ভালোবাসা মাস্কের ভেতর
ঐতিহ্য ভেঙে ভালোবাসা চুপ
অবিশ্বস্ত হাতের পাল্লায় পড়ে
তছনছ হয়ে গ্যাছে চারপাশ!
তোমাকে ভাবতে গেলেই
হামেশা কোনো মুখোশ ভাসে…
করোনাকালে ভালোবাসা নেই!
করোনাকালে ভালোবাসা নেই!
করোনাকালে ভালোবাসা নেই!
ভালোবাসা খুঁজে খুঁজে হয়রান
ভালোবাসা খুঁজে খুঁজে হয়রান
ভালোবাসা খুঁজে খুঁজে হয়রান…
ভালোবাসা মাস্কের ভেতর গড়াগড়ি
খায়। দমবন্ধ ভালোবাসা আজ!
জানি, তবুও একদিন এই ভূমণ্ডলে
ভালোবাসার ফিনিক্স পাখি
ডানা ঝাপটাবেই, ডানা ঝাপটাবেই।
বিবর্তনে মন পাখি হয়ে যায়
৬ জানুয়ারি ২০২০, সোমবার। ঘড়ির কাঁটায় তখন সন্ধে ছ’টা। গলির রাস্তায় কোলাহল বেড়ে গিয়েছে। ছোট্ট একটা মাঠে দুরন্ত কিশোরদের লাফালাফি অনবরত চলছে। টেলিভিশনে আজাইরা ব্রেকিং নিউজ গলা ফাটাচ্ছে। টেলিভিশনের ভলিউম কমিয়ে দিয়ে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালো তমা। আজকের এই সময়টা যদিও অন্য দশটা দিনের মতো তবু তমার মনটা কোনো এক বিষণ্ণতায় ভর করে আছে। অফিস থেকে ছুটি নেওয়া দিনটা বোধ হয় বিফলেই গেলো তার।
ডিজিটাল এ যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিষয়ে ব্যাপক অনীহা তমার। ঘর থেকে বের হতে মন চাইছে তার। হুডখোলা রিকশায় বসে ঘুরবে এ গলি-ও গলি…ওদিন আর বেরোয়নি তমা। তমার মনটা বিষণ্ণতায় ভর করে আছে।
২৭ মার্চ ২০২০, শুক্রবার। ঘড়ির কাঁটায় তখন সন্ধে ছ’টা। গলির রাস্তায় কোলাহল নেই। মাঠে দুরন্ত কিশোরদের লাফালাফি নেই। টেলিভিশনে করোনা নিয়েই ব্রেকিং নিউজ। ব্যালকনিতে তমা। চাইলেই হুডখোলা রিকশায় বসে ঘুরতে পারবে না এ গলি-ও গলি!
তমার মন চায় উড়ে যেতে! তমার মন উড়ুউড়ু করে! বিবর্তনে মন পাখি হয়ে যায়…
হোম কোয়ারেন্টাইনের দিনলিপি
দখিনের জানালা ধরে বসন্তবাতাস ঘরময় নেচে যায়
মুক্ত কোকিল ব্যাকুল বড়, আমের মুকুল সুবাসে
সুবাসে উদ্বেল করে আমায়! এই সময়ে মাঠে চড়ে
বেড়ানো ছাগলগুলো স্বাধীন, গরু-ভেড়া সবাই স্বাধীন!
আকাশে বিমান নেই, পাখিরা উড়ে যায় সারিসারি,
আকাশের নীল এসে চুমু খায় খুকুর তুলতুলে গালে।
বনে বনে ফুল ফুটেছে, নদীর জল কলকল মুদ্রায়
কাছে টানে আকাশ; উদাস মাঝি ঘাটে বসে গায়
বিচ্ছেদী। শহরে মানুষের কোলাহল নেই, ফুটপাতে
ফুটে নাম না জানা ফুল। রাস্তার কুকুরগুলো আলসে
সময় পার করে-ভুখা থেকে হয়তো নেমে গেছে
ডাকাডাকি, কেউ কেউ কুকুরের জন্য খাবার নিয়ে
আসে। দোকানের বারান্দায় আশ্রয় নেওয়া ছিন্নমূলকে
কেউ তাড়ায় না আজ-হটাৎ দশজন এসে একটি
মাস্ক পরিয়ে ফটোসেশন করে!
. রাতের আঁধারে চুপিসারে
কেউ এসে দিয়ে যায় আহার-অনাহারি মুখেরও
অভাব নেই বদলে যাওয়া শহরের বুকে। পেটের জন্য
শহরে আসা লোকজন জানের জন্য চলে গ্যাছে গ্রামে-
গ্রামের বাজার নাকি জমে গ্যাছে আরও! জলপাই
রঙ নামতেই গ্রামও নিশ্চুপ-নিজের ছায়াকেও কি
ভয় পাওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে! ফেসবুকে আগের
মতোই দলাদলি, কত মত-তবে পথ নেই, নেই!
ছড়াকার-কবি-লেখক লিখে যাচ্ছেন, আপলোড
হচ্ছে মুহূর্তে-পাঠকের মন কাড়তে এখনো সচেতন
তারা-তবে কমেনি দলাদলি–আগের মতোই!
টিভিতে ব্রেকিং নিউজের টেল্প চলছে অনবরত,
বাংলা ছবির নায়ক লাথি মেরে তালা ভেঙে
মুক্ত করতে চায় ভিলেনের গারদে বন্দি নায়িকাকে,
লাথিতে নয় হাতের ঘুষিতেই তালা ভেঙে নায়িকাকে
বুকে টেনে নেয় গর্বিত নায়ক! ছোটবেলার
নায়ক হওয়ার শখ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে আবারও।
হঠাৎ খুকখুক কাশতেই ভয়ে জড়সড় হই, চিরচেনা
কাশির আওয়াজ বাংলাদেশ দণ্ডবিধির তিনশ দুই
ধারার অপরাধ মনে হয়! নিজের হাতযুগল যেখানে
অবিশ্বস্ত, সেখানে ভালোবাসাও অর্থহীন মনে হয়!
প্রকৃতি তার পাওনা বুঝে নিতে আর কত সময়
নিয়েছে হাতে-সহসাই জানা যাবে কি সেই জবাব!
না কি অনন্তকাল মানুষের নিষ্ঠুরতার জবাব দিয়ে
যাবে-রাখবে বেঁধে হোম কোয়ারেন্টাইনের জেলে
তথা গৃহে-পর্যবেক্ষণের সুকৌশল চতুরতায়!