আপুষ্পঝিনুক
ডুবছি—
আপুষ্পঝিনুক ঘূর্ণির ভেতর পাখির কলতানে,
কী মৃদুমন্দ হৃদয়ে
শিশুরা ঘুমাচ্ছে মা-বাবার আদরে খুব করে…
ডুবছি—
কোরআন-গীতার অনন্ত সুরায় তারার ঝিরিঝিরি
আলোর সরোবরে, তখন একদল কবির মজমায়
কেবল রাত এল
নাজিল গেল ঘুমে খুব করে..
ডুবছি—
আনৃত্যক্লান্তি ঝিরির আবাহনে
ভোর আছে কেবল পশুপাখি-মাছির, ফলের-পুষ্পের, অরণ্য-সাগরে
মানুষ-বাতাসের পৃথিবীতে,
কেবল ভোর নেই বুকের ধন ওই সূর্য-তারাদের
ভোরের চুম্বন পায়নি কোনো দিন নক্ষত্রেরা…
ডুবছি—
মানুষে কান্নায়, দিনের বনিতায়
ধিকিধিকি জ্বলছে জুতাদের হৃদয়,
আর আমি ডুবছি মাছিদের আজানে
দুপুরের গুহায় খুব করে…
পাখিদের কণ্ঠ ডোবে না কোনো দিন বানের তোড়ে
মানুষের কণ্ঠ ডুবে যায় জিবের-চোখের লালার ঝড়ে…
ডুবছি—
ফুলের সংগীতে ঝিনুকের তারায় খুব করে
খুব করে ডুবছি
আকাশের নিঝুমে যেখানে জেরবার
খুরের কোলাহল, বাহুর টগবগ, পরমাণু-হ্রেসা…
ডুবছি সেখানেই
গন্ধের দ্রবণে ঘূর্ণির ভেতর
যেখানে পাখিদের কাকলি বাগান বানায়…
কহর ও বেহাগগুচ্ছ
অ.
অমাবস্যার তামাশা! পেতনির বিয়ে! সানাইবাজনা! সুরবিতান! নাচনেওয়ালির জং পড়া ঘুঙুরের ঝংকার; প্রেতকীর্তনে পুরস্কার জুটিয়েছিলে বহু, তাই আমিও দাস ছিলাম ২০০ বছর দাঁতাল পেতনির!
আ.
অভাবীর ঘরে চাল নেই, খাবারশূন্য গুদাম! ফুটপাতে বেওয়ারিশ শিশুর কাতর চোখ, শুষ্ক ঠোঁট! আর বিলাসখাবার খায় মা গঙ্গা, কোটি মুদ্রার কোটি প্রতিমার লাবণ্যবিতান!
ই.
পাইথন হাতে সন্তের জিকির! টিলায় উপত্যকায় সংসার বিরাগী কবির ভাতঘুম!
ঈ.
কালো মেয়ে তুইও সুখতীর্থ ক্লান্তিচোষা দরাজদিলের নীরব নেহালরাত! তোর আঁধার থেকেই আলোর বিচ্ছুরণ, আমাদের আবির্ভাব!
উ.
গোধূলি যেন মদ, আফিম আর গাঁজায় বুঁদ একজন কবিৃনিশির জাজিম যেন অরণ্যবিতান…অথচ ফুলবন মাড়িয়ে বসালে—পাথরের চাঁই, কালসাপের লালশ্বাস, সবুজসানুর ম্লান মুখ!
ঊ.
ওগো মিষ্টি আলু কুড়ানি, ও-খেতের চাষে চাষে আমার নোনাঘাম মিশে আছে, জানোনি তার কিছুই। শুধু কুড়িয়ে নিলে আলু, আর আমাকে ফেলে গেলে খেতের আলে আলে মাটির ভাঁজে ভাঁজে নির্দ্বিধায়!
ঋ.
বর্ষাকাল, ডিঙি, বড়শি, কাঁচি, বাঁধাজাল, বেড়চাঁই… তোরা আমার বাল্যবন্ধু, তাই তো বারবার পেতে চাই আমার এই জন্মগেরামের কাঁখে কাঁখে।
এ.
আড়ালিতে কেচেছে দেখো বাজান আমার রান! চাঁই চাইতে চাইতে, আর পাততে পাততে ভুখ লেগে যায়, চাঁইবোঝাই ইঁচা ভুখ মেরে দুখ কেড়ে সুখ বোলায়!
ঐ.
জাল পেতে নৌকায় উঠতেই দেখি—বাবার পায়ে এত এত জোঁক হোলিখেলায় রক্ত ছিটায়! তবু ভ্রূক্ষেপ নেই, যেন এই রক্ত জাদুকরের এক আয়না, যেখানে সন্তানের উজ্জ্বল মুখ ভেসে ওঠে!
ও.
কুঁচিয়ার লেজের ত্যাড়ামিতে সহিংস থাবার ইঙ্গিত দেখা যায়! কাদা চিড়ে কখনো কখনো বাইন ডাঙায় ওঠে! মইজাল টেনে পার কি তুলতে হাঙর?
ঔ.
এত এত আলোর আঁধার নিয়ে রবির আবর্তন অনন্তের পথে, তবু কলঙ্কের দায়ে পেরেছে কি ফেলতে অনন্তী তারে ভাগাড়ে? ঠোঁটে নিয়ে ছুটছে তো ছুটছেই কতকাল ধরে অজানা নক্ষত্রের দেশে, যেখানে হৃদয়পোড়া শাশ্বত সংগীতবিথার মুহুর্মুহু করে!
আরও পড়ুন: ধুলোর পরাগ ॥ হুয়া বৈদ্য