চম্পাফুলের দিলারা বুবু
ফেলে আসা পাখি দিলারা বুবু কোথা তোমার খেই
চমক মেরে ভাইটারে তুলে চুমু ঘষিলে গালে
রাত দিন ভরে মায়ের আদর বুঝতে দিলে না যেই
ছয় ভাই মরে চম্পাফুলি ননি তুলা সর তুলে
মায়ের বুকে ফাল মেরে ছুটে নতুন জ্বালা সুঁই
হাসপাতালে চাঁদরে ফুটেছে নীল দরিয়া দুখ
অনুবারোমাস ঘুরেই চলে বাতের বাঁশি উই
চাবুক ব্যথা কদর বুঝে দরোজা জানালা হুক
দিলারা বুবু সাতপাঁকে বাঁধা ঘাট—কিনারে ঘর
বাজা-পুকুরে ঢেউফুল ছুটে নতুন মাছে কুঁই
শূন্য ঘরেতে বাজে সারিন্দা তার-ই কাঁধে ভর
ঝলক মেরে পারে না ধরতে সম্ভাবনার পুঁই
পাঠ-পঠনে সৃজনে মননে ছিলই কৃতি ভারী
কোনো ক্লাসে নয় দ্বিতীয় কাগজ সনদে সেরা
মা-বাবার অকাল প্রয়াণে এক ভাই নীড় তারই
নব পুঁথি সোনার সবকে পড়শি চোখে—সে তারা
পানের বরজে সুগন্ধ মাখা জরদা ফুলে জরি
নতুন মিঠার বারুদ জলে দুধে পাখনা সর
যন্ত্র জলের তন্ত্র খুলেছে আলোর মন্ত্র ধরি
বাতাস নূপুরে সুদিন ফিরে নতুন আশা চর
ছয় ভাই হারা চম্পাফুলি চলছে বুবুর লয়
এতিম পাখি নাই ভয় কভু যাপিত ঘুড়ি নাও
বাঁচা ভাই শুধু রাসিন নিয়ে করবে স্বপ্ন জয়
কত শতানে চায় ক্ষতি তার ফোটায় কড়ি বাও
বাবা মায়ের লকেট-স্মৃতি ঝুলছে গলার মূলে
এক পাশে তার ভাঙা কুলা থির-মেরে-আসে নদী
লেগে আছে দাগ বাস-পিননে হৃদি জমির আলে
দরিয়া পাথারে দিন ভানে জীবন তলির গদি
অকুল দরিয়া ভারী সাহারা পার করছে জুটি
বিদ্যা বুদ্ধি ধরে-ছোট ভাই বিশাল বিত্তওয়ালা!
শত ভান ফেলে রক্ত ঘামেতে করলো মানুষটি
বিদেশ বিভুঁই জয় করে সে ঘরে লাগালো তালা
ছ’টি ভাই হারা দিলারা বুবুর শূন্য চতুর্পাশ!
জিন্দা-শেষ ভাই রক্তচুষার হলো পগারপার
ঘটি বাটি জলে জং ধরেছে ভাদুমলতা ঘাস
ভং সংসার খেলা সে খেলে বুবুকে ফেলে ছাড়
মস্ত দুনিয়া নিঠুর বলি শনি যায় শনি আসে
যায় দিন ভাল আসে দিন বাজে ঝুলে চিহ্ন নীল
মঙ্গল আসানে শব ঝুলে ঠাসা নিয়তি গা ভাসে
সহি তার হৃদি নরম পাতে পড়লো বুবুর খিল।
আরও পড়ুন: বিপ্লবী বাঘা যতীনের মরণযুদ্ধ ॥ রকিবুল হাসান