বিসাপের পেয়ালা
রাকিয়া তোমার নাম! সে এক অতীত বটে
তোমাকে করেছি পান তলাসহ পূর্ব ইউরোপের পাহাড়ে বসে ইসমাইল কাদারের সাথে
সেই ভাঙা এপ্রিলে মৃত-বিক্ষত সৈনিকদের তাবুতে ততোধিক মৃত এক
জেনারেল মুখোমুখি, ক্যামোফ্লেজ-অরণ্য আঁধারে
সে নেশা ছোটেনি আজও
দিয়েছ কি তুলে আজ এতদিন পর কামগন্ধী হাতে
এতখানি লাল কেন কাচের গেলাস? চিনে ধাতব নাড়িয়ে
দিতেই শখের সিস্মগ্রাফে দুলে ওঠে অস্থির ইউনিভার্স
তারল্যের আনন্দ-ধাক্কায়
বিসাপের পেয়ালায় ঘোরে তিন পৃথিবী, একটি ডুবে আছে প্রগাঢ় লালের নিচে।
পাতা ঝাঁঝি
এটি খুব সাধারণ এবং পুরনো গল্প
আপনারা সবাই প্রেমের দেবী ভেনাসের কথা জানেন, গ্রীকদের কাছে যিনি
যৌনতার প্রস্ফুটিত গোলাপ, আফ্রোদিতি
মর্ত্যের মানুষ এডোনিসের সাথে হয় গভীর প্রণয় স্বর্গের দেবী ভেনাসের।
কবি অভিদের সাথে আরও একজন
দেখে ফেলে সেই অসম মৈথুন ফলৈ-ওক অরণ্যের
স্যাঁতস্যাঁতে নরোম কাদায়
পাপরতির মূক-সাক্ষী অতি ক্ষুদ্র এক তৃণ
আতঙ্কে-উৎকণ্ঠায় হঠাৎ পায় মানবকন্ঠ।
ফলৈ-ওক অরণ্যের নরম কাদায়, পাপবোধে মূর্ছা যায় ক্রন্দনরত সেই ক্ষুদ্র তৃণ।
মৈথুনক্রিয়া শেষে ক্ষুদ্র তৃণটিকে কোলে তুলে নেন দেবী, দেন স্বীয় যৌনাঙ্গের বর।
ভেনাসের যোনি নিয়ে ফুটে আছে পাতা ঝাঁঝি শহরের প্রতিটি শোবার ঘরে
প্রতিদিন ফাদে ফেলে গিলে খায় অজস্র ভ্রমর।
ত্রিশটি আপেল
ত্রিশটি সপ্রাণ আপেলের সাথে আজকাল সখ্য গড়ে উঠেছে আমার
অরিয়ানা ফালাচির বিতর্ক ছাপিয়ে ওরা
মাঝে মাঝে ত্রিশ লক্ষ হয়ে যায়।
শৈশবের আদুরে স্বভাব ছেড়ে গুটি বেঁধেছে কৈশোরে,
কোনোটা সবুজ, কেউ লাল, আবার কারো গা থেকে ঝরে পড়ে স্বর্ণালি সুন্দর।
ওদের সতেজ সভাটিকে মাঝে মাঝে মনে হয় জ্যাকসন হাইটসের সম্প্রীতি
বহু বর্ণের নির্ভয় কিশোরীদের অবাধ হাঁটাচলা
বুকে সাহসের সহাস্য আপেল
আর ওদের চুমুকাঙ্ক্ষিক ঠোঁটে অবিভক্ত পৃথিবীর হাসি।
প্রতিদিন সকালে ওদের সাথে আমার নিয়ম করে
অতীব গুরুত্বপূর্ণ কিছু আলোচনা হয়
ওরা আমাকে জানায় ওদের গোপন পরিকল্পণার কথা
ভালোবাসার প্রত্যয় নিয়ে ওরা স্ফীত হতে থাকে প্রতিদিন।
কিন্তু আমি জানি ওরা প্রস্তুত বিস্ফোরণের জন্যেও।
ঘামসূত্র
দুপুর রোদে রিক্সাশ্রমিক পায়ে পায়ে প্যাডেল মেরে
সেলাই করে পিচঢালা পথ
সেলাই করা পথের ওপর ফোটা ফোটা ঘামের কষ্ট
ক্রোধ এবং কামের কষ্ট।
ঘামসূত্রের এই ইতিহাস কেউ লেখে না।
সুঁই শ্রমিকের মিছিলগুলো কি কষ্টের এক আওয়াজ তোলে
সকালবেলা
পায়ে পায়ে পা বাড়িয়ে অন্ধকারের রাত ভেঙে দেয়
মিছিলগুলো
সেলাইকলে উপুড় হয়ে স্বপ্ন বোনে সেই মেয়েরা
ফোটা ফোটা ঘামের স্বপ্ন
প্রিয় কোনো নামের স্বপ্ন
ঘামসূত্রের এই ইতিহাস কেউ পড়ে না।
আমিওতো ব্যস্ত পায়ে এপার-ওপার সেলাই করে
জুড়ে দিলাম কতটা পথ খরতাপের দুপুর রোদে
সেলাই করা পথের ওপর ছন্দ খুঁজি
ফোটা ফোটা ঘামের ছন্দ
ডানের এবং বামের ছন্দ
ঘামসূত্রের এই ইতিহাস কেউ জানে না।
কেরোসিন নেশা
কেরোসিন খেলে নেশা হয় নাকি, জানেন মাসুদ খান
কেরোসিন গিলে নেশার জগতে হয়েছিল উত্থান
আজকাল আমিও দুয়েক ফোটা কেরোসিন করেছি শুরু
আগেই বলেছি এ নেশায় মাসুদ খান ভার্চুয়াল গুরু
পাওয়ার প্লাগ ইন করে মেয়ে বসে আছো তুমি ‘অন’
কেরোসিন নেশায় আমার হয়েছে পাসওয়ার্ড বিস্মরণ
আইডিটাও ভেসে গেছে আজ ঘোরের অন্ধকারে
বুঝেছো কিছু, স্মৃতির সাথে হয়েছে দ্বন্দ্ব কার-এ?
পাসওয়ার্ড ছাড়া নির্জন রাতে কী করে তোমাকে খুলি
বড়জোর ক্লিন করে দিতে পারি বাইরের কালি-ঝুলি
মধ্যরাতের ভেনাস তুমি, হাতে কেন ধরা দ্রোণ
এক্ষুনি বুঝি বাজাবে তোমার মেজাজের রিংটোন
আমিও আজ তৈরিই আছি কেরোসিনে ভরা দেহ
জ্বলে উঠতে শুধু একটি দেশলাই কাঠি লাগে
শোন মেয়ে বলি একটি কথা বিস্ফোরণের আগে
পাসওয়ার্ড নিয়ে তৈরি হয়েছে দ্রৌপদী সন্দেহ।