গাছজন্ম
না আমি বলছি না সব ঠিকঠাক চলছে
অথবা স্বাভাবিক আছে সবকিছু;
হতে পারে কিছুই ঠিক নেই
অথবা খুব বিশ্রী রকম চারপাশ!
তবুও তো কথা বলছি, শ্বাস নিচ্ছি! মানুষের পৃথিবীতে হেঁটে বেড়াচ্ছি!
দেখছি তো সব, কিছু কি বলেছি কখনো? বলিনি তো!
আমার সামনে ঘটে গেলো কত কি! সহস্রাব্দব্যাপী দেখে গেলাম শুধু,
মসজিদের কাছে মসজিদের আর মন্দিরের কাছে মন্দিরের হেরে যাওয়া;
অদৃশ্যের কাছে মানুষের নতজানু দেহ লোভে পাপে একাকার!
পাখির জন্য তবু আকাশ আছে; মানুষের নেই কোনো মুক্তভূমি।
তাই তো বলি না, কিছুই বলি না;
একা একা বাঁচি, গাছ হয়ে বাঁচি।
কাঠ চেরাইয়ের কলে শুয়ে পড়ার অপেক্ষা শুধু…
হেমন্ত
হেমন্তের দীর্ঘ রাত, নিশাচর পাখিরা ডেকে ডেকে রাত জাগার উস্কানি দেয় খুব; মেঘমুক্ত আকাশে বিরাট গোলাকার চাঁদ ফুসলিয়ে নিয়ে যায় ঘুম-পরিকে।
হেমন্তের সকাল যেন উঠতি বালিকার মতো! বড্ড ছটফটানি তার। ভোরের কুয়শা কেটে যেতেই গনগনে উত্তাপ! ছোট্ট সকাল দৌড়ে ছুটে যায় দুপুরের বুকে।
বিকেলগুলো গলে যায় দ্রুত, রঙিন আইসক্রিমের মতো মেঘের রাজ্যে ঝুপ করে হারিয়ে যায় রৌদ্রপাখি; কাশবনের অভিসার তরান্বিত হয় অন্ধকারের আগমনে।
তবু ভোর, তবু সন্ধ্যা; কুয়াশা কুয়াশা প্রহরে বাতাশে ভেসে আসে শীতের চিঠি। হিম হয়ে আসে কেবলি বিকেলের স্পর্শ।
তার সাথে দেখা
তার সাথে দেখা হলো না বলে হেমন্তের বিকেল ঢেকে গেলো ঘন-কুয়াশায়। কাশবনে অন্ধকার নেমে এলে স্পষ্ট হয় তার অনুপস্থিতি।
এইসব গল্প বলা বৃষ্টির দুপুরে ভেঙে যাবে গোপনীয়তার বাঁধ।
সিঁড়িঘাটায় একাকী প্রহর, জলের ভেতর কম্পমান প্রতিবিম্বে চাঁদ না কি তুমি! তোমার ছায়া দুলে ওঠে বুঝি ওই! তবু তুমি কই? কোন উঠোনে তোমার সংসার?
এইসব আক্ষেপের সন্ধ্যায় তোমাকে পাব না কোনোদিন।
অথচ তুমি আছ এই পৃথিবীতেই; অথবা তুমি আছ এই পাড়াগাঁয়ে। যেখানে আমার সকাল জেগে ওঠে, আমার দুপুরগুলো দাঁড়িয়ে থাকে স্থির। আইসক্রিমওয়ালার ডাকে ছুটে আসা শিশুদের মতো শুনতে পাই তোমার ডাক!
ছাঁটাই
সেই যে লোকটা, শ্রমিক ছাঁটাইয়ের দিন ঘরে ফিরে এলো খালি হাতে! তার ছোট্ট মেয়েটা বায়না ধরেছিল একটা খেলনা পুতুলের জন্য; সকালে বেরুনোর সময় দৌড়ে এসে মিষ্টি স্বরে বলেছিল চকলেট আনার কথা।
চোখ থেকে জল গড়িয়ে নেমে গেলে বুকের ভেতর হালকা লাগে। ক্ষুধার জন্য শরীর বেচে যে বেঁচে থাকে তাকে বলে শ্রমিক; শ্রমিকের চোখ নয় দেহ থেকে গড়িয়ে নামে লোনাজল।
আকাশ থেকে নেমে আসা সোনালি রোদ্দুর উত্তাপ ছড়ায় শ্রমিকের চামড়ায়, বিশ্বব্যাংক হিসাব করে মানুষের মাথাপিছু আয়। রোড ডিভাইডারে শোভিত ব্যয়বহুল বনসাই উন্নতির সাক্ষী গোপাল!
তবু প্রতিদিন যন্ত্র আবিষ্কারের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলে বেকারত্ব, শ্রমিক ছাঁটাই আর মাথাপিছু আয়।
কে কার জন্য
‘ধোঁয়ার কুণ্ডলী পেঁচিয়ে মানুষেরা যখন কেটে নেয় মৌমাছির বাড়িঘর! তখন মৌমাছিরা কিরকম গৃহহীন উদ্বাস্তু হয়ে যায়! ভেবেছেন কখনো?’
রোহিঙ্গাদের উদ্বাস্তু হওয়ার শিরোনাম পড়ে এমন প্রশ্ন করেনি কেউ। কেননা মানুষেরা নিজের অস্তিত্ব ছাড়া আর কাউকে নিয়ে চিন্তিত নয়। অথচ মৌমাছি বিলুপ্ত হলে থেমে যাবে পরাগায়ন। ভেঙে পড়বে প্রকৃতি।
মানুষের ঘরে আগুন দেওয়া লোকেরা বোঝে না এইসব। বোঝে না মানুষ বিলুপ্ত হলেও মৌমাছি থেকে যাবে; অথচ ঈশ্বরকে নাম ধরে ডাকবে না কেউ, অথবা ডাকবার জন্য থাকবে না কোনো প্রাণী।