এক.
পৃথিবীকে ঢেকে দিয়েছে বাদুড়-ডানা
এ-অন্ধকারে ফুল হয়ে তুমি ফোটো
যেখানেই থাকো খুঁজে নেবো আমি জেনো
হাত দিয়ে ছোঁব বাড়াব আমার ঠোঁটও।
এ-মহাপৃথিবী তোমাকে লুকোবে কই
গাছের কাণ্ড ফেটে তুমি জেগে ওঠো
প্রতিদিন আমি নিজেই নিজেকে বলি
তার খোঁজে তুমি ঝড়োবায়ু হয়ে ছোটো।
দুই.
সূর্যের গায়ে কে মেখেছে কালো রঙ
ঝলমলে দিন কোথায় পড়েছে ঢাকা?
কালো মৃত্তিকা, আকাশও কি ঘন কালো
সব ছবি কেন কালো রঙ দিয়ে আঁকা?
এখানে কখনো এসেছিল বুঝি ভোর
বিকেলের কোলে কোলাহল ছিল রাখা?
ভুতুড়ে শহরে নীরবতা বাস করে
নীরব নগরী নির্জন পথ ফাঁকা।
তিন.
মেয়েদের নাকি মৃতদেহ ছুঁতে নেই
ছেলেরাই থাকে পিতাদেহ সৎকারে
করোনায় মৃত, পুরুষেরা নেই কাছে
চার মেয়ে তুলে নিলো মৃতদেহ ঘাড়ে।
পুত্র ছিল না, ছিল তো পড়শিজন
ভাস্তে ভাগ্নে অগণন সংসারে
কেউ ছোঁবে না হে, অচ্ছুৎ মরদেহ
ভয়ে থরোথরো নিষেধের চিৎকারে।
চার.
স্তব্ধ দুপুর, দূরে কুকুরের ঘেউ
মেঠোপথ খাঁ-খাঁ পুড়ছে চৈত্র-রোদে
জাত-পাত নেই অচ্ছুৎ প্রিয়জন
এ-কোন শঙ্কা স্থির মানুষের বোধে।
শান্ত প্রকৃতি হে ধরিত্রী মা তুই
কেন আজ জেগে উঠেছিস কাঁচা ক্রোধে।
নির্জনতার গভীরে প্রোথিত শোক
প্রিয় মানুষের মৃত্যুতে ঋণ শোধে।
পাঁচ.
পথের মোড়ে যে পাহাড়ি শিমুল গাছ
ওখানে তোমার পায়ের চিহ্ন রেখো
চার বেহারার কাঁধে চড়ে যায় কে সে?
তাকে তুমি ওই দূর থেকে শুধু দেখো।
যদি তাকে খুব ছুঁয়ে দিতে মন চায়
একবার শুধু সেই প্রিয় নামে ডেকো
যেখানে প্রথম ফাগুন হয়েছে রাঙা
আজো তুমি ঠিক ওখানে দাঁড়িয়ে থেকো।
ছয়.
আজানের ধ্বনি ভাঙে না ভোরের ঘুম
নিজের নিয়মে দুপুরের কাঁধে ভোর
খাঁ খাঁ রাজপথ ত্রস্তে ছোটে না লোক
চোখে-মুখে ভয় দুঃস্বপ্নের ঘোর।
সন্তর্পণে ঘরে ঘরে দেয় হানা
শহরে এসেছে ভয়ানক এক চোর
সোনা-দানা নয় বেছে বেছে নেয় প্রাণ
ভয়ে জড়োসড়ো শোরগোল হুল্লোড়।