অমর্ত্য
নভেম্বর রেইনের আগে,
এমন একটা অক্টোবরের রাত আসবে তোমাকে স্মরণ করিয়ে দিতে—
কে জানতো?
কতগুলো চিন্তার শৃগাল শূন্যে হেঁটে গেলো শুধু,
মাংসের বিশ্বাসে আমি মুখে পুরে নিলাম সিলিকনের স্তন।
কেমন থাকো আজকাল ছদ্মনাম?
মহাকালতুল্য বিশালতার পাশে—
আমাদের পরিচয়ের সামান্য সময়টুকু আলাদা হয়ে ওঠে কী?
পরিত্যক্ত ক্যারাভানের জঞ্জালে নাকি গ্যারেজের পেছনে,
জংয়ের শেষসিঞ্চন বাজার অপেক্ষায়, ফেলে দিয়েছ ওসব ডেটা?
ঢুকে গিয়েছ অন্য কোনো সংসারে—
কারু বুকের বায়োলজিতে খুঁজছ আমার সহায়-সত্তা?
শোষণের দুর্নিবার সেতারে—
রোমন্থিত চোখের শিরায় শল্য গেঁথে, পুরনো হচ্ছ তুমি।
তোমার হারুকি মুরাকামি আর জীবনান্দের ছাদনা তলে—
পালিত সাত মিনিটের ওই যৌবন,
কার অ্যানাটমিতে দিয়েছ সঁপে?
ফালিফালি শাড়ি প্রসব বেদনার মতো ধরে রেখেছে শরীর,
লুণ্ঠনে আসছে না কোনো সুন্নী?
কাজলের কাড়াকাড়ি মানিয়ে নিতে পারেনি কোনো ওয়াহাবি?
গজলঘরের কিন্নর থেকে এক সরোজিনীর খরস্রোতপুষ্ট অন্ধকার দিয়ে—
তুমি এসেছিলে আমার প্রয়াণে।
প্রাণে বাঁচতে যতবারই কড়া নেড়েছি দরজায়—
ভিটেসুদ্ধ তুমি ততবার পালিয়েছিলে লাইলাতুল নিয়নে।
আমার নাম, আমার চৌদ্দগুষ্টীর কন্টাক্ট টুকে রেখেছিলে ফোনে।
প্রত্যহ, অন্তত দুই লক্ষ নিবেদনে একবার দেখা মিলতো তোমার,
অথচ এখন চাইলেই সকাল-বিকাল তোমায় দেখতে পাওয়া যায়—
ভার্চুয়ালের এই মাইজভান্ডারে!
তোমাকে পাওয়া যায় ফেলানী,
হাহাকারের কাঁটাতারে ঝুলন্ত বিজ্ঞাপনে।
চেহারায় মূলতানির সারল্য মেখে,
ছিপছিপে হোস্টের ভেতর ছাড়া প্রস্থানের এত কূট কোথায় পেতে সরীসৃপ?
চেয়েছিলাম টাইট জিন্সপরা শহুরে মেয়েদের ভিড়ে—
একটুখানি গ্রামীণ বর্ণাঢ্য।
কোমরে বিছা পরে মাঠকে মাঠ ছুটতে থাকা অশান্ত ফুল,
অল্পেই হেসে কুটিকুটি হওয়া এক বেহায়া,
যার শেষ কক্ষপথে,
গাঁজা সেবনের তাড়নায় হাত পা ছুড়বো আমি।
রাতের সিঁদ কেটে,
জিভে কথার কাকলি এঁকে—
তোমাকে চেয়েছিলাম কাঁদানে গ্যাস,
তুমি যে রাবার বুলেট, ঢুকে পড়েছিলে আমার নরম গোশতে।
এক্স-ওয়াইফ
আমার মা রক্ষণশীল। স্ত্রী কমিউনিস্ট—
তার গর্ভে জন্ম দিতাম হেভি মেটাল গিটারিস্ট।
দ্বিতীয় পুত্র জিউস,
বিরলকণ্ঠে—ভোরসকালে কোরান পড়তো রোজ!
স্ট্রিংয়ের করাঘাতে, দরাজ তিলাওয়াতে—
সন্ধ্যার মাঝেই ভেস্তে যেতো ভিজ্যুয়াল,
মাগীখারে লিবারেল, ছেড়ে দিতো হেঁয়াল।
বাঞ্ছনীয় পরাজয় নিয়ে নিম্নগামী গোধুলিতে—
তারা গাজা টানায় বসতো ছবির হাঁটে।
আর ‘শুওরের বাচ্চা’, বলে
যখনই এগিয়ে আসতো আঠেরো কোটি লাথি!
‘বাপ! বাপ!’ করে ক্ষমা চাইতো ওরা,
কাছা ফেলে পালাতো, নিকটস্থ পতিতাপল্লী।
ছাগলের রানে, ওই গরুদের থাইয়ে আমিও ঝুলে ছিলাম।
জনৈক এক সেকুলারের ফায়ারপ্লেসে—
পাঁচতারা দোজখের ডোমঘরে,
আমাকে আলগা করতেন প্রগতিশীল কসাই।
কলাবিদগণ, মাথায় জ্বালাতেন নাকি রোশনাই
নিউরনকে ভাবাতেন গুটি!
অথচ প্রকৃত পাঠক মাত্রই বোঝেন, আমলের মূল টেক্সচার,
ক্যারিশমাটিক শেফা যিনি লিখেছেন হায়ারোগ্লিফি—
তিনি ব্যতীত বাকীরা ফলস, বুচার!
একটু দিশার খোঁজে একসময় কপাল ঠুকবেন ঠিকই!
যত্রতত্র, মনিহারি দোকানে, অ্যাবস্ট্রাক্টস বা হাই হিলস্-এ
মুখ ঘষবেন বিভ্রান্ত ঠোঁটে।
কেননা, ট্রু ফুডের সন্ধান পেতে,
আপনাকে খেতে হবে খেজুর পাতার হাওয়া!
যেতে হবে হেরা, হিজজাম মরুভূমি।
ইয়েমেন ঘুরেফিরে, মোজেসের শহরে,
ইব্রাহিমের নিক্ষিপ্ত নুড়ি,
দেখবেন, এখনো ছোঁড়া হচ্ছে মিনা প্রান্তরে!
শিকার
ফ্যাসিস্ট পাণ্ডাদের চক্রান্তে—
শেষমেশ ন্যাশনালিস্টরাও জব্দ করে ছাড়লো আমাকে।
মিডিয়াম রেয়ারে শরীর তাজা কাদায় খুঁজে পেলাম নিজেকে।
ঘাড় তুলতেই দেখি,
লক্ষণে কতগুলো উজবুক কচু খাচ্ছিল সেখানে, তন্মধ্যে,
বুদ্ধিজীবী গোছের এক পাঠা,
আমাকে ইশারা দিলেন বামের বস্তাপচা গলিটা,
যার প্রবেশদ্বারে লেখা—
‘অবিশ্রান্ত অশ্রুপাত তুমি অখণ্ড অবসরের।’
ফটকে ঢুকতেই শালা অর্ধেক পা কচুরিপানায়,
পাঁচ সাতজন ফেমিনিস্ট উদ্দাম জলকেলিতে মত্ত!
মমবদনখানি চিনতেই লজ্জা সংবরণে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন সবাই।
আমি কোনোমতে ডাঙ্গায় উঠলাম৷
পাড়ের চৌদ্দ-পনেরো বয়স্ক সিস্টার, সুমিষ্ট ভাষায় বললেন,
‘‘পিটিয়ে, ‘বাড়া’ থেতলে দেবো, হাতুড়ির ভার কত জানিস?
ডানে ফুট, বাঞ্চোত!’’
জবাবে আমি তাকে ধন্যবাদ দিয়ে, ডানের রাস্তা মাপলাম৷
কয়েক কদম পেরোতেই শুনি,
শিংছাড়া তিন ওয়ায়েজ স্ত্রী জাতির বিষোদাগারে মজে আছেন,
অডিয়েন্সদের হাততালিতে মুখরিত জায়গাটার গগন!
এমনকি ফেডারেল গভমেন্টের জামিনদারও আসীন চেয়ারে!
দুজন অ্যানার্কিস্ট শোভা পাচ্ছেন মূল স্টেজের বাইরে,
সালুর পঞ্চাশ হাজার আলোকবর্ষ দূরে—
দশটা লেফটিস্ট রাগে ফুঁসছেন! রণসংগীত গাচ্ছেন,
কখনো আবার
‘তুমি নামাজ পড়তে—আমি বাল ফেলতাম’ গোছের চোস্ত বিপ্লবীবাণ
তালুতে থুতু মেরে থাপ্পড় আগাচ্ছেন কেউ কেউ!
কাণ্ড দেখে আমি হাসলাম। আমার সঙ্গে নিহিলিস্টদের পিলগ্রিম,
উনারাও হাসলেন তারস্বরে।
হাসির শব্দে বিচলিত ছয় সাতজন ক্যাপিটালিস্ট!
হঠাৎ ঘিরে ধরলেন আমাদের।
‘চুদির ভাই’ বকতে বকতে, বেধড়ক পেটালেন গণহারে৷
কারু পাছার মাংস, কারু পিঠের সামান্য রেখে,
পরনারী সমেত তারা পশ্চিমে রওনা দিলেন অবশিষ্ট ছাল নিয়ে।
লক্ষণে কতগুলো উজবুক কচু খাচ্ছিলো তখনো! তন্মধ্যে,
বুদ্ধিজীবী গোছের এক পাঠা,
আমাকে ইশারা দিলেন বামের বস্তাপচা গলিটা!
আরও পড়ুন: নির্বাচিত নবীনের কবিতা