গাভি
দুধে পুষ্ট সন্তান; দুধে খুশি অতিথি; দুধে
তুষ্ট বিশ্বভাণ্ডারের মালিকিন মা লক্ষ্মীও;
পড়শি গোয়ালা ধনেশের এই সফল
স্লোগান শুনে মাতবর বাড়ির মুরুব্বি
রামচন্দ্রপুরের হাট, যেখানে নাচোলের
রানির শশুরবাড়ি, সেখান থেকে মৌরসি
ফান্ড দিয়ে কিনে আনেন বারোটি গাভি;
সেও হয়ে গেল বহু বছর আগের কথা!
জোয়ার ভাটার তুলনা ছিল পরম্পরায়
চলে আসা সেইসব দুধের দিন দুধের রাত;
কিছুদিন হলো—গণেশ নিয়েছেন
সবখানি ভার; ইন্দ্রপুরীর আশীর্বাদ
আছে মাথায়—চেনা দেবাননে প্রায়শ
ফুটন্ত দুধের বলক হয়ে ওঠে একথা।
কিন্তু লোকসান! লোকসান! লোকসান!
কমে যাচ্ছে দুধ; গ্রীষ্মেও রাখালগুলোর
শরীর হয়ে উঠছে শীতের পর্ণমোচী;
আর গাভির খাবার নিয়ে রাতরঙা
কারসাজি দেখবেন আপনি কী করে?
অধিকন্তু .নারদসূত্রে জানা যায়, স্বর্গীয়
সুড়ঙ্গ বেয়ে দুধ যাচ্ছে দুগ্ধালয়ের পাশ ঘেঁষে
বসে থাকা দেবতার পেটে; কিন্তু গরিব
জীবের রক্ষক দেবতা দুধ খেয়ে নিচ্ছে—
এই অবিশ্বাস্য কথা বিশ্বাস করবে কে?
রৌরব নরকের সিপাইরা ধরে নিয়ে যাবে
এই ভয়ে গোয়ালা ও দুহিতারা
মুখ খোলেন না গগন হরকরাদের কাছে।
প্রণোদনা
ক্ষমাহীন কাল; অৃদশ্য তার অমোঘ ক্ষেপণাস্ত্র;
লুট হয়ে যায় আমার উল্লসিত হওয়ার পুঁজি;
আমি মাতোয়ারা হতে যাই; ‘না’ ‘না’ করে
ডিউটি পাল্টানো ট্রাফিক সার্জন হয়ে হাত ওঠায়
সকাল ও সন্ধ্যা, দুপুর ও রাত; দগ্ধ জাগরণও;
অথচ একবছর আগেও তারা হযরত আলীর
দুলদুলের সমান ইচ্ছার অনুসারী ছিল আমার;
তোমার সচ্ছল হাতদুখানির দিকে চোখ যায়
হায়, তুমি আঁচল ওড়াও লুটেরা দক্ষিণে আর
শিল্পমালিকদের উপহাসভরা চোখের সামনে
কোভিড-১৯-এর আমচাষি হয়ে পড়ে থাকি আমি
মৌ মৌ বাগানে; শ্যামা নয়, কোকিল নয়,
গম্ভীরা গানের নাতিও নয়, কানে জ্বালা ধরিয়ে
ইউটিউবে বেজে ওঠে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা।
ঢেউ
আমার ভূগোলে ম্যাপহীন নদী ;
এই শান্ত,
এই উথালপাতাল!
আর কত ঢেউ!
এই ওঠে, এই ডোবে!
ঢেউগুলো ধরে রাখবো? কি করে!
কোন ক্ষমতায়?
তবু মন মানে না যে!
তো দুএকটির ছবি আঁকি
রঙতুলি দিয়ে
কখনো জলরঙ
কখনো বিমূর্ত
কখনো হালকা
কখনো-বা গাঢ়;
সাথে মিশে যায়—
আকাশের মুখ
দুপুরের রঙ
গাঙচিলের টেকঅফের শব্দ
কখনো-বা আমার নিজের
মনের ছবিও মিশে যায়
একটু আধটু
যেভাবে মিশে যায় সূর্যের ভালোবাসা
সবুজের শিল্পে;
কিন্তু আপনারাই বলুন,
এভাবে আর কয়টা ঢেউয়েরই-বা
ছবি আঁকা যায়!
পিএইচডি মহোদয়
বিচ্যুতি মাপতে যান
মন নিয়ে দারোগার;
ও ঢেউ! ও ছবি!
আরও পড়ুন: মৃত্যুসংবাদ ও অন্যান্য ॥ মাসুদ আনোয়ার