ফিরে আসি সিনথেটিক শহরে
সবুজ কচি পাতা সুধালো আমায়, কেমন আছো?
পাহাড় চূড়ায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা অজানা বৃক্ষ, করুণ চোখে তাকালো আমার দিকে। মারমা তরুণীর চোখে এ কোন পৃথিবী? অত শান্ত কেন তার চোখ!
মেদহীন ঋজু দেহখানি যেন ধুলোপড়া জনজঞ্জাল থেকে পালিয়ে বেঁচে আছে কতকাল।
তার চোখ যেনো দেখেনি কোনো হিংস্রতা; তার কোমল ঠোঁট পান করেনি প্রতারক গরল। গাল বেয়ে নেমে যাওয়া স্রোতে একগোছা চুলের নহরে শুয়ে থাকতে চেয়েছিলাম কি কোনোদিন!
সিনথেটিক শহরের মানুষ আমি, প্লাস্টিক শহরের সভ্য আমি; সবুজ কচি পাতা মনে করিয়ে দিয়েছিল এইসব। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়ি বৃক্ষ বলেছিল আরেক পৃথিবীর গল্প।
আমার শরীর ভর্তি পোকার মতো কিলবিল করে শহুরে ধুলো-ময়লা, লাল-নীল বাতির মতো কলঙ্কের নোনতা ইতিহাস। যুদ্ধ, হত্যা, ধ্বংস, মৃত্যু আমার পোশাকের পরতে পরতে।
আমি তাকাতে পারি না পাহাড়ি মেয়ের সবুজ চোখে, ঝরনার কলস্বনে লুকোতে চাইলাম আত্মক্রন্দন! ধুয়ে ফেলতে চাইলাম শহুরে শরীরে লেগে থাকা পাপের চিহ্ন যত।
আমি পালিয়ে আসি ওই সবুজ কচিপাতার থেকে, স্থির বৃক্ষের থেকে, মারমা তরুণীর থেকে; ফিরে আসি বহুকাল বাজেয়াপ্ত সিনথেটিক শহরে।
ঘাসের কাহিনী
ঘাসের মৃত্যু হয়েছিল যেখানে, সেখানে ফুটে উঠেছিল পথের রেখা; মানুষেরা এভাবেই তাদের পদচিহ্ন রেখে যায় প্রতিদিন।
বিষপাত্র হাতে নিয়ে অপেক্ষা করা যায় না, অথবা সময় ফুরোলে মানুষ হাতে তুলে নেয় কাঙ্ক্ষিত মুক্তিসুধা! এইসব কথামালা তর্কের টেবিলে ঝড় তোলে প্রতিদিন।
পাখির মৃত্যুশোকে চিয়ার্স বলে চুমুক দেওয়ার বদলে ডুকরে কেঁদেছিল সরাইখানার মাতাল।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, আপনি হয়তো জানেন না, মানুষ এখনো কাঁদতে জানে! ঘাসেরা এখনো বেঁচে ওঠে প্রতি বরষায়।
হিম ঘরে চাঁদের শয্যা
হিম ঘরে ঘুমিয়ে আছে চাঁদ; যেখানে আকাশ ছিল গতকাল, সেখানে আজ একটা মস্ত ফাঁকা। ঈগলের ডানায় শুয়ে থাকা মেঘেরা খুঁজে খুঁজে হয়রান, কোথাও অবশিষ্ট আকাশ নেই! কেবল চারপাশজুড়ে একখণ্ড অখণ্ড শূন্যতা!
মৃত্যুর ডানায় চড়ে পাড়ি দেয়া মেয়েটি চোখ বুজে থাকে অভিমানে, নাকি ঘৃণায়! নাকি, ডোম ঘরের জানালায় ঢুকে পড়েছে নষ্ট পৃথিবীর আলো!
ডোমের হাত কাঁপে রোজ, নেশায় চুর হয়ে থেকে ভুলতে চায় মৃত মানুষের ব্যবচ্ছেদ। অথচ খুনিরা, অথচ ধর্ষকেরা; অটল থাকে একটুও না কেঁপে! একটুও না টলে!
কে কার জন্যে
ফুলের দিকে ঝুকে যেতে যেতে দেখলাম, প্রতিটি পাপড়ি ঝুকে আছে আমার দিকে। বৃক্ষের দিকে তাকাতেই দেখি, সে আমারই জন্যে অপেক্ষমাণ। নদীর কাছে যেতেই বললো চলো, বলেই সে ছুটতে শুরু করলো; যেন সে স্থির ছিল আমারই জন্যেই।
অথচ, আমি তোমার দিকে ঝুঁকে যেতে যেতে মনে হলো গোলাপের দিকেই ঝুঁকে আছি। তোমার সামনে দাঁড়াতেই মনে হলো বৃক্ষের সামনে দাঁড়িয়েছি। একটু ছায়া, একটু শীতলতার জন্য বহুকাল অপেক্ষমাণ।
তোমার দিকে ছুটে যেতেই মনে হলো, নদীর দিকেই ছুটছি। আর তুমি স্রোতের মতো বয়ে যেতে যেতে আমাকে বুঝিয়ে দিলে—নদী শুধু ভাসিয়েই রাখে না, ডুবিয়েও টেনে নেয় তার আপন সত্তায়।
থানকুনির বন মরে ধুতুরার বিষে
নাগরিক অমলেটে অস্ত গেছে সূর্য!
না হলে নগরজুড়ে অতো অন্ধকার!
গলিঘুঁজির মধ্যে এমন ভয়!
এতটা শ্বাপদসংকুল কেন তবে এই ভিড় কোলাহল!
পথজুড়ে নৈশযাত্রীর ভোর কেন এত অনিশ্চিত!
অন্য অনেক কিছুর সাথে কেন কেড়ে নেবে প্রাণ!
অমলেটের পিরিচে শুয়ে আছে রোদ।
কমলা রঙের সূর্য আটকা পড়েছে যেন কতকাল!
মানুষেরা দিব্যি খেয়ে নিচ্ছে সূর্য!
প্রতিদিন অজস্র আলো লুটিয়ে পড়ছে নাশতার টেবিলে!
মানুষেরা কাটাচামচে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে প্রত্যেক সকালে খেয়ে নিচ্ছে আলো!
প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই মৃত্যুসংবাদ!
অজস্র প্রজাপতির, অজস্র ঘাস ফড়িঙের আত্মহনন!
কতগুলো সাজানো মিথ্যাকে স্বীকার করে নিয়ে যারা পরিদের গল্প ফেঁদেছিল
তাদের চোখে ছিল পাহাড়পোড়া মাটি
তাদের হাতে ছিলো মাংস কাটার ধারালো ছুরি!
নইলে ছেলেটা কেনো অমন পাগলাটে স্লোগান ধরে!
জীবন বাজি রাখে হারের জুয়ায়!
টার্মিনালে অন্ধ গায়ক কেন অমন ধরেছে সুর…
…বিষাসক্ত মানুষেরা মজে আছে কিসে!
থানকুনির বন মরে ধুতুরার বিষে…