ঘরমুখো ঘনমেঘ
বৃষ্টি নামবে কাল, আজ হোক আকাশ সাধনা
যারা যাবে নদীকূলে তারা হোক তোমার দোসর
কেহই আপন নয়, কিছু নয় বিলাসী স্থাবর
পথের পাতার কাছে জমা থাক সব লেনা-দেনা।
পড়ন্ত আগুন দেখো লেগে আছে বৃক্ষসভায়
হলুদ-লালের মাঝে থীর হয়ে মাস নভেম্বর
শীতের স্বতন্ত্র স্বরে পাতাদের উষ্ণ ছায়ায়
ঘরমুখো ঘনমেঘ খুঁজে তার গন্তব্য প্রান্তর।
মানুষও গন্তব্য খোঁজে,তুষারে- তৃণের সমীপে
যারা আছে প্রতীক্ষায় পরখের ইতিহাস পড়ে
অথবা নগরে যারা-আর যারা বাস করে দ্বীপে
রঙ রেখে যায় তারা,জীবনের মহাকাশ জুড়ে।
আবার বৃষ্টি এলে ছাতাহীন তুমি-আমি মিলে
কথা থাক- ঘাটে যাবো,নৌকো’টি ভরে দিতে ফুলে।
অভিন্ন উত্থান এসে
আমাকে জিজ্ঞেস করে জমে থাকা বেদনার বিষ-
আমাদের সাথী করে আসলেই তুমি নাকি সুখী
আনন্দে হেসে উঠি,ব্যথাগুলো দিয়ে যায় উঁকি
আমাকে বরণ করে পুষ্পিত মদের আমিষ।
তারপর চলে যাই পুনরায় শুদ্ধ অন্ধকারে
যেখানে তোমার ছায়া পর্দায় প্রযোজিত হয়
বৃষ্টির রেখাপাত ধরে রাখে অমিয় সময়
অভিন্ন উত্থান এসে কড়া নাড়ে স্মৃতির দুয়ারে।
দরোজাটা খুলে দিই,চেয়ে দেখি স্বপ্নের স্রোত
রক্তাক্ত দেহ নিয়ে পড়ে আছে আলোর ফটকে
পরাজিত মানুষেরা এভাবেই রোজনামচা লেখে
সাদরে সামনে দাঁড়ায় প্রতিদিন মৃত্যুর দূত।
বেদনাকে সাথে করে গড়ে ওঠা আমাদের ঘর
স্বকন্ঠে ঘোষণা করে- চিরদিন মানুষ অমর।
তাঁবু
স্বতন্ত্র তাঁবুর পাশে বসে আছেন ওমর খৈয়াম
নির্মাণ সমুদ্র থেকে তুলে আনা সহস্র ঝিনুক
মৌলান্ধ মানুষ এসে বিনামূল্যে এগুলো কিনুক
আবার বলেন তিনি- মানুষই তো শেষ পরিণাম।
বংশ লতিকা নয়,মনুষ্যত্ববোধ আছে যার
শুধু সে’ই স্থান পাবে আমার এই তাঁবুদের নীচে
মূর্খ আর অজ্ঞানেরা চিরকাল পড়ে থাক পিছে
গুপ্তধন সে’ই পাবে আলোজলে যে কাটে সাঁতার।
আততায়ী হতে পারে কখনও বা এই পরিবেশ
বিষাক্ত করেছে যারা সবুজের সব উপাদান
এরা তো মানুষ নয়- মুখে বুকে অসুরের গান
রক্ষার দোহাই দিয়ে হীন স্বার্থে খণ্ড করে দেশ!
ওমর খৈয়াম এসে খুলে দেন তাঁবুর দুয়ার
এসে হে মানুষ তুমি- অন্তরের প্রয়োজন যার।
অতীতপর্ব
বেগুনি আগুন পুড়ে বিনম্র জলের গুহায়
জলছবি ভেসে উঠে, আমি বলি প্রেমের সাঁতার
দিতে দিতে ছুটে যাই- চলো ওই অগ্নিলাভায়
প্রহরী এগিয়ে এসে খুলে দেবে রাজ্যের দ্বার।
জীবনের ভালোবাসা যদি হয় খণ্ডকালীন
তবে কী সিঁদুর রঙে অন্তরের সব স্মৃতি-সাধ
বনফুলে গাঁথা থাকে-, স্বপ্নের প্রহর নিখাদ
ক্রমশই সে প্রহরে হয়ে যাই নিশ্চিন্তে বিলীন।
সুখের পণব হাতে যদি যাই আদিম আলোতে
দেখবে তখন নারী-আমাদের সরল অতীত
কেমন তৃপ্ত ছিলাম- উৎসের আরশ জগতে
আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল পাপ-পূন্যের ভিত।
সময়ের অনুষঙ্গে এভাবেই পদ-পদাবলী
প্রেমের মুকুট পরে নিশীরাতে উঠে শুধু জ্বলি।
সংসারপর্ব
অন্ধ হওয়ার আগে যে মানুষ আরেকটি বার
শুদ্ধ আলোর জলে ভেসে যায় সবুজ আঁধারে
আরশের ছায়া যেন বার বার ভেদ করে তারে
সমুদ্র সন্তাপ এসে সে ছায়ায় সাজায় সংসার।
সংসারী হওয়া যায় নাকে পরে সোনার নোলক
মানুষ ভাবতে থাকে স্বর্গসুখ আর কতদূর-
অরণ্যের পানে চেয়ে কেটে যায় বিরহী দুপুর
তবুও দেয় না ধরা- কাঙ্খিত সুখের গোলক।
রৌদ্রের ডাকে যারা সাড়া দিয়ে ছুটে যায় পথে
এবং বুকের মাঝে গেঁথে রাখে চেতনার গান
তারাই পেরিয়ে যায় ক্রমাগত ধূসর শ্মশান
আবার সখ্য গড়ে- বীমাহীম জীবনের সাথে।
চিতায় চৈতন্য পেয়ে যে মানুষ সামনে দাঁড়ায়
শতাব্দীর সজীবতা ডাকে তারে-সরল ছায়ায়।
নৃত্যতত্ত্ব
কালের যৌবন জানে আর জানে হিমায়িত মেঘ
এ শহরে অরণ্যেরা চিরদিন থাকে স্বপ্নচারী
সাগরের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় জীবনের বেগ
জমাট স্মৃতির বাণী ফিরে আসে বিষাদ বিহারী।
পূর্ণিমার হাত ছুঁয়ে আলোগুলো দূরে চলে যায়
রক্তের জলকণা তারপর বেড়ে যেতে থাকে
সহস্র আঁধার নামে শতাব্দীর বিপুল ছায়ায়
নিষ্ঠুর পৃথিবী বলো- কতদিন কা’কে মনে রাখে!
নীলাভ প্রপাত জাগে,জেগে উঠে নৃত্যের ঢেউ
বেঘোর ঝড়ের কাছে বলে যায় রাতের কাহিনি
এমন আকাশ তবে আদৌ কি চেয়েছিল কেউ
অনেক প্রেমের তারা অকালেই ঝরে যায়- জানি।
নৃত্যের পসরা নিয়ে এভাবেই কালিক মানব
গৃহ থেকে গ্রহান্তরে রেখে যায় স্বপ্নের শব।
উষ্ণ আমিষ থেকে
শব্দের সন্ধানে হেঁটে যান প্রিয় পিতামহ
তাঁদের পায়ের ছাপে ভেসে যায় কাল বৃন্দাবন
আমিও খুঁড়েছি কতো শিলাবুকে সমান দহন
দেখেছি ঋতুর বীজে সূর্যের সবুজ বিগ্রহ।
জ্বলে উঠে এই ভূমে দাঁড়িয়েছি আরো বহুবার
কবির আকাশ থাকে স্মৃতিময় নিজ করতলে
ডাক দিলে কাছে আসে যদি কোনো মহান সকালে
তবেই নমিত সুখে সাথী হয় প্রেমের আঁধার।
প্রজন্ম প্রভায় তাই আমরাও বুনি কিছু বীজ
রেখে যাই দায়দেনা হাতে হাতে,নীল জলছাপে
এবং কিনার ঘেঁষে বয়ে যাওয়া নদীর আলাপে
উষ্ণ আমিষ থেকে জমে উঠা হলুদ খনিজ।
সবশেষে মিশে যাই অনাগত পথের নয়নে
এ কথা সবাই জানি আয়ু ফিরে গ্রহের বয়নে।
১২/ ১২/ ১২
বারোটি ফুলের কাছে জমা রেখে সবগুলো ভুল
বারোটি আকাশ থেকে তুলে আনি আলোর খোয়াব
বারোটি জোনাকী জানে তুমি-আমি করেছি যে ভাব
বারোটি কবিতা আঁকে সেই ছবি, প্রেমের সমূল।
বারোটি দূরের রেখা কাছে এসে বলে- লিখে যাই
বারোটি ঘুমের রাত আমাদের রক্তমাংস ছুঁয়ে
বারোটি বিরহী পাখি উড়ে যায়, পাতাগুলো নুয়ে
বারোটি মাসের ঢেউ ভালোবেসে বাজায় সানাই।
বারোটি কালের ছবি এ নগরে তারও বহু আগে
বারোটি নক্ষত্র থেকে খসে গিয়ে প্রেমিকার চোখে
বারোটি আগুনলাগা ভোর হয়ে- জলটুকু বুকে
বারোটি পদ্মের দেশে সাথী হয়ে দিনমান জাগে।
বারোটি গোলাপ হাতে দাঁড়িয়ে রবো আজ সারাক্ষণ
বারোটি উষ্ণতা নিয়ে দেবো নারী- বারোটি চুম্বন।
নেলসন ম্যান্ডেলা: ৫ ডিসেম্বর ২০১৩
আফ্রিকার আকাশ থেকে যে তারা খসে গেল আজ
একদিন তাঁর ছায়া বুকে ছিল ত্যাগী মানুষের
পৃথিবীর প্রতিপদে আলো হয়ে ধ্যান- কল্যাণের
‘স্বপ্নের মুক্তি চাই’- তাঁর কন্ঠে ছিল সে আওয়াজ।
হাত ধরে বলেছিলেন- আবার দাঁড়াও এসে পথে
এখানে আকাশ নীল, সাদা-কালো রঙের বিস্তার
মানুষ মানুষের ভাই, বৈষম্য পাবে না নিস্তার
কালো এই শিকল ভাঙো,ভবিষ্যত গড়ে যেতে যেতে।
তাঁর হাতে হাত রেখে সবগুলো সমুদ্রের স্রোত
একদিন মিশেছিল আফ্রিকার বনেদি সবুজে
পাখিগুলো উড়েছিল নীড় আর আহারের খোঁজে
মহাত্মা মাটির পুত্র – খ্যাতি ছিল শান্তির দূত।
কে বলে ম্যান্ডেলা নেই- যতদিন গ্রহপুষ্প র’বে
নেলসন নেলসন বলে এ প্রজন্ম পতাকা উড়াবে।
নক্ষত্রের ডানা
ষোড়শী সমুদ্র পথে যেতে যেতে বুকের প্রশ্বাস
দীর্ঘ হয়। এই বেলা- এই কাল হৃদ সুতো ধরে
টান দেয় বনভূমি, সবুজেরা কঠিন পাথরে
স্থিত হয়ে শেষ অবধি প্রতিকূলে করে বসবাস।
গ্রহের ভস্ম চিনি। অস্থি’র অস্তিত্ব আছে জানা
তবুও অচেনা থাকে বাড়ন্ত যৌবনের গতি
আর তার প্রতিনিধি যে শহরে গড়েছে বসতি
কালোরেখা ভেদ করে ছুটে আসা নক্ষত্রের ডানা।
এই কাল আমাদের-এই বেলা, আলোর বন্দর
ছেড়ে গেলে অন্য কেউ স্থান নেবে দীপ্র সাহসে
এবং অংকিত পথে রেখে ছাপ,ভালোবেসে-বেসে
তার জন্যে খোলা থাক গভীরতা, বুকের কন্দর।
নতুন ছন্দ আর ছায়া নিয়ে অনাগত দিনের কম্পন
সহস্র সমুদ্র হয়ে বেঁচে থাক,রাত জাগা কুমারীর মন।