হায় সুন্দরবন
রেলওয়ে জংশন বসে থাকবে মানুষের ভিড়ে
সেখানে অনেক মৃত পাতাদের ফিসফিস
একটা বুনো ছাতিমের গাছ উৎসের সন্ধানে
প্রায়ই ঝুকে আসবে বুড়ো রেলটার কাছে
কিন্তু মানুষের ভিড়ে বগিতে জায়গা হবে না জেনে
. প্রত্যেক দিন পাতার পর পাতা উড়িয়ে দেবে
এভাবেই একদিন একটা পাতা
পৌঁছে যাবে সুন্দরবন
সমস্ত দিন উড়ে উড়ে
একটাও ছাতিমের দেখা পাবে না!
কেবল সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে
গাঢ় অন্ধকারের বুক চিরে বেরিয়ে আসবে
. পারমাণবিক আলো!
যেখানে একদিন দাপিয়ে বেড়াতো
আমাদের
জাতীয় পশু-প্রতীকের বাস্তব অস্তিত্ব!
শুধুই জাদুবাস্তব দৃশ্য নয়
বুনো ছাতিমের নিচে দুটো মেয়ে
একটা নিতম্বসদৃশ বাতাবিলেবুর সৌন্দর্যে
আত্মজৈবনিক-বাণমগ্ন হয়ে উঠলে
নীল জ্যাকেট আর খয়েরি-ছাইয়ে মেশানো
হ্যাট চাপিয়ে একটা হ্যাংলা পাতলা লোক
ওদের বাতাবিলেবু ছিনিয়ে নেয়!
লোকটা কামুকের হাতে হাত চালালে
নিমিশে বাতাবিলেবু বিস্রস্ত কাঁচুলিসর্বস্ব হয়ে যায়
মেয়ে দুটো কামব্রীড়ার শঙ্কায়
লাল থেকে খয়েরি হতে হতে শালিখ হয়ে ওঠে!
লোকটা বাস্তুঘুঘুর মতো ঘুরতে ঘুরতে
শীৎকারের ধ্বনি তোলে!
তবুও বসন্তবার্তা
একঝাক বোগেনভিলিয়ার কাছে আমি
. বসন্তের বার্তা পাই!
অথচ পলাশ, শিমুল, কৃষ্ণচূড়া, ডালিয়া, চাঁপা আর নেই এখানে!
নেই আমাদের পুরনো কোকিল!
ভাটার অঙ্গারে আমাদের শহর পুরুষ্ট
সীসা আর কার্বন দখল নিয়েছে নাগরিক জীবন!
মধ্যবিত্তের জীবনে নেই আর অবকাশ
আগন্তুক কর্পোরেট বাণিজ্যের কাছে
ক্ষুধাও পণ্যের প্যাকেজে আনন্দের গান গায়!
বসন্ত, প্রেম, চাঁদ, প্রকৃতি…সনাতন যা ছিল সবই গেছে!
শুধু দেখি আমাদের অবশিষ্ট অলস দুপুরে
একটা পোস্ট-বাক্স বন্ধ জানালায় ঘুমিয়ে পড়েছে
ইচ্ছে হয় তাকে বলি এবার আমার বার্তা দাও!
চন্দননগর
এখানে চন্দনবনে মানুষের ভিড়ে
. চিতা ও চিল গেছে নির্বাসনে
গাছে গাছে অবিকল মানুষের গন্ধ!
পাখিরা হারিয়েছে অন্বেষণের জল
ছাইপোড়া বিষে থেমে গেছে পতঙ্গজন্ম
নেই কোনো অভিস্রবন, বীজদের সিম্বায়ন!
প্রকৃতির এমন অস্বেচ্ছাকৃত রূপান্তরে
মনে হয় এ বন নয়, আছি এক চন্দননগরে!
দুর্গাপুর আমাকে ডাকে
দুর্গাপুর আমাকে ডাকে
সেখানে শালপাতার থালায়
দুপুরের ভাতে ধূয়ো উড়ছে
রোদে পোড়া সূর্যকলি মেয়ে
ডগর আঙুলের আদরে
সাজিয়েছে মহুয়ার তারি
মেয়েটির সুডৌল শরীরের
ছায়ায় কুঁদফুলের গন্ধ লুকানো
আঁচলে বসন্তের মেঘ লেগে আছে
দুর্গাপুর আমাকে ডাকে
আমি ব্যাগ ভর্তি রোদ নিয়ে
‘হূল’ ধরে যাচ্ছি এবার দুর্গাপুরে!
ভবের বাজার
মগডালের সারসের সঙ্গে গুলবাজের বন্ধুত্ব!
সারস জানে না মানুষ কী বা কে
শুধু চেনে গুলবাজ বন্ধুকে
কেননা পৃথিবীতে নেই আর ব্যাধ ও বেদের ভাষা!
মাছ ও কথায় গুল খেতে খেতে
একদিন প্রকৃত সারস গুলবাজের পায়ে পায়ে
ঝুলতে ঝুলতে বাড়ি যায়…
সারস জানে না তবু আগামীকাল ও যাবে
মানুষেভরা ভবের বাজারে!
কবি ও সমুদ্র
বাগানের এক চিলতে পরিশরে
ইট, কাঁকড় আর পাথুরে জমিনে
একটা নীল সমুদ্র ছুটে যাচ্ছে
. হাইড্রেন্টের ঢেউয়ে!
কবি ডুবে যাচ্ছে সমুদ্রে…
সৈকতে কতিপয় বালিকা
বেলুন খেলায় মগ্ন!
নীল জলে ভরা সমুদ্র
ছুটে আসছে হাঙর…
জন্মবধির চিৎকারে কবি
. বাঁচতে চায়!
পাখিরা উড়তে থাকে
. দিগ্বিদিক
হঠাৎ হাইড্রেন্টের জল কমে এলে
কবি সমুদ্র থেকে উঠে দাঁড়ায়!
বালিকারা অপার বিস্ময়ে
প্রদীপের মতো দেহ নিয়ে
তাকিয়ে থাকে কবির দিকে।
বিকেল কিংবা তুমি
এই একটা বিকেলে এসে দাঁড়াতে
অসংখ্য বিকেল পেরিয়ে আসতে হয়েছে!
কতো বিকেল শুয়ে আছে আমার হৃদয়ের কন্দরে
ছাতিম গাছের ছায়া, হালকা মেঘের আলো
রিকশায় বসা দুজন
দেখছে শুধু কাক, পেছনে বন্ধুর ছায়া,
আলৌকিক নেকাবে ঢাকা আমাদের মুখ
. সবই আছে বিকেলগুলোর গভীরে!
এই একটা বিকেলে এসে দাঁড়াতে
অসংখ্য বিকেল পেরিয়ে আসতে হয়েছে তোমার কাছে
০২.
বিকেল একটা মুহূর্ত
বিকেল একটা স্থান
বিকেল একটা বয়স
বিকেল একটা স্বপ্ন
অথচ বিকেলের মুখোশ খুলে বসে আছো তুমি
স্নিগ্ধ আলোরাঙা মুখে আসলে তুমিই বিকেল!
০৩.
আমি হৃদয় ভর্তি বিকেল নিয়ে ঘুরে বেড়াই
এক বিকেলে সন্ধ্যা নদীর জলে
আয়না ভেসে ওঠে যদি
সেই বিকেলে হৃদয় খুলে দেখিয়ে দেব
. তোমার ছবি
কেমন করে আমার ভেতর বিকেল হয়ে
গড়িয়ে গেছে সন্ধ্যা নদী!
সম্মতিনামা
বর্ষা আসলে একটা নদী
মস্তকে স্নানের মন্ত্র নিয়ে বর্ষার কাছে আসো যদি
. উমে-ভরা পালক খুলে বুকে তুলে নেয়
ওর শরীরের অগ্নিগিরির লাভাময় কামজ অঙ্গারে
শত কার্তিকের ময়ূর নাচতে নাচতে ফসিল হয়ে ওঠে!
বিকলাঙ্গ বীর্যের ফেনায় ঘুমিয়ে আছে হাজার গৌতম!
বর্ষা আসলে একটা নদী
ওর অলোক জলে পূর্ণরমণস্নাপনে আকাশ ও
. মেঘের মিতালি!
বর্ষা আসে যদি
ও নদীর জলে বোধিপূর্ণস্নানের আগে
. ওর কাছে সম্মতি নাও
বর্ষা আসলে একটা নদী
ওকে জোর করে প্ররোচিত করো না সিঙ্গারে
নদীর লাভায় বহূ কার্তিকের ময়ূর মরে গেছে!
নারিকেলজন্ম
ভাতঘুম থেকে উঠেই মনে হলো
আমি একটা
পুরনো নারিকেল
জন্মের সম্ভাবনায় জল ও
জন্মফল বুকে নিয়ে
ঝুলে আছি হাওয়ার সমুদ্রে
আমার চারপাশে কচি ডাবগলো
লবণবুকে দুলতে দুলতে
চলে যাচ্ছে সুখী মানুষের বাড়ি!