কতবার ভাবি কিছুই বলবো না
কেন তবে রাতবেলা পান করি নিজেই নিজের সর্বনাশ!
হুকোতে নিমগ্ন ঋষী এত এত ভুলের ভেতর
কী আশ্চর্যভাবে ডুবে থাকে শখের সুখের বেদনা সমুদ্রে!
মন যে শ্মশানে পোড়ে! সেই যে একই ভুল,
রজনীগন্ধা চামেলি শেফালিরা কুসুমসোহাগী হয়ে ফোটে
নিষিদ্ধ লোমশ বুকে খুলে পড়ে সংসার সুঘ্রাণ
আঁধারের কোণ বেয়ে মুঠোয় জড়িয়ে নিতে চকচকে ভবিষ্যৎ।
ঘর-সংসারের সযত্ন যৌবন উড়ে যায় মাতাল বাতাসে
শাণিত দুঠোঁটে লেখা হয় অন্যায় দখল—লুটতরাজের গল্প
মনের সিঁড়িতে থাকে শুধু কাবিনের বিবর্ণ জমিন,
বলা যাবে না কিছুই, বলতে যে নেই যে ওসব কিছুই,
ফুঁসে ওঠে নদী—নদীও ভয়ঙ্কর, রূপাগ্নির নীলবিষ চারদিক।
কবে কবে তুমি কোন মধুস্বার্থে কার কার স্বর্গ ছিলে
ওসব পুরানো পাণ্ডুলিপি—নতুন কবিতা নিশুতি চুম্বন
কোলে-চড়া জ্যোৎস্নারাত—
কত সহজেই পেয়ে যায় পলিমাটির দখল নষ্ট অধিপতি,
কপালে জয়ের তিলক, মনের গহিনে এ তবে কিসের দংশন!
এত বেশি ভুল! বলা হয় না কখনো কিছুতেই এইসব কথা।
ভরাট নদীর মতোন কতো যে বাঁক খায় প্রেমের শরীর
জলের জলকেলিতে সাদা হাঁস ছাড়া কে বোঝে সেসব আর!
সময় এমন—মেঘলা আকাশে ডুবে যায় বুকপাতা পলিমাটি রোদ।
জুঁই চামেলি রজনীগন্ধা পূজোধ্যানে মগ্ন
ভাসুরেরা এখন দেবতা মহাপবিত্র—মগ্ন সুখ ও স্বপ্নে
এভাবে এখন নিজেরাই কেউ কেউ লিখে নেয় নিজের ভাগ্যলিখন।
কতবার ভাবি কিছুই বলবো না, তবুও বলি, কেন যে বলি!
কেন যে নিজেই নিজের সর্বনাশ ভালোবাসি!
ভালোবাসলেই খুন হতে হয়
সহজেই হত্যা করতে আমাকে দুপুর বিকেল যখন ইচ্ছে
আমিও তো বুক পেতে বসে থাকি
সুন্দর একটা খুন হবো বলে;
তুমি ভালোবাসার সুঘ্রাণ পাপড়ি দিয়েছ
ওগুলো শাণিত ছুরি—এখন বুঝতে পারি সহজেই;
তুমি সহজেই কত আরাম আয়েশে দারুণ খুনের প্ল্যানে
চুমুতে বিষাক্ত বিষ ঢেলে দাও!
আমি তো সরল বিশ্বাসে আমার সবুজ জমিন বুক
মিহিন ঠোঁটের পলিমাটি পবিত্রতা
নিখাদ নিশ্বাস নদীর কাঁপুনি দিয়েছি তোমাকে;
সেখানে তোমার ইচ্ছেরা শাণিত ফলায় চাষ করে যৌবনা জমিন;
এর থেকে বেশি প্রেম জানিনি কখনো—চাইওনি,
সেখানে পাতক তুমি—খুনের চুম্বনে গোলাপের গল্প করো।
তুমি খুব সহজেই তো হত্যা করতে পারো
দুপুর বিকেল নিশুতি যখন ইচ্ছে;
খুন হবো বলে বুক পেতে বসে আছি নিখাদ মাটিতে।
ভালোবাসলেই খুন হতে হয় প্রতিটি নিশ্বাসে প্রতিটি চুম্বনে
এত সুন্দর যে তুমি বুঝিনি কখনো চমৎকার প্রাণঘাতী!
মরমি আত্মার রঙ
নদীতিকা এই দেশে নিজেকে নিজের অতলে হারিয়ে
হাওর-বাঁওড় পীর-মুর্শিদের সাধন সংগীতে
সবুজ জলের যৌবনা জীবন শুদ্ধতার ধ্যানি
ভোরের আলোতে জেগে থাকে সেই পিপাসায় ;
মরমি জীবনে সবুজ প্রচ্ছদ প্রথম এঁকে দিলে তুমি।
কাদামাটি উর্বরতা পবিত্র প্রার্থনা সরল কৃষকের
দোল-খাওয়া সবুজ বেণি
নিষ্পাপ দুচোখে ভেসে যায় দূর দিগন্ত বিস্তৃত
এই দেশ এই পলিমাটি
কবিতার শব্দে চিরকাল মুগ্ধ মৌতাত জননীভূমি
ধুলিবালি জল ও নিশ্বাস বাঁচে অধরা আত্মায়—
. বললে প্রথম তুমি।
নদীতিকা এই দেশে গড়াই নদীর মুগ্ধ কবি
সযত্নে সুন্দরে খুঁজে নেয়
কবিতার অজস্র শব্দের গহিন সবুজ যৌবন
যেনো এক ধ্যানী পেয়ে যায় আনন্দ বিস্ময়ে হাছন লালন
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল উজান ভাটিন জীবনের সংগীত;
. দারুণ তৃষ্ণায় প্রথম আঁকলে স্বদেশের মরমি আত্মার রঙ তুমি।
তুমি নিজেই দারুণ নগর
শৈশবের সবুজ মাঠের আলপনা আঁকা ছবিতে তোমার
মাঠের পর মাঠ দোল-খাওয়া রূপশ্রী বেণি
দুলছে যৌবনা স্বপ্নমৌতাত প্রেম;
বাতাসে কী এক মায়াময় মাদকতা ঢেউ খেলে
ভেসে যায় হৃৎকম্পন নগরের অলিগলি
জীবনের গান আনন্দ বেদনা নিজের ভেতর নিজেরই লুকানো
উচ্ছ্বল মায়াবী চোখে সবই ঢেকে যায় কলাপাতা দুঃখে।
ভাঙা ভাঙা কাশফুল মেঘ নুয়ে পড়ে তোমার ছবিতে
সুন্দরের স্নিগ্ধস্পর্শ পেতে কপালের লাল টিপ
তোমার দীঘল খোলাচুল মুখভরা মায়াবী হাসিতে;
ঝড়ের বৈশাখ আছড়ে যে পড়ে
শরমের ভাঁজ ভেঙে
তোমাকে চেয়েছে দেউলে তো আলোকরশ্মির গতিতে।
তুমি তো দূরের গহনে কবিতায় ধ্যানে ধ্যানী—তোমার ছবিতে
শাড়িতে জড়ানো পলিমাটি তনুশ্রী শরীর
কবিতার অধিক কবিতা—নিশুতিকা প্রার্থনায়
ব্যাকুল পিপাসা—পিয়ানোতে বুঁদ হয়ে আছে যন্ত্রণাদগ্ধ হৃদয়
নিদ্রাহীন চোখ—তোমার ছবি তো ছবি নয়
ভালোবেসেছ যে তুমি দূরের দোয়েল;
তোমার চোখের ভাষা সে কথা বলেছে সরল রাত্রিতে।
তুমি নিজেই দারুণ নগর হয়ে উঠেছ ছবিতে
ঝড়ের রাত্রিতে ভাঙছে শহর গ্রাম মন-মন্দির প্রাসাদ
তোমার চোখের গহনে তৃষ্ণার নদী কথা কয়
জেগে থাকে মুগ্ধতায় কবিতার শব্দ বর্ণ—
ধরা যায় না কিছুতেই;
ছবি হয়ে ভেসে এলে ঢেউআঁকা যৌবনা দুপুরে
ছবিগুলোর ভেতর থেকে জেগে মানবী শরীর
কেউ দেখেনি কখনো সেই প্রাণ উচ্ছ্বল তরুণী
পুষ্পিত হৃদয়ে কীভাবে দিয়েছে মোহনার গান জীবনতরীতে।
কতো নদী কতো বাঁক শেষে অবশেষে
খরায় পোড়া পিপাসায় বৃষ্টি ও বন্যা আসে
প্রাণের গভীর আকুতি পেয়েছে জীবন এমন সুন্দর ছবিতে
বিরান জমিনে জমে পলিমাটি উর্বরতা
বুক বাঁধে কৃষাণী নতুন প্রেমে—ঘর ভরে যাবে সুখের ফসলে।
সুন্দর অচেনা কালের ভেলায়—চেনা অচেনায়
বসতি জনমভর—সুন্দরেরা কী এমনই!
চিরকালের অধরা নদীর গহীন গভীর কান্না
বলেছি তোমাকে দীর্ঘরাতে;
এইসব কথা লেখা আছে আঁকা আছে সবুজ আত্মার কবির ছবিতে।
ঠিক এরকম নয়
স্বার্থের ছোবল অদ্ভুতরকম ঘরের উঠোন থেকে রাজসিংহাসন
সত্যিকারের মানুষ ঠিক এরকম নয়,
অন্য কোন রকম হয়তো!
নদীকে দেখেছি রোগে শোকে বাঁচামরা হয়ে নিজের দুঃখকে
নিজের বুকেতে দিয়েছে কবর—তবুও
তার পাশে যখুনি যে দাঁড়ায় বেলা-অবেলা
কখনো কাউকে ফেরায় নি;
বৃক্ষের ছায়ায় কত রোদ্দুর দুপুর কেটে গেছে
কত পথিক-মহাজনের—কত ছায়া দিয়েছে ক্লান্ত শরীরে
কখনো করেনি হিসাব—করেনি চাতুরি অঙ্ক;
দোয়েল কোয়েল ঘুঘু বউ কথা কও
কত গান দিয়েছে মুগ্ধতা
কত পুষ্প কত লাবণ্য ও ঘ্রাণে সঁপেছে সুন্দরে
কত পাহাড়ে মিলেছে বুক কত আকাশ প্রেম ও অভিমানে
আছড়ে পড়েছে প্রবল প্রপাতে মাথাকুটে কেঁদেছে কতো যে
বুকে বেঁধে নিয়েছে পাহাড় সেই বেদনা আপন করে।
মানুষের কাছে মানুষ কেন যে বেদনার নীলখাম
মানুষের কাছে মানুষের কেন এতো দুঃখসমুদ্র
মানুষের কাছে মানুষের কেন যে কষ্টের বিষাক্ত ছোবল
মানুষে মানুষে কেন তবে প্রতারণা নীল দংশন
হাওর-বাঁওড় নদীনালা শাপলা ফুল
গ্রাম-শহরের অঁকাবাঁকা পথ
আনাচে কানাচে উড়ে বেড়ানো চড়ুই
কাদামাটি পলিমাটি উর্বর জমিন
বেণী দুলানো ফসলের মাঠ
রমণীর শরীরের মতো ঢেউখেলা নদী
জীবন জড়ানো পবিত্রতার কবিতা সুন্দরের শিরোনাম
এখন মরণঘাতী বিষে নীলবর্ণ শরীরে মরণ শ^াসকষ্ট
নদীতে দখল—ক্ষতবিক্ষত রমণী শরীর
একান্নবর্তী উঠোনে দখলদারিত্ব—
গোখরা সাপের ভয়ঙ্কর খেলা
স্নেহ-মমতা-ভালোবাসায় দখল নিয়েছে স্বার্থের দারুণ ফণা
হাওর-বাঁওড়ে দখলের লাঠি সুউচ্চ প্রাসাদ
হাছন লালনে অপশক্তির দখল
মাথামোটা রাজনীতিকের দখলে রবীন্দ্র-নজরুল
ধবধবে চেহারার দখলদারেরা দেশপ্রেমের দরদী গল্প বলে
এদের সবার মুখশ্রী ও শরীর মানুষের মতো—
সত্যিকার মানুষই ভেবেছি;
এই ভাবনায় এখন নিজের কাছে নিজেরই অজস্র প্রশ্ন।
এরা কি সত্যিই মানুষ!
তবে নদী কেন দুঃখ পায়
ফুল-পাখি-প্রজাপতি কেন দুঃখ পায়
মর্ত্য ও আকাশ কেন দুঃখ পায়!
আস্থা ও বিশ^াস চেতনার টকটকে লাল গোলাপ পাপড়ি
পদদলিত সহজ সরল জীবনপথের মুঠোভরা স্বপ্নে।
নদীকে জিজ্ঞেস করেছি সত্যিকারের মানুষ দেখতে কেমন!
বৃক্ষকে জিজ্ঞেস করেছি প্রকৃত মানুষ কেমন!
আঁকাবাঁকা জীবনপথকে জিজ্ঞেস করেছি নিখাদ মানুষ কেমন!
পাহাড় ও আকাশকে জিজ্ঞেস করেছি খাঁটি মানুষের স্বরূপ কেমন!
সবাই রক্তাক্ত বুক দেখিয়ে বলেছে—আমাদেরও একই প্রশ্ন;
সত্যিকারের মানুষ ভেবে যাদের দিয়েছি বুক পেতে
সবাই প্রেমের নামে খুন করে নিয়েছে দখল সরল মাটির;
সত্তাহীন এই বেঁচে থাকা যেন পরিচয়হীন গণধর্ষিতা সুন্দরী নারী!
এখন কেন যে মনে হয় সত্যিকারের মানুষ ঠিক এরকম নয়
স্বার্থের ছোবল অদ্ভুতরকম ঘরের উঠোন থেকে রাজসিংহাসন।
সত্যিকারের মানুষ ঠিক এরকম নয়, অন্য কোন রকম হয়তো!