উত্তরবাঁকের মেঘ
উত্তরবাঁকের মেঘে জ্বলে ওঠে চান্দের আন্ধার
জলসত্রে নোনা জল। নদীতে বৈশাখ।
দুই ফর্মা মেঠোপথে গলে পড়ে মুদ্রিত আকাশ!
এসো সখী রজকিনী, জলসত্র খোলো
হাঁটু গেড়ে বসে আছি হাছন-লালন।
অসুখী বয়সী রাতে ভেসে যাচ্ছি ধূলোস্রোতে আমরা কজন।
রাতগুলো ক্লান্তিহীন। সিলিংফ্যানের হাওয়ারা—
কেঁপে কেঁপে ঘুমুচ্ছে দেয়ালে।
শুধু আমরা কজন নির্ঘুম চাঁদের সঙ্গী।
বসে আছি পবিত্র নরকে। পান করে গলিত জোছনা আর তার
অপরূপা রূপ।
আমরা সমুদ্রগামী। বৃত্তাকার জলবৃন্তে জেগেছে বাতাস।
অসীম জটিল জলে ডুবছে হৃদয়।
আমার বুকের নদী ঢেউ তোলে আজ কারো তিল বরাবর!
পাড় ভাঙে। ঢেউ ভাঙে তোমার ঠোঁটের কোণে তীব্র আলিঙ্গনে।
চুম্বনে অনীহা বুঝি! চুলগুলো দ্রোহী হয়ে উঠছে এখন।
চুলগুলো মেঘরাতে বয়স্কশ্রাবণ।
কারা আজ পাঠ করে কুয়াশার শ্লোক?
একরত্তি স্বপ্নবাজ খরার মৌসুমে
নির্বিরোধী পঙ্ক্তির বাসর শয্যায়
ডেকে আনি বন্ধুদের দৃষ্টির অঙ্গার।
পৌরাণিক জলসত্র হেঁটে যায় ঘুমন্ত নগরে।
আমাকে ডেকেছে দিঘি—জলের বাকল।
সন্ধ্যারে করেছি মানা বিচূর্ণ বাতাসে—
যেন তার খোঁপা থেকে আন্ধার না ঝরে
নিষেধ মানেনি সন্ধ্যা; শিখেছে ছলনা।
আকাশে ওড়ে না ফড়িঙ—পোড়ে না হৃদয়
রাধিকারা জলপরী পরকীয়া রাতে।
অনুজ্বল দিগন্তের ফ্রেমে বসে ছবি আঁকে সতর্ক স্বকাল।
আমার তুলিরা মৃত।
পাহাড়ের আন্ধারেরা পাথরের অশ্রু মুছে দেয়।
অযথা বিকেলগুলো নষ্ট হলে ঈর্ষাতুর মেঘের পাড়ায়—
আজ আর বৃষ্টি হবে?
বহুবার কবরের সুনসান নীরবতা ভেঙে আমি
জেগে উঠি—
জেগে ওঠা সমকালে অতীতের দ্রোহী ক্ষুদিরাম।
আমার সামনে দ্রুত হেঁটে যায় শহরের প্রধান সড়ক।
লাফিয়ে ওঠে ঘুমন্ত বাড়িগুলো।
উড়ে যায় জানালার কাঁচ।
ক্লান্তি জমে রঙহীন ধূলোর বিকেলে
আর ধূলিজোছনায় স্নান করে আয়নার পুরাণশকুন।
হারমোনিয়ামে গলা সাধি মৃত লখিন্দর;
আমার লাশের গন্ধে বিব্রত ঈশ্বর কাঁদে বেহুলার কোলে।
চিঠি আসে। নীল খামে।
খামের ভেতর জাগে অবেলার ঘুম!
এ-ই ঘুম খরস্রোতে ভেসে যাবে আজ!
যদি ভেসে যায়—শিশুঘুম—
প্রৌঢ়রাত্রী বেড়ে যায় অন্ধকার রাতের সমান।
ভরা জোছনার ঢেউ ভাঙে রজঃস্বলা রাতে
আর আমি—
হেটে যাই—
বাঙলার মেঘগ্রামে গান গেয়ে একালের অতুল প্রসাদ।
আরও পড়ুন: দীর্ঘ কবিতা