১
কিছু না।
না, প্লিজ কিছু বলো, তুমি কিছু একটা লুকাচ্ছো।—বলো,
ওই যে এতিমখানা মোড়ে একটা বড় রেইন ট্রি আছে না?
—নাই।
ধুর আমি তো ওইদিনও দেখলাম, স্বপ্নে। সবগুলো পাতার
ওপর টকটকে কালো কালো পাখিরা বসে বসে, হেমায়েত
মামার কাছে চা অর্ডার করছে। সত্যি! বিশ্বাস করো দেখে
নিও তুমিও, যেদিন ফের চা খেতে আসবে আবার!—নকু,
অবশ্য আসবে কিনা, বলতে পারিনে। ওর সঙ্গে আমারও
ঝগড়া হয়েছে কি না!
—তুমি ঝগড়া করো? ছিঃ!
ঝগড়া! আরও যে কতকিছু করি! আরও কত কিছু করতে
যে, করতে পারিনে! ধরো, লিফটের আয়নার ভেতর থেকে
মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে, নিজেরে টাইনা বের করি। কাঁচের
দুনিয়াডারে ভেঙে চুরমার করে দেই! তারপর মেঘ জোড়া
আকাশ দেখলে ফুঁ দিয়ে মেঘ উড়াতে ইচ্ছে করে। পারিনে!
২
আচ্ছা, তোমার ওই সবুজ বাসটার কথা মনে আছে?
যেইটাই এক দুপুরের রোদে সিদ্ধান্ত না নিয়েই, তুমি
আমারে নিয়া উঠে গেছিলে।
—তাই?
হুঁ। আমার তো তাইই মনে হয়। ওইদিন তুমি রোদে
আরও লাল হয়ে যাচ্ছিলে। আর তোমার মুখের পাশ
দিয়ে হীরের মতো জ্বলজ্বল করছিল নোনাজল! যেন
ভীষণ মায়াবী শিশির!
—তোমার মাথা! কীসব আজগুবি কথা যে বলো না!
আজগুবি! —ও, সূর্য যে রোদ দেয় ওইটারে আজগুবি
বলে মনে হয় না! সে তো ওইদিন তার রথই থামিয়ে
সময় এলামেলো করে ফেলছিলো, ঘড়িতে বিকেলের
কাটা ঘুরলেও আলোতে মধ্যদুপুর কেন ছিলো বলো?
৩
জানো,
হাতিরপুলের কাঁচাবাজারে, না কালকে হাতির মাংস
কিনতে গেছিলাম! পরে কি মনে করে য্যান বকফুল
কিনে বাসায় ফিরছি।
—কেন? হাতির মাংস পাও নাই, বুঝি! আহারে।
শোনো ঠাট্টা না, হাতির মাংস না পাওয়ার দুঃখে তো
আমি বাসায় এসে বসে আছি বারান্দায়, ভাবছি হাত
দিয়ে হাতি আর এ জীবনে বুঝি খাওয়া হইলো নারে!
—তুমি, সত্যিই সত্যিই হাতির মাংস খেতে পারবা?
মাংসের আবার হাতি কী? মাংস মাংসই! তোমারও
তো মাংস খেতে ইচ্ছে করে! আমার না মাঝে মাঝে
তোমার মাংসও খেতে ইচ্ছে করে! রান্না করার তরে
সে মাংস কাটাকুটি ছাড়া কি খেয়ে ফেলা সম্ভবপর?
৪
শোনো—
‘আমার মন পড়ে রয় রমনায়, আর অফিস আসমানে
আচ্ছা, তোমার কি আর ইচ্ছে করে যাইতে ওইখানে?’
এই প্রশ্নটার মানে কী?
মাত্র না, জিকোর তোলা গোধূলী লগ্নের এক লালচে
রঙা আকাশ দেখলাম! খুব তোমারে জানানোর ইচ্ছে
করছিলো, চিৎকার করে বলতে চাইছিলাম, —লক্ষ্মী,
এখনি আকাশের দিকে তাকাও, শুভ লগ্ন বয়ে যাচ্ছে!
যাক! তোমাকে জানানো হলো না! জানানোর যন্ত্রণা,
না দিয়ে বরং আশা করে থাকা যাক। কোনোদিন ওই
আশ্বিনের গোধূলি তোমার সিঁথিতেই জ্বলজ্বল করবে!
এসবের মানে কী, — কেন?
‘আমার মন পড়ে রয় রমনায়, আর অফিস আসমানে।’
৫
মনে হয়
তোমার কাছে যদি চুপচাপ বসে একটা দুপুর কাটাতে পারতাম
একটা নদীর পাড়ের ছাতিমতলায়। ধরো, নদীটা আন্ধারমানিক!
—এ আবার কেমন নদী?
জানিনে।
এই যে ঘোর হতাশার কাল ঘিরে ধরছে আষ্টেপৃষ্ঠে, ক্রমশ তার
বীভৎস সুর পা থেকে মাথায় যাচ্ছে বেজে অবিরাম। ঢেকে যায়
চোখের সামনের রোদ। তখন তোমার কথা ভেবেই না, এইসব
আলো আসে। তুমিই তো আন্ধারমানিক, আমার! ছাতিম তলা।
—আবার শুরু হলো! থামো, থামো।
থেমেই তো যেতে চাই। মৃত্যু কেন নিশ্চুপ, জীবনের পরে পড়ে
রয় দীর্ঘকাল। শুয়ে—বসে সমস্ত স্বপ্নের উপর সে কেন আয়েশে
দখল নিয়ে নেয় মাতালের একঘেয়ে সুখে?