বৃষ্টিপাতের স্বরলিপি
পথের দুপুরগুলো জানে—কোনো হিংসেই অমর নয়। কোনো—
প্রতিপালিত দুঃখ-দেনা, মানুষের শক্তির বিরুদ্ধে করতে পারে না
বিদ্রোহ। অতএব, মানুষই ক্রমশ বপন করে যায় আকাশের
বিস্তারে ভালোবাসার মেঘ। বৈধ বেহালার বাহুতে বাহু রেখে
কাছে আসে প্রেমিক, চুমু খায়—নাচে।
প্রেমিকা তার ঠিকানা হিসেবে বেছে নেয় সেই নর্তকনগর।
যারা ঘোরগল্প পাঠে অভ্যস্ত—কেবল তারাই পড়ে নিতে পারে
ঠোঁটরেখা, রাগরহস্য আর নিগূঢ় স্বরলিপি।
বৃষ্টিপাতের রাতে, যে কবি কাঁদতে ভুলে গিয়েছিল
স্বরলিপিগুলো পুনর্লিখিত হয় যুগে যুগে তার হাতে।
কোনো ঝড়ই উড়িয়ে নিতে পারে না কালের উনুন।
দৃশ্যগুলো ধারণ করতে করতে সমাপ্ত হয়ে যায়
সেলুলয়েডের ফিতা।
থেকে যায় প্রেম,
গোলাকার পৃথিবী জেনে যায় একদিন তারও—
শেষ সমাধি হবে বিদগ্ধ বসন্তের স্তনে।
প্রকাশিত সূর্যরাষ্ট্র
ধরো—আজ বৃষ্টি হবে না
সবপাখি ঘরে আসবে ফিরি
কেউই পথ ভুলে নদীতীরে যাবে না আর—
দুপুরের সাথে প্রকাশিত সূর্যরাষ্ট্র করবে না লুকোচুরি
কেউ দেখবে না কারও মুখ বলে,
প্রতিজ্ঞা করেছিল যারা,
ফিরে আসবে তারাও এই জলভেলা মাখা তুমুল বর্ষায়
লেনাদেনা সেরে মাঝিও নৌকোর গলুইয়ে বসে
গাইবে মহাজনী গান—
শান্ত ঢেউ যেমন মাঝে মাঝে চোখের দেখা পায়।
তুমি কি সেদিনও ছবি আঁকবে বসে এই নির্জন সূর্যের
রঙের সমাহারে—
উড়িয়ে দেবে আলো, বাঁশির ভুবনে
যেখানে কিছুই প্রকাশিত নয়—
তোমার হস্তছাপ মাখা মগ্ন অরণ্যের।
ছলসম্পর্কের মেঘ
বৃষ্টিগুলো নিজেদের সাথেই গড়ে তুলছে গভীর সম্পর্ক
কোনো উত্তর পাবে না জেনেও নিজেদের কাছেই নিজে
প্রশ্ন রাখছে নদী।
কেমন আছে নদ—
কেমন আছে ঢেউয়ের ননদ—
তারা কি এখনও অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে আষাঢ়ের রাতে !
জোনাকীরা নিজেদের জন্যই জমিয়ে রাখছে
ছলসম্পর্কের মেঘ।
কোনো দিনও ঝরবে না জেনেও এই
গ্রামের কিশোরীরা বুকে সঞ্চয় করছে
সামুদ্রিক শিল্পপাথর।
ঋতুর পুরাণ
ডাকে না কেউ আজ।খাতায় জমা জলবিকেল-
আড়িপাতা সন্ধ্যার রঙ, মাঘের মেঘবতী
মৌসুম—
কেউই ডাকে না কাছে।
সবাই যেতে চায়,
ছেড়ে যেতে চায়
জমিয়ে রেখে কান্নার পরত।
অথচ কথা ছিল, এখানে কেউ কাঁদবে না
কোনোদিন আর।
যারা পোহাবে বিসর্জনের রাত,
এমনকি তারাও—
দক্ষতা নিয়ে দেখবে আর্ট শো’র
আত্মপ্রকাশ,
যে ছবি ২০৫০ সালে প্রদর্শিত
হবে, ঋতুর পুরাণে,
তাকে কল্পনা করেই আনন্দে কাঁদবে শুধু
ধুলোমাটির ঘ্রাণে।
পূর্বাচলের প্রাণ
ফিরতে চেয়েছি মধুবনী ঘোর গায়ে মেখে
ছন্দহীন সন্ধ্যা যেমন রাতের গভীরে ফিরে
যেতে চায়। কোনো ভালোবাসাই,
প্রথম নয়—এমন সত্যের ভৈরবী
সুর তোলে ফিরে যেতে চেয়েছি
যেভাবে গহীনে ফিরে মাঘের পক্ষান্তর।
কেউ জমা রাখতে চায়নি আমার ছায়া-
কেউ খোঁজ নিতে চায়নি
কোম সাকিনে বেঁচে আছে পূর্বাচলের প্রাণ
দেখতে চায়নি—
প্রকাশিত প্রথম প্রতিমা।
ফিরছি—
রেখে আমার বিষাদ।
কোনো অভিযোগপত্র না লিখেই
স্বাক্ষর করে যাচ্ছি একটুকরো হলুদ কাগজে।
জলকলঙ্কের চিহ্নগুলো
চিনে রাখো এই ভূগ্রহের জলকলঙ্কের চিহ্নগুলো। ফুলদানিতে
জল সাজিয়ে-বেহালাতে সুরটি তোলো। দেখবে সেই সুরের
দেশে বিরহী এক ভিন্নপরী। ‘ফুলমাধবী’ নামটি যে তার
রেখেছে কেউ আদর করে। অথবা কেউ প্রেম নিবেদন
করে গেছে ছায়া সেজে। পাবে তার দেখা তবু—জেনেও
শুধুই বিজলী খোঁজে।
কাফকা’র শেষ সাক্ষাৎকারটি নেওয়ার পর
তারপর আমার দিকেই তাকালেন ফ্রান্ৎস কাফকা
বললেন—সবুজ দেখেছো?
বললাম—দেখেছি।
জানতে চাইলেন—সবুজ কয়প্রকারের ছায়া সাজায়?
বললাম—জানি না।
তিনি হাসলেন। ততক্ষণে মধ্যবিত্ত মাঘ, তার সকল
শীত মানুষের মাঝে বিতরণ করে বৃক্ষের দিকে ফিরতে
শুরু করেছে। বরফ কাঁপানো ঘাম ঝরিয়ে নতুন মাটির
বুকে উঁকি দিচ্ছে একটি তীক্ষ্ণ ধানগাছের ডগা।
গুপ্তহত্যার ঘরে
কোনও সোঁদাশব্দ নেই। পিপীলিকার পা থেকে শুধুই
ঝরছে রক্ত। রেটিনা’র সর্বশেষ স্তর থেকে যে আলো
সরে গেছে,
সেটুকুই খুঁজছে একজোড়া প্রেমিক-প্রেমিকা।
গুপ্তহত্যা সেরে কয়েকটুকরো প্রাচীন মেঘ
বন্দি হচ্ছে নিজের খাঁচায়।
আর একটি বাঘ-শেয়ালের বেশে বেরিয়ে
যাচ্ছে ওই শিকল-সীমানা থেকে।