পেন্ডুলাম
চোখ থেকে মুগ্ধতার পর্দা সরে গেলে
পড়ে থাকে কুৎসিত একতাল অন্ধকার
তড়িঘড়ি করে নটে গাছটি মুড়িয়ে ফেলবে!
জীবন তো রূপকথার কোনো গল্প নয়,
সোনারকাঠি রুপোরকাঠি আর জাদুর কৌটায়
ডাইনির প্রাণভোমরা লুকোনো থাকে না
এখানে জীবন সংঘর্ষময়; প্রতিনিয়ত সংশয়
বিশ্বাস অবিশ্বাসে দোদুল্যমান প্রতিটি ক্ষণ,
পাংশুটে সময়ের পেন্ডুলামে দুলতে থাকে
অমীমাংসিত গল্পের শেষ অধ্যায়
আর আমরা নিয়তির মতো ক্ষয়ে যাই যাপিত
জীবনের যাবতীয় সন্তাপ নিয়ে।
কবিদের পিরামিড হয় না
বিনিদ্র রাত লিখে যায়
অযাচিত জীবন সংলাপ
নদীবক্ষ মানেই জলজ ভেবো না
এখানেও জাগে শুষ্ক মরুর চর
কতটা হাঁটবে পথিক!
এখানেই সবুজের শেষ সীমানা
এরপর আদিগন্ত ধূসর বিস্মৃত প্রান্তর
কবিদের পিরামিড হয় না
বড়জোর প্রাচীন শিলালিপিতে খুঁজে পাবে
অজস্র কবিতা ভ্রূণের আত্মাহুতির
বিবর্ণ ইতিহাস।
ভোকাট্টা
মেয়েটা খুব গাঢ় কাজল আঁকতো চোখে
আর ঠিক ওখানেই ছিল আমার অজানা যত ভয়!
বেশিক্ষণ ওই চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারিনি কখনো
দৃষ্টি সরিয়ে নিয়েছি অন্য কোথাও
লুকিয়ে রেখেছি আবেগ সন্তর্পণে,
ধরা পড়ার আশঙ্কাও ছিল সমান্তরাল রেখায়।
একদিন সটান আবদার করে বসলো , একটা কবিতা লেখার
আমি বলেছিলাম, বরং একটা নদী লিখে দেই?
বিস্ময় ভরা চোখে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিল আমার দিকে
খেয়ালই করিনি কখন সেই গাঢ় কাজল গলে নদী হয়ে গেছে
একূল-ওকূল ভাসিয়ে নেওয়া খরস্রোতা এক নদী।
তিরতির করে ঠোঁট দুটো কাঁপছিল যেন
ঢেউয়ের আঘাতে পাড় ভেঙে পড়বে এক্ষুনি
তারপর?
তারপর সময় ভোকাট্টা ঘুড়ি
আমিও উদাস বাউল, কখনো খোয়াই কখনো
চন্দনার তীরে একতারায় সুর বাঁধি।
অনেককাল পর আবার দেখা দুজনার
চোখে কাজলের চিহ্নমাত্র নেই
নদীও শুকিয়ে খাক
যেন শান্ত মরুর বুকে ধু ধু বালুচর।
অথচ মেয়েটার জন্য আমি একটা আকাশ
কিনেছিলাম
নীল নীল মেঘে সাজানো আকাশ,
বুক পকেটে ভরে পথে পথে ঘুরেছি ঠিকানা বিহীন!
আজ যখন ওকে সেই আকাশটা দিতে চাইলাম দেখি শূন্য পকেট
ছেঁড়া জামার ফাঁক গলে কবেই পালিয়েছে আকাশ
মেয়ে, আমি সত্যি জানি না কবিতা কেমন হয় !