দেবতার দুঃখ কষ্ট
ঝড়ের সে দিনকাল নেই
সব বক বহুদিন আগে মারা গেছে,
ঝড়ে পড়ে মরে যাবে
ইদানিং তেমন কোনো অধার্মিক বক আর নেই
সব বক ধার্মিক হয়েছে।
অবশিষ্ট ছিল যত ফর্জি ফকির
ইদানিং তারা সব ফিকির বদলেছে
বকের ব্যবসা ছেড়ে তারা সব সখের বাজারে।
ঝড়ে ভারী বেগ, প্রচণ্ড আবেগ দিয়ে পরিশ্রম করে
ঝড়ের সঙ্গে বিপর্যয়বিহারের সুচারু চালনা
শৌচাগার কারাগার উদ্বোধন সমস্তই শিল্প বিষয়ক
গণতন্ত্রের বীজমন্ত্র সোহাগ দক্ষিণা
নাহলে ঝড়েশ্বরে মেলা মার খাবে।
উড়ে যাক পুড়ে যাক বকে যাক যক্ষ খড়কুটো
স্থূলকায় মধ্যপদলোপী বলে পোস্টার পড়ুক
পৃথুল ও পরাক্রান্ত বটে কিন্তু জাতে পরজীবী
তাই মাভৈ মাভৈ
ধৃত ক্রীত ভীত
শীর্ণকায় ভিজে ভদ্রলোক
সব্বাই শিল্প সচেতন ।
আগে ছিল অন্য আরাধনা
ঝড় শুনলে গড় করতো লোকে
মানত করতো মন্দির তলায়
পাথরে ঢিবিতে।
ঝড়ের পরে দেখা যেতো সব অলৌকিক :
খড়ের চাল উড়ে গেছে, মন্দির-কোটরে পাখি নেই
ভিক্ষাঝুলি বাবুই বসেরা
একসঙ্গে দূরে পড়ে আছে
চাতালে সাধুর শব শিবনেত্র
চৌকাঠ ছুঁয়েছে বেনোজল,
কিছু উঁচু মন্দিরে ঢোকেনি
প্রলয়ে ঈশ্বরপুর ডুবেছে, ডোবেনি কেবলমাত্র
অস্পৃশ্য দেবতা।
এখন তো ঝড় ঘুরে গেছে ।
ইদানিং এমনিতেই দেবস্থানে মন্দলোকে যায়
পোড়ো পঞ্চবটী আর মন্দির পড়েই থাকে
পূজাহীন , পর্যটকে ভরা।
দেবতার দুঃখ কষ্টে মানুষের মাথাব্যথা নেই।
ঘুমে প্রেমে লোকেশনে
(তরুণ মজুমদারের যাওয়া তো নয় যাওয়া)
যাওয়া মানেই তো একেবারে চলে যাওয়া নয়
একেবারে চলে যাওয়া নাও হতে পারে
সবাই যাওয়ার জন্য আসেও না।
কেউ কেউ একেবারে চলে যায়
কোনও দিন আর ফিরে আসে না।
ভিন্ন রুটের গাড়ি ধরে যে গাড়ি মানুষ চড়ে না
কারও কোনও ঠিকানা রাখে না।
কিন্তু কারও কারও যাওয়া আসা চলতেই থাকে।
লম্বা সফরে
জংশনে ট্রেন বদলের ছলে
কেউ কেউ গাড়ি বদলায়
খুঁজে পাওয়া ইস্টিশান এলে নেমে যায়।
সেখানে অন্য ট্রেনে
অন্য এক প্রাচীন লাইনে
হেরিটেজ রেলে চেপে
সোজা দার্জিলিংয়ে।
সেইসব খেলনা রেলের কোচ
দাঁড়িয়ে
বোঝা যায় শুধু তার জন্যে
বহুক্ষণ অপেক্ষায় থাকে
দিন কাল রাত্তির দুপুর হয়ে যাক
সময় অনিত্য এই টাইম টেবিলে।
ঘুম থেকে পাহাড়ের পাকদন্ডি পাকে
মেঘমন্দ্র সকাল পড়ে থাকে
কার জন্যে ঘুম ভেঙে দেখে রাত অনর্গল
ঝর্ণার শব্দ আসে আরও ওপরের
কুলকুণ্ডলিনী থেকে
আরও উঁচু টিলার ওপরে ইস্টিশান
কেউ তার নাম জানে না।
তবু কেন যে নিষেধ জারি করে
জানা নেই, শোনা নেই, অদেখা অচেনা
তবু কেন লাল লেখা: ‘যাওয়া মানা,
গেলে কেউ ফিরে আসে না!’
মানুষের বিচিত্র কারিকুরি
সব করে তবু শুধু শুধু
যূপকাষ্ঠে চড়িয়ে ঈশ্বরের
টিকি ধরে টানে।
ওই লোকেশনে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন
এত মনোরম মাধুরী অপার
কখনো কি একা দেখা যায়?
আতঙ্কের লালচিহ্ন দেখে থামা নেই
এগিয়ে গেছেন
এখানে জমাট মেঘে ঘুম নেই
পিয়ানোয় কী আবহে বিষাদ ভৈরবী,
ভাবছেন।
কিংবা দেশ, ঘন মেঘে রাত মনে হলে
মিয়াঁ কি মল্হার
বর্ষায় মামুলি মল্লার নির্বিকার
সবাই বাজায়
তিনি সেই দলে নেই, আদলেই নেই।
অনলে আনত।
পুড়ে পুড়ে এতদিন ধরে এত দূরে আসা
তারপরে কতগুলো ছাই কী পোড়াবে ?
ক্যামেরার চোখে মেঘ নেই, তবু ধোঁয়া
ধোঁয়ায় নিষিক্ত এত প্রেম!
এত মেঘ পৃথিবীতে আছে!
ডাকলে না!
একটু দাঁড়াও
আমি স্বপ্ন দেখছি
এই সারণিতে কোনো ছায়া নেই
তরুময় মরূদ্যান
একাকী উড্ডীন
মায়াহীন সঙ্গীহীন
সময়ের সবুজ পতাকা।
ঘুমঘোরে ওড়ে
নীল পাহাড়ের প্রান্তে দেখা
জন্মহীন জীবনের ভ্রান্তির কালিতে আঁকা
চেনা চিল।
এত প্রিয় ছবি একা
এতবার এইভাবে দেখা !
এত ক্লেশে পেলে তাকে
তবু আমাকে একটিবার ডাকলে না?
ভিক্ষা দেয় বিক্ষত মানুষ
ঈশ্বর কি তার কাছে হাত পাতে? ভিক্ষে চায়?
মানুষই সতত ভিক্ষুক।
জলছবিগুলো সব এতদিন এলোমেলো ছিল
একে একে সব দুঃখ সহজ হয়েছে
রঙে রসায়নে অন্তসার পরম বিধাতা
সমুদ্রের স্বচ্ছ জলযানে
সমাপন এত অনায়াসে!
দূরগামী আলোকবৃত্তের
কাছে যাওয়া ফিরে আসা
আবার ফেরার রাতে
নিঃসার সারাংশ সার পারাপার
নিরাশ্রয় স্বপ্নের সম্পাতে একবিন্দু আলো নেবে বলে
এতক্ষণ একলা দাঁড়ালে!
যত আলো জ্বেলে রেখেছিলে
ফুরালো কালোর কশাঘাতে,
তাকে তুমি আঘাত বোলো না।
এ যে প্রেম পরাভব
পরিত্যক্ত পৃথিবীর প্রথম শিশুর দেহে জন্মদাগ
পরান্নে পালিত নিঃস্ব নেশা
অমানিশা ঘোর
মানসরোবরে ভাসা নীলপদ্ম
সদ্য দেখেছিলে
সত্য বলে ভেবেছিলে
পেয়েছিলে শূন্যপ্রাণ
পূর্ণকল্প নির্বাণের হীর
তেরো নদীতীর থেকে ভেসে আসা জলদগম্ভীর
সুরে মীড় মেদুরতা
কৃন্তনে ও কার মুখ দেখেছিলে
যে ডাকে মুগ্ধ দুঃখনীড় ভাসে
ভেসে যায় শিবরঞ্জনীতে
তাকে তুমি ঠিক চিনেছিলে?