কবি সর্বভুক!
নিয়মের মেনু রেখে কবিকে সবই গোগ্রাসে
গলাধকরণ করতে হয়;
মারকুটে ব্যাটস্ম্যানের মতো খেলতে হয়
. সবকটা বল—
না-জানি কোনোটা ওভার বাউন্ডারি হয়ে যায়!
কবি চিরকাল
শব্দের রাখাল…
ভাতঘুম থেকে কালঘুম অবধি
থাকে পঙ্ক্তির কাঙাল…
বিদগ্ধ প্রকৃতির তটে
সারাদিনমান শব্দ-সঙ্গমের সফল সমাপ্তি শেষে
হৃষ্টপুষ্ট কাব্যসন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে
উপোস থাকে কবি দীর্ঘ রাত;
অতঃপর—
শুভলং ঝর্ণায় স্নান সেরে ঝরঝরে করে দেহ,
. পূত-পবিত্র করে মন;
আহা, সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে কী অনুরণন!
আলুথালু জীবনের বশবর্তী হয়ে,
নীলকণ্ঠী বারবনিতার দীপ্যমান হাসিতে
অয়োময় কষ্ট পোষে বুকের গহীন খাঁচায়।
কখনো-সখনো একা, নিঃশব্দচরণে—
বিরহী তানপুরা হাতে
বসন্তের ঝরাপাতার আড়ালে লুকায় মুখ;
আহা, কবিতাপ্রীতির কী দুর্ভোগ!
মহাজাগতিক বিশ্বে একমাত্র কবিতাই সত্য:
প্রেম, প্রকৃতি ও যৌনতার সূতিকাগার—
উপলক্ষবিনা হঠাৎ নাজিল হওয়া
নান্দনিক কবিতার ছন্দকলহে
চিত্রকল্প-উপমা-উৎপ্রেক্ষায় বাড়ে দ্বন্দ্ব;
সুযোগ বুঝে—
অক্টোপাশের মতো জড়িয়ে ধরে রতিভরা
অহল্যা অষ্টাদশী বৌ…
তাতে কী! চিতানলে দাহ করে দেহতত্ত¡,
অবিনাশী কামুক প্রবৃত্তি পায়ে ঠেলে,
কুহকি ভাষার প্রতিমায়—
যেখানে কালের বাঁক
সেখানেই হাঁটু গেঁড়ে বসে প্রার্থনায়;
মহাকালিক ব্যাপ্তি ছড়ায় ত্রিকালদর্শী ভঙ্গিমায়।
দুঃখবোধ, নষ্টালজিয়ার নান্দনিকতা ও
সমসাময়িক যুগযন্ত্রণায়
. কবি কাতর;
কালের ছদ্মবেশী রাজনীতি তুচ্ছজ্ঞান করে
মানবতার অকৃত্রিম বন্ধু হয়ে
ক্রমাগত হেঁটে যায় বিত্ত-বৈভবের খোঁজে।
সুখচিত্তে ফিরে ফিরে তাকায় সোনালী অতীত,
অগত্যা বর্তমান ডাকে আয় আয়…
চিরায়ত কবিসত্তার প্রজ্ঞায়—
ধূসর ভবিষ্যতের বৈষয়িক বাক্যালাপ ফুরায়।
কালবেলা শেষে, শিল্পের প্রস্রবণে—
. ছন্নছাড়া হয় যাপিত জীবন;
এই তো মনন, কবি জীবনের আলেখ্যদর্শন!
বিসর্জন অনিবার্য জেনেও ফুল-পাখিদের আমন্ত্রণে
অনুগামী হয় কবিতার রাজপথে,
শব্দের ঝোলা কাঁধে
বন্ধুর সময়ের বিরূদ্ধ স্রোতে হাঁটতে হাঁটতে—
কবি ক্লান্ত-শ্রান্ত এক চিরবিরহের প্রতিক;
জানেনা সে, রণমত্ত আজ কানাগলির পথিক!
যুদ্ধ শেষে কবি আদ্যোপান্ত একা, নির্জনতার সাক্ষর
কবির কানের কাছে প্রার্থনাসংগীত গায়
জ্ঞানতাপসের অক্ষর…