সমঝোতা স্মারক
পাহাড়ের জুমচাষীদের সাথে সমঝোতায় আসা গেল;
তারা পাহাড়েই থাকবে, গরু চরাবে, ধান বুনবে
পুরুষেরা শম্বর শিকারের প্রস্তুতি নেবে,
তাদের নারীরা সময় সুযোগে বাচ্চা বিয়াবে,
তাদের ক্ষেতের ধানে আমরা মাড়া দিতে গেলে
তারা প্রতিবাদী হবে ধনুক আর তীরের বীরত্বে
কাছা বাঁধবে, বাঁশের বর্শায় ক্ষেতের শষা বেঁধে
বুক টান করে দাঁড়াবে, তফাতে দাঁড়িয়ে আমরা হাসব।
আমাদের দেশপ্রেমিক সৎবাহিনী জানে
কিভাবে হানাদার প্রতিহত করতে হয়,
তারা এও জানে কিভাবে হানাদার হতে হয়
রোমেল চাকমা হত্যায় তাদের বীরত্ব প্রস্ফুটিত।
মাঝেমধ্যে জুমচাষীদের বাড়ি পুড়বে, পোয়াতি
নারীরা ধর্ষিত হবে, পুরুষেরা অক্ষম আস্ফালনে
অর্জুনের খোঁজে যাবে, নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তির ওপারে
লাশ তড়পাবে, বীভৎস দুঃস্বপ্ন হামাগুড়ি খাবে।
জুমচাষীদের সাথে একটা সমঝোতায় পৌঁছা গেছে;
অন্যায়, অত্যাচারের বদলে আমরা ফেসবুক বিপ্লব করব
সামাজিক মাধ্যমে কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জনের মাধ্যেমে
দেখাব সর্বোচ্চ মানবতা, তারপর আরামে নিদ্রা যাব…
একালের কালিদাস
বাবার একটা সাইকেল ছিল
মায়ের ছিল দক্ষিণা জানালা
চুলের চিরুনি প্রতীক্ষার প্রহরে
ক্লান্ত হতে হতে ঘুমিয়ে পরবে
এমন সময় সাইকেল ধ্বনিতে
মুখরিত হতো মধ্যাহ্ন কাল
পাপোষে উঠোনের বালি
প্লেটে তাল পিঠা
ঝকঝকে কাচের জগে
বেলের শরবত…
ইহকাল আর পরকালের
কথোপকথনের মাঝে
কালিদাস কালিদাস উচ্চারণ
কী পরিবেশ সৃষ্টি করত
ভাবতে গিয়ে দেখি
কোনো এক সুবর্ণগ্রামে ভোরের বেলায়
শিশির ভাঙছে যে যুগল
তারা আমার মাতা এবং পিতা…
আমার আছে ফোর হুইলার
রেঞ্জ রোভার, আমার স্ত্রী
তার ব্রান্ড নিউ ফোর্ড ফোকাসে
করে ব্রাইটন গেছে
বয়ফ্রেন্ডের সাথে দুদিনের
ছুটি কাটিয়ে সোমবার ফিরবে
মনিকার সাথে বারে দেখা
তরলায়িত আমন্ত্রণ জানাতেই
রাজী হয়ে গেল, রাতের আসরে
তরল সঙ্গিনী হলে মন্দ হয় না
একাপনা কুরে কুরে খাওয়ার আগে
আমি মনিকা খাবো…
কালের রাখাল
এটাই বাস্তব সত্য ভীষণ রকমের সত্য
তাঁর হেলানো তর্জনিই
একটা তিক্ত নাভিশ্বাস থেকে
আমাদের পৌঁছে দিয়েছিল বলশালী স্বপ্নে
আমরা সবাই যখন আত্মঘুমে মগ্ন, তখন সেই
রাখাল বুকের বোতাম খুলে দাঁড়িয়েছিল…
দাঁড়িয়েছিল সূর্যের অহঙ্কারে
শত্রুর ছুড়ে দেওয়া তীর তাঁর পাঁজর ভেদ করে
তবেই না সবুজ জমিনে পৌঁছাবে, তাঁকে মাড়িয়ে
মাড়াবে মাঠের দূর্বা
এমন বুকের পাটা নিয়ে
জন্মায়নি কেউ আজ অবধি
বাঘ সিংহের বুক নিয়ে একজনই জন্মেছিল
আমাদের বাঙলায়, সেই ছিল বাঙলার ঈশ্বর
আহ্লাদিত প্রাচীনকালে আমাদের পিতারা যখন
গর্তের গভীরে আঁকছে নিজেদের অনাগত কাল
রাতের ভোরে কিংবা দিনের গভীরে তারা যখন ছেপে দিচ্ছে
বীর্যবতী সময়, সুবর্ণ কালের ধ্বনি প্রতিধ্বনিতে
পাহাড়ের প্রান্তে যখন জন্ম নিচ্ছে সোনা ঝরা
গল্প, সোনালী অক্ষরে বুননের কাঙ্ক্ষায় তড়পানো
সেইসব কবিতারা আত্মতৃপ্তি পেয়েছিল তাঁর মুখাবয়ব স্মরণে
তারা জেনেছিল একদিন ঘরে ঘরে নন্দিত হবে তাদেরই
উত্তরসূরি, নিজেদের মূল্যবান জীবন গচ্ছিত রেখেছিল
তাঁর জন্য যে রাখাল তাদের পৌঁছাবে সুউচ্চ পাহাড়ে…
পৌঁছেছিল, দুর্যোগের ঢেউ পেছনে ফেলে পৌঁছে
দিয়েছিল পূর্বসূরিদের স্বপ্নের নৌকা, জানিয়েছিল
ক্রীতদাস জীবন নয় পৃথিবীর সভ্যতায়
আমাদেরও যোগ আছে, সুউচ্চ মিনারে
পৌঁছানোর আছে সকল যোগ্যতা
সবুজ কোমল বাঙলায় যে আশালতার বীজ
বপন করেছিল আমাদের প্রপিতামহরা
তাঁর পরিচর্যায় তা আজ পুষ্পে, পত্রে সুশোভিত
তাঁর উচ্চারিত স্বাধীনতা আমরা প্রাণে ধারণ করি
তাঁর শেখানো মুক্তির মন্ত্রে খুলে দেই বুকের পাঁজর
যে পথে সে হেঁটেছিল সে পথ করায়ত্ত করে
আমরাও হেঁটেছি, জেনে গেছি স্পৃহা থাকলে কিছুই অসম্ভব নয়
একটা সিংহ খচিত সিংহাসনে আজ সে আসীন
তাঁর রাজকীয় হৃদয় এবং দৃঢ় সাহসের পাঠে
প্রজন্মরা উদ্বেলিত, আকাশের উজ্জ্বল তারায়
তাঁর প্রতিবিম্ব লক্ষ্য করে প্রজন্মরা তারকা জয়ের স্বপ্ন দেখে
আমাদের প্রপিতামহের স্বপ্ন তাঁর হাতে পূর্ণতা পেয়েছিল
তাঁর স্বপ্ন পূর্ণতা পাবে প্রজন্মের হাতে, পাবেই
তাঁর দেখানো পথে হাঁটা ছাড়া প্রজন্মের কোনো গত্যন্তর নেই…
বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা
ওখানে বর্ষাক্রান্ত রাত, এখানে তুষারে পুড়ি
আহা মেঘমালা একবার দেখা দিয়ে যাও
অনেকদিন ছুঁই না তোমার শরীর, অবরুদ্ধ
সকল ভাবনার ডানা, মেঘের আড়ালে লুকাবে
সুন্দরী চাঁদ; প্রতীক্ষার পরে জোনাকিরা গাইবে
আহ্লাদী গান, শরীর দিগন্ত ভিজিয়ে নেমে যাব
পৃথিবীর মাঠে। আহা মেঘ, মেঘমালা
আর একবার হুজুগে মাতাও; আমাকে উড়িয়ে নাও
বৃষ্টির দেশে; আঁচলে জড়িয়ে পুনরায় প্লুত হবো
আহা মেঘ ফিরিয়ে দাও অশান্ত ট্রেনের জানালায় তোমার
ঝাপটা, স্মৃতি পাঠে এসো পেরিয়ে যাই মেঘমল্লার রাত…