উচ্চমাধ্যমিক বর্ষা
মাঝে মাঝে মনোযোগ ছাড়াও আকাশের দিকে চোখ যায়
দেখি, না-ফেরা মেঘের মিছিল
মেঘ দেখে প্রেমে পড়ার ঘটনা শার্ল বোদলেয়ারকে দিয়েই শুরু
মেঘবরণ চুলের কথা কে না জানে
একদিন বৃষ্টির দিকে চেয়ে দেখি ভিজে যাচ্ছে মেঘবরণ খোঁপায় ফোটা
কামরাঙা ফুল-ফলের বাগান!
বাজ ও বৃষ্টি নিকট আত্মীয়
এই সত্য আগে জানলে সাহারা’র দিকেই যেতাম!
তখন উচ্চমাধ্যমিকের যাত্রা শুরু—
টিনচালা’র নিচে আমাদের সঙ্গে বর্ষাও নাম লেখালো।
আষাঢ় শ্রাবণ ছাড়াও সে নিত্যদিনের সহপাঠী
যখন তখন কেমন আনমনা স্যোনাটার সুরে বেজে ওঠে
আর আমরা হেঁড়ে গলা ছেড়ে দিয়ে কোরাস ধরি
ভাবি, সেচকার্যে বাড়তি সময়-শ্রম দেয়ার দিন ফুরোলো!
এই স্বপ্নে বিভোর হয়ে গ্রীষ্মের শেষভাগে
বাদলদিনের কদম’রা ফুটতে না ফুটতেই
বর্ষার হাতে পড়ে গেলাম…
ছাতার ব্যবহার তখনও অজানা!
এক সন্ধ্যায় ছাতা হাতে যাবতীয় প্রতিকূল আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে
শহর-বন্দর এমনকি বনপথেও খুব করে বর্ষাকে খুঁজলাম
এদিকে শ্রাবণও যায়
তবু বৃষ্টির দেখা নাইরে…
হাইনরিখ হাইনে, তবু বেঁচে থাকা…..
For sleeping is good, but Death is
Better steel
The best is Never to be born at all
কি পাথর ছড়িয়ে আছে চোখে ও চোখের দূরে কাছে
কি বিহ্বলতা আর বন্ধুপ্রাণ শব্দকথা!
একদিন হিরণ্যবাউলশালায় কবিতার কোরাস আর
বিবাগী বেহালার এপিটাফে জেগে উঠলাম শ্মশানের নীরবতায়
এই যে বেঁচে আছি, থাকা বা না-থাকার চারণদোলায়
জ্বলে জ্বলে অঙ্গার হই…
বিস্মরণের আগুনে নির্বাক জ্বলে ওঠে জন্মধ্বনি
লোনাজলতীর্থে স্নানে আসা নদীরা নিয়ে গেছে সব ব্যথার কবিতা
তবু শূন্যে লুণ্ঠিত সরোবরে জ্বলে জ্বলে নিভে যাচ্ছে
নাগরিক তারার মিছিল।
শিশিরের সাম্পানে―
আমরাতো বাজাতে চেয়েছি ভোরমুখী ঝিনুকজীবন
ছেঁড়া জ্যামিতির গোলকধাঁধায় ডুবে থাকা অতলান্ত পাড়ি দিয়ে
পৃথিবীতে আজও ঝরনাদের ঝরো-ঝরো দেখে মুখরিত হই
আর বন্ধুকে বলি পুরাজনমের ঋণকথা―
ফিরিয়ে যদি দেয়া যেতো পিতার গৃহে জন্মসূত্রের প্রথম ভ্রূণ!
ঢাকা
নির্বিষ বেদনার ঢেউ গুনে গুনে ভুলে যাই নাগরিক সিগন্যাল
না-বিরতির হুইসেল
চেনা জানা পিচপোড়া রাস্তাটাকে বলি, শোন―
একদিন আমিও বুকে জমা এক ট্রাক
অন্ধকার নিয়ে ছুটে যাবো বুড়িগঙ্গার জলে
টেনে নেবো নিশ্বাসে ঢাকার আকাশ, যাবতীয় সিসার সমীকরণ
বাহারি বিলবোর্ডে সেঁটে দেবো ক্ষয়িষ্ণু আত্মার জলছাপ, নজরবন্দি বিজ্ঞাপন
শোনো বন্ধু অপরিচয়ের স্বজন
তোমার আমার বুকের ভাঁজে কিংখায় একই শঙ্খের অনুরণন
এই যে, নির্ঘুম ঘন-বকুলের বনসারি ও আমার বন্ধুবেশী ল্যাম্পপোস্ট
তারাও একদিন সরাইখানায় বিষাদের রূপ নেবে বিস্মৃত আত্মার স্বরলিপি হাতে
আর বারোয়ারি ডায়েরির পাতাজুড়ে লিখে যাবে অবসন্ন গানের লিরিক―
বুকের মাঝে পাথর ভারি অন্ধ যন্ত্রণার
পায়ে পায়ে ক্লান্ত পথিক দুঃখ সারাৎসার।।
জ্বলে ওঠে আগুন জলের প্রতিভায়
নিধুয়া প্রান্তরে কেঁদে ওঠে বিষণ্ণ একতারা…
আমি ও আমার ঢাকা,
তবু বাঁক নেয়া দুঃখিনীর তীরে বসে
তোমার বর্ধিষ্ণু ছায়ার ধুলোমনা পলেস্তারাকেই ভালোবাসি…
শঙ্খনাদ
নিরাশার মাঠে আঁকছি ঘাসফুল, সম্ভাব্য স্বপ্নমাতালের বীজ
ওড়ো হাওয়া অজানায়―এই মন্ত্র পাঠ শেষে চোখ খুঁজছে অন্ধ-বদ্বীপ
ঘুম পাড়ানির দেশে তবু জেগে আছি এক মহাকাল; অন্ধতীরন্দাজ
এদিকে বেওয়ারিশ ঈশ্বরের দল নেচে-গেয়ে চলে যাচ্ছে দূরগায়েঁর আতিথ্যে
ফলে সাঁইজির চোখে অপার হয়ে ঐপার দেখাই সই!
কানে বাজে আজও ঐ ধামাল―
মনের নীল মগডালে বসে আছে যে উদ্ধত যোগী-সন্ন্যাসিনী
তাকে বলি, ফিরে এসো! জাগতিক সব রহস্যসূত্রের পাঠ খুলে
ফিরে এসো এই সরল সীমায়—
যেখানে প্রণয় এসে থেমেছিল আবার শুরুর বার্তা নিয়ে
লুপ্ত আত্মার স্বরলিপি হাতে জেগে ওঠো প্রিয় শস্য
জেগে ওঠো ভোরের শিশির
এ তল্লাটে তারাজ্বলা রাতগুলো ঢাকা পড়ে আছে দীর্ঘ অন্ধকারে
দাসের পানে ফিরে চাও একবার…
শীতে সূর্যমুখী
[সমাজতান্ত্রিক স্বপ্নাতুর বন্ধুদের করকমলে]
কিছু একটা চাই এই শীতে—
লাল-নীল-সবুজ কিংবা রোদরঙা মিছিলের ঢেউ
যাবতীয় নির্লিপ্ততাকে পাশ কাটিয়ে কিছু চাওয়াটা মানবিক।
লালরঙা সূর্যমুখীটাকে দেখবো বলে লালথানে দেহ রেখে
আনমনে বসে আছি সমতলী হাওয়ায়।
আমার বন্ধুরা বাঁশি বাজায়, কেউবা উস্কে দেয় বাতাস আগুনের বিপরীতে
নিরাপদ দূরত্বে আগুন ও জলের বিপরীত ক্রিয়াকলাম দেখতে থাকা এই আমি
কখন যে ছাই হয়ে গেছি…
এদিকে বাতাসের গায়ে থোকা থোকা লাল রং ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে
আর কাঁপা কাঁপা ক্ষুদ্র দেশের রাংতা-রঙা মানচিত্র হাতে নড়ে উঠছে বিষণ্ণভূগোল
এই তাম্রলিপির গ্রহে তোর একটা ঘর হোক সখা
ঘরভরতি আগুনরাঙা সূর্যমুখী ফুল!