শুধুমাত্র সাধারণ
শুধু সাধারণ হবার জন্য সময়কে তাড়িয়ে দিলাম নিজের ভেতর থেকে, এভাবেই তৈরি হলো গতির নিয়ম; ভেতরের অপার সৌন্দর্যকে দিলাম ছুঁড়ে ওই শূন্যতার দিকে, দৃশ্যে দৃশ্যে রচিত হলো জগত;
আহা, শুধু সাধারণ হবার জন্য অভ্যন্তরের সমস্ত সুধা ছড়িয়ে দিলাম বাতাসে, গন্ধে গন্ধে ভরে উঠল পৃথিবীর কূল; আর আমার ধ্বনিপুঞ্জ ভেঙে চুরমার করতেই সশব্দে ফেটে পড়ল দুনিয়াটা;
হুম, শুধুমাত্র সাধারণ হবার লোভে আত্মাকে বের করে ছুঁড়ে দিতেই জন্ম হলো অবারিত প্রাণ; এবং লাবণ্যকে ঝেড়ে ফেলতেই রঙে রঙে অপূর্ব হলো চারপাশ;
হয়তো আমার সাধারণ হবার জন্যই নিজের ভেতরটা উড়ে গেল বাইরে, এবং পৃথিবীতে তৈরি হলো যাবতীয় সম্পর্ক; আর এই সাধারণ হবার আশায়ই আমি মাথা গুঁজলাম ঘাসের ভেতর, আমার ওপরেই পড়ুক জগতের সব পায়ের বেদনা।
জন্ম
শব্দ আমার কাছে শৈশবের লাটিম, হাতের তালুতে রেখে অবাক বোলাতে পারি।
দেখো ঐ যে হিজলবন, যার গোপন করোটি খুলে যারা উপভোগ করেছিল বালিকার সমগ্র বেদনা; গ্রামাঞ্চলে একদিন এইসব জিরাফের মুখে কাফি পরিয়ে দিতেও আমি ব্যবহার করেছি লাটিমের রশি।
এরকম প্রতিটি ভাবনা এক-একটি আলোর চিরুনি।
নিরীহ উরুর কাছে প্রতিভা প্রার্থনা ক’রে যারা নেয় গলিত করুণা, তাদের কাছে শব্দ কপট পিপাসা। আর আমি জানি নারীর শান্ত বুকে প্রার্থিত শব্দ নাড়াচাড়া করলে জেগে ওঠে পৃথিবীর প্রাণপুঞ্জ; শ্যাম্পেনের ফেনার মতোই অলৌকিক চুম্বনচিত্র।
শোনো, প্রতিটি বাক্যই বাসন্তির গায়ে প্রথম স্পর্শ।
হরিণীর সমস্ত পেয়েও আমি সম্ভোগ শিখিনি; অথচ তার গর্ভেই জন্ম নিয়েছে আমার সমস্ত কবিতা।
খুনি
খুন করার পর নিজেকে বেশ পুণ্যবান মনে হচ্ছে
খুনেও এত আনন্দ!
তা-ও দিনদুপুরে আস্ত একটা খুন
প্রকাশ্যে ফুলরঙের উজ্জ্বলতায়!
কাল পত্রিকায় ছাপা হবে
একজন আদর্শ খুনির ছবি ও খুনের ঘটনা
সাংবাদিকরা অবশ্য রসটস দিয়ে ভালোই লিখবেন
পোজ দিয়ে দু’একটা ছবি তোলা থাকলে ভালো হতো
কিন্তু শালা থানাটাকেই মনে হচ্ছে ধর্মশালা
পুলিশ আমাকে দেখেই বলল—এখানে খুনির জায়গা নেই
দয়া করে সংসদে যান
জীবনসূত্র
একটা চুমুর বয়স থেকে মোটেও বেশি নয় আমার বয়স
তোমরা যারা আমার বয়স হিসেব করে ভাবছো
জীবনটা স্রেফ ১০০ মিটার দৌড়
এবং একটা প্রজাপতি উড়াল
তাদের বলে রাখি শোনো—
জীবন সন্তানের মতো, তাকে জন্ম দিতে হয় বারবার
একটি জীবনে যার ষাটলক্ষ বসুন্ধরা থাকে
তাকে শুনতে হয় না জমিদারবাড়ির পাখিদের ঠাট্টা
সে এমনিতেই পেয়ে যায় আশ্চর্য এক গল্পের দোয়াত
যার ফোঁটায় ফোঁটায় জন্ম নেয় এক-একটি চুমু
চুমুর যুদ্ধে হেরে যাওয়া জীবন নিয়ে
যারা এখনো দেখে যাচ্ছ মুদ্রার অহেতু নাচ
শোনো—আমার দাদীমা এক রাক্ষুসীর গল্প বলতেন
একটিও দাঁত নেই, অন্ধও সে
অথচ তার চোখের জল থেকেই নাকি জন্ম নিয়েছিল
পৃথিবীর প্রথম নদী
সেই নদীতে ডুব দিয়ে দেখ, তুমি শুধু অজস্র জীবনের গল্প
প্রকাশ
রাগিও না, নক্ষত্র ছেপে দেব।
সেই যে মিনুদি, কৈশোরের গল্পচ্ছলে
দেখিয়েছিলেন দুধাল কোমর
এর আগে বুঝিনি
মানুষের শরীরে যে নদী বাস করে
শোনা যায় ঢেউয়ের আওয়াজ।
রাগিও না, বলে দেব সেই কথা।