মায়াবক
হেমন্তের স্বর্ণসন্ধ্যা; পুরাতন স্মৃতি খুলে দেখি, আজও প্রজ্ঞাময়—নিখিল মনভূমি, যার প্রান্তে আছ তুমি; আমি প্রতীক্ষায় দীর্ঘায়ত নদী, ম্রিয়মান, কায়ক্লেশে বলি: উড়ে গেছে যে সময় গভীর অরণ্যের দিকে, না-ডাকিও তাকে, না-দিও মহত্ব অস্তিত্বের কোনো ছত্রে, একপায়ে মায়াবক সারি, নবান্নের বেদনাবাহিত জল, বলি পুনর্বার: ভালোবাসি।
দূরতম ভ্রমণে কীর্তি না-থাক, ফেনিয়ে ওঠে দুর্বোধ্য লুকোচুরি; মৌলিক অভিগমন থেকে উড়ে আসে যৌবনের জাগরণ ও মিথ; যার একপাশে নিশ্চুপ শুয়ে থাকে যৌথ পাণ্ডুলিপি, অসহায়, নিরাবেগ।
চোখে যার উঁকি দেয় ধ্যানি মায়াবক, ভালোবাসি তাকে, বিশুদ্ধ আত্মার পাশে ভবিষ্য রাগিনী সাধে—অঘ্রাণের নির্জন জলশ্রী; শুনতে পাও?
এইসব অধৈর্যের দিনে
জেগে উঠি প্রাণে ও পল্লবে—
দুপুরকে স্মৃতি ভেবে এগিয়ে দাঁড়াই;
সামনেই গন্তব্যের ট্রেন একেবেঁকে চলে যাচ্ছে
কার্তিকের দূর মাঠে; দেখি—
মধ্যবয়সী একটি ছাদে কুয়াশার ঘ্রাণ
গাঢ় স্বরে ক্রমশ সরু হয়ে যাচ্ছে, আর
আমি খুঁজে যাচ্ছি, তবুও, কোনো এক আলোকগ্রন্থ,
সেখানে হয়তো লিখিত থাকবে
চুম্বনক্লান্ত সময়ের পরাবাস্তব ইতিহাস!
কোথাও হয়তো বাজছে, মৃদুলয়ে, সন্ধ্যাগীত
বিষণ্নতার সংগোপন ছায়াও তৈরি,
মানুষ শুধু জানতে পারছে না, এঁকে যাচ্ছে কারা
এইসব অধৈর্যের দিনে—শান্ত উপকথা!
মায়াবতী, দেখো জেগে উঠেছি নতুন পল্লবে
শুভেচ্ছার পৃষ্ঠা ছিঁড়ে সুঠাম একটি দিন পেড়ে আনো…
পাপ ও পঙ্ক্তি
লতানো আঙুর গাছ—চেয়ে থাকে ভিমরুল হাওয়া, কার্তিকের নির্জন এ নিধুবন, সখি, চতুর বাঁশিতে খোলে;
আশ্চর্য সুরদহ তার, বেদনায় নত হতে হতে ক্রমেই বাড়িয়ে দেয়—তোমার প্রতীক্ষা!
দেখো, বেঁকে যাচ্ছে রাত—উত্তরের কলস্বরে; সম্ভাবনার ফুটি ফুটি কুঁড়িও তাকিয়েছে উজ্জয়িনী অভিমুখে; হয়তো-বা, সেখানেও পরিপাটি বিভেদের মদ, অধ্যাবসায়ের কিঞ্চিত ঘোরে হামা দেয় পথের প্রফুল্ল!
আমাকে নিষেধ করো না; পাপ ও পঙ্ক্তির চাদর সরিয়ে ঘুরে দাঁড়াবো ফের; অনন্ত আঙুরের কৌতূহল নিবৃত করেই যাবো তোমার দিকে; তরুণ অঘ্রাণের কূলে, বোঝাপড়ার পারদ ঠেলে, যে তুমি—গোপনে ভাঙছ।