জলজ দহন
আঙরার তাপে যেটুকু তপ্ত হয় গতর
তারও বেশি তাপ ভালোবাসায়
গাঙের পানিতে আঙড়া নেভে
চোখের জলে ভালোবাসা ক্রমশ
জ্বলে জ্বলে ওঠে
ঘাসফুল তোমার সাথে।
জল দিয়ে ঘেরা
জলের ফ্রেমে আটকে আছে সময়
একটু ভালো থাকার জন্যে মানুষ কতো কিছু করে
অথচ মাছেরা দিব্যি ঘুরে-ফিরে…
মনের সাথে যুদ্ধ, দিগ্বিদিক ছুটে চলা
মিথ্যা আশ্বাস, পুঁজিবাদী বিশ্বায়ন
শান্তির গুলিবিদ্ধ দেহ, বুটের তলায় পৃষ্ট অধিকার
দেখে দেখে ক্লান্ত দুচোখ-মন
ভালোবাসা গিলে খায় বিশ্বাসের শেষ শব্দটি
ফেরারি চোখ খোঁজে ফেরে সাত্ত্বিকের উৎসবের রাত
পশুবলি, অলৌকিক বেঁচে থাকার মানে!
বৃষ্টিসমাচার
অনেকদিন দুজনের একসাথে বৃষ্টি ভেজা হয় না
হয়তো হয়, তার খবর কে রাখে?
সময় আমাদের জানতে দেয় না, কিন্তু
বৃষ্টি তো জানে
সে কেন আমাদের ছুঁয়ে যায়
সময়ে-অসময়েÑজানে আসমান
ঘরের খবর পরে জানে, অথচ
জানা হয় না তোমার-আমার
বৃষ্টি এলেই তোমাকে মনে পড়ে
হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে যাই জলকণা
তুমিও বৃষ্টির রাতে আমাকে ভাবো
আবিষ্কার কর অন্য তোমাকে-আমাকে
অথচ বৃষ্টি তা জানে না
জানে না আমিও কেন বৃষ্টি ছুঁয়ে যাই
তুমি তো জানো, তবে এক্ষুণি চোখ বন্ধ করো
চলো আজ দুজনে বৃষ্টিতে ভিজি।
সরল রেখা
অন্ধকার ঘর
দুজন মানুষ
একটা মন
মাঝে মাঝে জ্বলে উঠছে আলো
দরজা বন্ধ
চারকূলে ছড়িয়ে পড়ে জীবনের গন্ধ
একটা গান অবিরাম বেজে চলে
‘আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ
তুমি জানো না…’
এলোমেলো ঘর
উত্তাল সময়
বন্ধ চোখ
দীর্ঘশ্বাস
গান বেজে চলে অবিরাম…
আলোর দিকে
ঋষিপাড়ায় নেমেেেছ ঘুম।
জেগে থাকে শুধু রাত।
তিতাসের ঢেউ স্বপ্ন আঁকে কিশোরীর নীল চোখে
আহা জলের নগর, শরীর ভরা বিষের কাঁটা!
কেন তবে এই রাতে হানা দিলি মাঝির ডেরায়
বুনোহাঁস ভেসে যায়, ঢেউয়ে-ঢেউয়ে
কলমিলতার ঘ্রাণে দুলে ওঠে ক্লান্ত ডানা তার।
তিতাসের এলোচুলে বিলি কাটে সোনালি সকাল।
সাহস
তোমার অগ্নিহাসি নেচে ওঠে
নো-ম্যানস ল্যান্ড বিক্ষত করে উড়ে যায়
গুটি কয়েক জলপাইকাক, উড়ে যায় স্বপ্ন
গাজির বাজার হয়ে পাড়ি দেয় বিষণ্ন সকাল
সারি-সারি ট্রাক বোঝাই পাথর বালি
তোমার হাসিতে ম্লান হয়ে রয় একটি সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা
গুলিবিদ্ধ হওয়ার ভয়ে স্তব্ধ নো-ম্যানস ল্যান্ড।
হঠাৎ
একদল পায়রা গেয়ে ওঠে জাতীয় সংগীত।
তোমার অগ্নিহাসিই আমি।
অপেক্ষা
তোমার সুতীক্ষè কঙ্কনের আঘাতে
আসমানের চোখ বেয়ে অবিরাম রক্ত ঝরছে
সমুদ্র-হৃদয়ে ঝড় উঠছে—
সবুজপাতা খসে পড়ছে নিমিষেই
তবু
জেগে আছে বৃক্ষ
গান গায় সকালের পাখি
রাতে মাঝি
ফসলের মাঠে অসহায় কৃষক…
দেয়ালের প্রচ্ছদ
মাঝে মাঝে মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে
তোমার উষ্ণতা খুঁজি—
দেয়ালের প্রচ্ছদে প্রচ্ছদে
তোমাকে পাই না বুকে
দেখি তাল-তাল দুঃখ ছুটে আসে হায়েনার মতো
আমি ডুবে যাই তোমার চোখের কালো
মমির মতোন গাঢ় অন্ধকারে।
ডুবে যেতে যেতে ভাবি—
যুদ্ধের হুমকি বেশি উত্তাপ ছড়ায়
না কি সমরাস্ত্রের ঝনঝনানি?
তোমার বুকের ঘ্রাণ মাখা ঝরনার জল দেখি
উষ্ণতা ছড়ায়—আগুনের চেয়ে বেশি।
মাঝে মাঝে মাধ্যরাতে ঘুম ভেঙে গেলে
অসহায় মানুষ দেখি, দেখি শিশুদের মুখ
নদীতে ধীবর, খামারে কৃষক
আর ওই আদিগন্ত অন্ধকার স্বার্থপর রাত।
দ্বৈরথ
পুরনো বইয়ে হাত বুলিয়ে ফিরে পেতে চাই
দুরন্ত কৈশোর!
গড়িয়ে দুপুর নামলে বিকেল শান্ত পুকুর জলে
লাগল কেমন স্মৃতি রোমন্থন?
হায়রে আমার রঙিন বিকেল—বাঁক ভুলেছে নদী
আমিও তোমার নাগর ছিলাম মাতাল নিরবধি।
শহর
আলো-অন্ধকারে যারা হাঁটে, গান গায়
কথা বলে ফিসফাস
অনাকাঙ্ক্ষিত জন্মের দাগ মনে পড়ে তাদের কথায়
রক্তের ভেতর জাগে ঘৃণার অতীত
ফেলে আসা জন্মভিটা—ভেসে ওঠে স্মৃতির পাতায়
তবু ফিরে যেতে চাই না সেখানে
ডুবে থাকি এইখানে—বিষণ্ন শহরে
শিশার মতোন তপ্ত চাঁদ, জন্মদাগ দেখে দেখে।
কবি পরিচিতি:
শরাফত হোসেন
জন্ম ১ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।
প্রকাশিত কবিতার বই
‘ঘাসফুল তোমার সাথে’ (২০১১),
‘ফিরে আসি কাচের শহরে’ (২০১৫)