গমচাষি আব্বা- এক
গাভিন ধানক্ষেতের আইলে বসলে
হতে মন চাই—গাঙ ফড়িঙ
তখন পড়তে ইচ্ছে করে
আব্বার কপালে জমা টলটলে ঘাম
নুনের প্রকৃত ইতিহাস!
আব্বা বার বার বলে—নুন নয় বাবা
শিকড়ে রসের খুব দরকার
তোমরাই উর্বর ও রসালো হও।
আর এই যে আমার মা—
তাঁর দিকে তাকালে যে কেউ
স্বীকার করবে—আমার আব্বাই
পৃথিবীর পোরথম গমচাষি!
কারণ হাওয়ার মতো
বাপের অগোছালো সংসার।
গমচাষি আব্বা- দুই
পুঁইশাকের ডিম ভাজা দিয়ে ভাত খেতে খেতে আব্বা বলেন—মানুষ আদতে রক্ত পান করতে ভালোবাসে! কলমি শাকের ডগার মতো কেঁপে ওঠেন মা। আর ওইদিকে কচি পাট শাকের মাথা কেটে বাড়ি ফিরছে বিধবা ফুপু। আঁচল ভরতি তাঁর শাকের বিচ্ছেদ!
মানুষের জীবন কি শাকের চেয়ে সবুজ?
তখন চৌ-চালা ঘরের ওপর বসত-গড়া মিষ্টিকুমড়ো—ফালি ফালি রাঙা ঠোঁটে ছুরি বসিয়ে বলে—এর পরেও অনিন্দ্য জীবন! সুঁতি শাড়িতে ভাতের মার দিতে দিতে সদ্য বিবাহিত বোন গুনগুন করে গান গায়—কেন পীরিতি শিখাইলিরে বন্ধু…!
নতুন সুখেও কি মানুষ বিচ্ছেদের আহ্বান জানায়?
গমচাষি আব্বা- তিন
ধান বুনা শেষ
শালিকে শালিকে মেতে ওঠে ক্ষেত
খেজুর পাতায় গুড়ের মতোন
ভেজানো-মাটির সর দিয়ে
ধানের শরীর ঢেকে দেন আব্বা
বীজ নন—তিনি যেন ঢেকে দেন স্বপ্ন।
মা নারকেল কোরানো
রসের পায়েস নিয়ে
বটতলায় অপেক্ষা করে।
আর মনে মনে বলে—
তাঁর যেন ঠাণ্ডা একটা ছাওয়াল হয়!
অথচ হলাম আমি—তেঁতুল কাঠের আগুন!
মাথায় গামছা বাঁধা ধানচাষি মধু
বলেন—খাবার খাতি আরো দেরি হবে
তুমি ঘরে ফিরে যাও।
ফিরতে ফিরতে মা ভাবছে—
পুরুষের চাষকাম শেষ হবে কবে?
গমচাষি আব্বা- চার
হাসতে হাসতে আব্বা মিষ্টি আলুর ক্ষেতে গেলেন। যেভাবে পুরুষেরা নারীর কাছে গলে যায়। মা মান-কচুর তলায় ঘাটকোল খুঁজছে। দাদীর গিঁট ব্যথা আর এ্যালার্জির জন্যে যা পরম ওষুধ। গলদা চিঙড়ি আর ছোট মাছ নিয়ে বাড়ির ফটকে ঢোকে দুলাভাই। আব্বা বলেন—যাক আজ আর সেক্সি খেতে হবে না!
ছোট মাছের জীবন নিয়ে—তখন কত রকম আফসোস করছে আমার বড়মা!
বালধরায় গাছো দা বালি দিতে দিতে আব্বা নখের ওপর পরখ করে—ধার। কোমরে খুঙরি বাঁধতে বাঁধতে বলেন—মানুষের হিংসার গাছ যত বড় হবে, ততই খেঁজুর গাছের গালে রস কমে যাবে!
আব্বারা কত চরিত্রে অভিনয় করেন—কোনো পুরস্কার পান না!