শুকনো পাতার শিস
প্রতিদিন মনে হয় আজ হয়তো তোমাকে পাবো।
তাই প্রতীক হারানো শবদেহে বসে থাকি।
নিচু স্বরে ডাকি।
রুপকের আড়ালে দেহবিতান খুলে রাখি।
চুপিচুপি, আনমনে, অজস্র শুকনো পাতার শিস পাঠাই তোমার ডেরায়।
তোমাকে ছুঁয়ে টুয়ে তারা যখন ফিরে আসে,
তখন তারা কথা বলে সৌধমণির চোখের তারায়।
আমি চুপচাপ শুনি, দেখি তুমি শুকনো পাতার শিসান্তরে
পাঠিয়েছো রোদের সানাই!
উপমা
উপমার বাকস্তব্ধ নদে
আলো ফেলে
তোমাকেই দেখ তুমি এক নিষ্ঠ মনে।
কিছুই চেয়োনা, খোলো
সহজ ভঙ্গিমা
সব স্মৃতি মুছে যাক
রাতের গভীরে
নতুন হয়ে উঠুক সমস্ত কল্পনা।
ধীরে ধীরে মুক্ত হোক অবরুদ্ধ ডানা
রোদ ফুটুক
সকল মৌন জংলি ফুলে।
গোধূলির রঙ
সময়ের ঢেউমুগ্ধ ছায়া থেকে ছিন্ন হয়ে
সবটুকু গোধূলির রঙে
ডুবে ছিল তার দেহ।
বিস্ময়ে উড়ে যাওয়া পৃষ্ঠাগুলির মতই
ফুরিয়ে যাওয়া সন্ধ্যা তাঁকে তুলে নিলো,
নৈশ স্তব্ধ বালি আর জলের গর্জন
তাঁকে নিলো না,
শেষে ডাঙায় ঠেলে দিলো।
আব্বা
আব্বা বাড়ি ফিরে গেছে
কাশফুলে রোদ নেই আর
সবুজ ঘ্রাণের নদী পার হয়ে মেঘের ছায়ায়
মাঝে মাঝে দেখি তাঁর
ঠাঁই বসে থাকি তাঁরই ডাকের অপেক্ষায়
যেন বহুকাল
পরিত্যক্ত মরা কাঠে আমি আর আমার যমজ
আব্বার জন্যেই বসে আছি
ঘুমন্ত শিশুর মুখে লেপটে থাকা দুধের গন্ধ
নিষ্পত্র বৃক্ষের হা-করা শরীরের ভেতর
চুপচাপ জোড়া দিচ্ছি ঝড়ে ভাঙা ডানা
তাঁর প্রতীক্ষায়
ম্যাজিক
নিজেকেই ম্যাজিক দেখাই। কাটা আঙুলের পাশে,
সাজিয়ে রেখেছি গলাকাটা পাখিদের লাল রান।
গলায় ঝুলানো সর্পবেণীর মতো বন্য হাওয়ায়
পেকে ওঠা ঘেয়ো ফলের মালা।
ছুরির বাটে রক্তের দাগ, তা দেখে হেসে উঠছে এলিট,
মুখফোলা বুদ্ধিজীবী আর ঘুমন্ত ড্রপবক্স।
বন্ধুমুখ
আমি বুঝে গেছি
পরিচিত মুখগুলো সরে গেছে
সন্তর্পণে
রোদ ফাটলের কোলে।
পাথরচাপা হলুদঘাসের কান্নার মতো
চুপ হয়ে আছি।
ভেতরে বিষমাখা সমস্ত ছুরির গোঙানি
আমাকে শব্দতরঙ্গের জঙ্ঘার দিকে
ঠেলে নিতে চায়।
ধ্বনিপুঞ্জের উৎকর্ণ শহরে বিদীর্ণ করতলে
ভেল্কি দেখাতে চায় তারা,
কর্কশ স্বরের দেহ খুলে দেখাতে চায়
নিরুত্তাপ গ্রন্থের ঝুঁটি।
আমি নিষ্প্রভ চুমকিতারার নির্জন গহ্বরে
আমার দুঃখদিনের বন্ধুমুখগুলোকে
স্পর্শ করি।
এর চেয়ে সুখ আর কোখাও
আমি খুঁজে পাইনি।
স্বপ্নের ভেতর পলাতক অজস্র তুলোর ঢেউ
সে ঘুমের গভীরেও একা, পলাতক
অজস্র তুলোর ঢেউ থেকে
ছিন্ন হওয়া মহুয়া ঘ্রাণ লুফে নিতে পারে।
সহজ মানুষের নিবিড় আলিঙ্গন শেষে,
তারও খুলে দেখতে ইচ্ছে করে
ফলের রক্তিম হাহাকার।
প্রাপ্ত বয়স্ক আওলানো দেহ ডেমিয়ে
নতজানু হয়ে দেখতে সাধ জাগে,
থেমে যাওয়া বৃষ্টির শেষ প্রণতি।
প্রজাপতির ভাঙা ডানায়
অনিঃশেষ গোধূলির নিস্তব্ধতা
তাকে ঈর্ষা করে,
ব্যাখার সমস্ত কৌশল মুছে
প্রতিদিনই রোদ ওঠে তার মনে।
অবিচ্ছিন্ন
যখন কাছে এসে দেখে যাও
তখন কোনো কথা বলতে পারে না
ঈর্ষাকাতর মেঘ
অনুচ্চারিত শব্দের বল্মীকে
ফোটে শান্ত ছায়ার বোল
নিশ্চুপ থাকে
দিগন্তের শত শুভ্র পাহাড়
কেবল সুরের প্রভা তোমাকে দেখে হাসে
তরুবালার মুখের কোণে
ঝিলিক দিয়ে ওঠে সদ্য উঠা রোদ
অপ্রকৃতিস্থ আকাশ
সব কথা বলা শেষ
এখন শুধু মুখের দিকে তাকাই
মনে হয় তুমি সত্য
ঝরাপাতায় মুছে যাওয়া ব্যথার চিহ্ন
তোমার মুখশ্রী তারাদের দূরবীণে
অপ্রকৃতিস্থ আকাশ
ধীরে ধীরে কাছে টানছে
দূরবর্তী মেঘেদের সমস্ত প্রান্তর