমি গরিব মানুষ, চাষ কইরা খাই,
কিন্তু ঐ তাজ-হাই,
তাদের কোনো চাষবাস নাই,
তারা আপনার থানা চাষ কইরা খায়!’
জানের খালের পানি যেমন শীতলক্ষ্যায় এসে মেশে,
ছুরত আলীর কান্নাও কেউ শুনল না অবশেষে।
কার কার জ্বলে?
ঘটনা-রটনা,
পুরোটাই সত্য না।
নায়কেরা অন্তরালে,
চুনোপুটি ছেঁড়াজালে।
জেনে নিলাম কৌশলে,
কার কার জ্বলে?
যাহা দেখি উপরে
সকালে বা দুপুরে।
পদ্ম ভাসে পুকুরে,
মূল কিন্তু গভীরে।
দেখা রূপ সব না
জেনে নিলাম ছলে-বলে,
কার কার জ্বলে?
হাসি আর কান্না
ভালোবাসা-ঘেন্না ,
চোখের দেখা মনের না,
পুরোটাই মুড়োটা না।
জেনে নিলাম কৌশলে
কার কার জ্বলে?
জ্ঞাতি ভাই
রাস্তায় কুকুরের জটলা দেখেই
মনে হলো আসছে ভাদ্রমাস,
একটু এগুতেই
গলির মুখে
স্পষ্ট দেখতে পেলাম বখাটেদের চোখে
কারো অনাগত সর্বনাশ।
এরা কে কার ওপরে?
এই ভাবনাটা না হয় ভাবলাম পরে।
যদি বলি কে কার নিচে?
এই ভাবনাটাও মিছে।
তবে এর চেয়ে বড় সত্য আর নাই,
আচরণে-বিচরণে এরা জ্ঞাতি ভাই।
তফাৎটা কি শুধুই দুই আর চারে?
জানি
অনেকই যাবেন না
এই ভাবনার ধারে।
তবে কি ভাবনাহীনতার দায়ভারে
প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে
নষ্ট বীজের ভ্রষ্ট ফসলে
অলি-গলি যাবে ভরে?