পুরুষ
দেহের কোমল পেরিয়ে যা খুঁজেছি তা পাইনি বলে জেঁকে বসা ভীড় ঠেলে হেঁটেছি বিকেল বরাবর। যেখানে বাবুইনৈপুণ্যে নামে বিচক্ষণ সন্ধ্যা। ‘নিতম্বপ্রধান’ কিংবা চেহারা প্রধান, মজিনি তেমন। মজা পুকুরের মতন অহেতুক বুদবুদ। মস্তক প্রাধান্য পেলে নড়ে বসি এখনও, যেরকম ঘাসের মালিন্য কাটে বৃষ্টির ঝাপটায়। ওরকম পেরোতে গিয়ে টিটকারি করে রাত আর ল্যাম্পপোস্ট। পোকাদের আনাগোনা ঘনীভূত হয়। পুরুষ স্বভাব করে তাড়িত। সযত্ন চোখ ফেলি ‘বরাবরে’, কোনো নাম চকচক করে না। ঠিকানায় প্রযত্ন খুঁজি, সেখানে ‘কেয়ার অফ’ বলে কারো থাকার কথা ছিল। মানুষ ঘরকে ঠিকানা বলে, আমি ঘরের ভেতর ঢুকে ঠিকানাহীন বসে থাকি। জানালায় চোখ রেখে ভাবি— কোথাও অপেক্ষা করে আছে গন্তব্য।
কেউ কোথাও ছিল না
রাস্তা হাঁসফাঁস করছে! ফুটপাত ঘর্মাক্ত। জুতো হেঁটে চলেছে জোড়ায় জোড়ায়। বৃষ্টির ভাবনায় চিন্তাগ্রস্ত ধুলো। কোথাও কোলাহল খুব। যুদ্ধ অতিক্রম করছে ইতিহাস। যেখানে মৃত্যুর খুলি অপলক। মিছিল গাল ছুড়ে দিচ্ছে অপর মিছিলের দিকে। এম্বুলেন্সের ভীড় বাড়ছে ক্রমশ। টায়ারের সাথে পাল্লা দিচ্ছে টায়ার। ভেপুর সাথে ভেপু! রিকশার সাথে ট্রাকের শত্রুতা ভীষণ। উপচে পড়া নগর উঠে যাচ্ছে শূন্যে। খোসা ছাড়ানো বাদামের পিষে যাওয়া আর বিকেল যুগলবন্দী হলে অস্ত নামে। কোথাও হাততালি খুব। হুইসেল বাজিয়ে খুন হয়ে যাচ্ছে কোথাও।
রাস্তা মুক্তি চাইছে। মুক্তি রাস্তা চাইছে। রাস্তা আর মুক্তি দুজনেই পলাতক হলে ফের মিছিল, ফের হুইসেল। টায়ারে আগুন মানে টিয়ার শেল। চোখজ্বলা দুপুর আর রাজপথ কাউকে মহান করেছিল একদিন। চিন্তাগ্রস্ত ধুলো পায়ে পায়ে মিছিলে এগোয়। বৃষ্টির জন্য বহুদিন কোনো স্পন্সর মেলেনি হয়তো।
ছুটিবারের কাছে পৌঁছাবো বলে
নিজেকে কোনো এক ছুটিবারের কাছে পৌঁছে দেবো বলে কথা দিই। পথে নামি, এ মাথা ও মাথা জুড়ে দিয়ে ক্লান্ত হই। নিজের কোনো পথ হলো না বলে উদ্যানের কাঁধে নির্ভার হই। ক্যাপিটাল সব পারে, কবিতা পারে না। আইসক্রিমওয়ালার তৃষ্ণা নিবারনের কথা ভাবা হয়নি বলে যারা চারুকলায় ছবি আঁকে, তারাও একদিন ছবি হয়ে যায়। নিজেকে প্রতিশ্রুতি দিই, নিশ্চয় একদিন পৌঁছে যাবো রোদবারের বিকেল আর বৃষ্টিবারের জানালায়। অনেক হাঁটবো, অনেক রোদ আর বৃষ্টি আর ছায়ার জন্য এখনো অনেক পথ হাঁটা বাকি। আমরা যারা রোদের দিকে হাঁটতে চেয়েছিলাম, তাদেরকে শেয়াল তাড়াতে হয়েছিলো; যারা জ্যোৎস্নায় ভাসতে চেয়েছিলাম, তাদেরকে সাম্রাজ্যবাদী বাঘ তাড়ায়ে ঘরে ফেরার শপথ নিতে হয়। তবু রোজ নবায়ন করি প্রতিশ্রুতি। অনন্ত ছুটিবারের জন্য গোছগাছ করি রাত, ভোরকে ঠেলে দিই নদীর মাঝ বরাবর।