দাদারা গাধা ছিলেন, বাবারা বোকা
আমাদের সন্তানেরা উত্তরাধুনিক; আমাদের জীবন তাদের কাছে রূপকথার গল্প!
তারা পাখি চিনবে ই-বই পড়ে, পাখিদের গান শোনবে সেলফোনের রিং টোনে!
প্রকৃতিকে জানবে জিওগ্রাফি চ্যানেলে
সাপ-নেউল, বাঘ-বিড়াল, বানর-হরিণের সম্পর্ক জানবে ফেইবুকের পাতা থেকে।
ধান গাছে তক্তা হয় কিনা প্রশ্ন করবে।
পাটের চাষ এবং প্রস্তুত প্রণালী শিখবে গ্রেন্ড ফাদারের গল্প থেকে।
মা দিবস থেকে জেনে নেবে মায়ের মমতা
দু’একটি মাছের নাম জানবে বাজারের তালিকা থেকে
গাছ চিনতে হলে সার্চ দেবে গুগলে
সেমিনার থেকে পেয়ে যাবে সমাজের শ্রেণীবিন্যাস
সিনেমা থেকে জেনে নেবে জীবনের পালা-পর্ব
ফুলের ঘ্রাণ পাবে পারফিউম স্প্রে করে।
শ্রমজীবীদের চিনবে-জানবে চিত্র প্রদর্শনী থেকে।
গান শিখবে বা শুনবে ইউটিউব থেকে, ভিডিও-সিডি থেকে।
কাঁচা রঙতুলির বদলে তারা ছবি আঁকবে কম্পিউটারের কালারে।
বাজারের বদলে কেনাকাটা করবে অনলাইন শপিং থেকে।
জাদুঘরের গ্যালারি থেকে জানবে স্বাধীনতার কথা।
তারা বিকৃত ভাবে মাতৃভাষা বলবে কিন্তু চিনবে না মাতৃভাষার বর্ণমালা!
সবুজ মাঠের খেলাগুলোর বদলে একা-একা ভিডিও গেইম খেলবে নেটে বসে।
আহ, কি সুন্দর জীবন!
বনে যেতে হবে না, নামতে হবে না নদীতে, মিশতে হবে না মানুষের সাথে!
দাদারা গাধা ছিলেন, বাবারা বোকা!
ঈর্ষার গন্ধ
কালো পিঁপড়া আর লাল পিঁপড়াগুলো ঝগড়া করে কামড় দেয়,
বিচ্ছুটি ছুটাছুটি করে আনন্দে, সাপ এসে পায়ের পাশে শুয়ে থাকে।
বৃষ্টির পানি চুয়ে চুয়ে ঢুকে যায় নাকের ভেতর, সেই সাথে কাদামাটি
অসহ্য অন্ধকার, ভ্যাপসা গরমে নিজেরে মৃত-মৃত মনে হয়!
নিজের শরীরের পচন নিজের কাছেই দুর্গন্ধ লাগে; বমি আসে,
গর্ত খুঁড়ে শেয়াল হাত ধরে টানে, বাঁধা দেয় ঘেউ ঘেউ কুকুর।
নিদ্রাঘুমস্বপ্ন নাকি জাগরণ, বাস্তব-অবাস্তব-পরাবাস্তব কিছু বুঝি না।
শুধু জানাজায় টের পেয়েছি বন্ধুদের ইন্দ্রীয়তে জমে থাকা ঈর্ষার গন্ধ।
মাটির গর্তঘরে খালি ধুলিবালির বিছানায় কখনোই থাকিনি,
এখন লাশঘরে আছি বাধ্যতামূলক, পোকামাকড়ের স্বজন।
কিন্তু কেরামান-কাতেবিন, নেক্কার-মুনকিরদের সাথে দেখা হলোনা!
পথের কবিতা
মিশে থাকি ধুলোবালিকাদামাটিমায়ার সাথে। পথের জীবন। আহ, আমার মা মাটি আমাকে জড়িয়ে রাখে স্তনদুধের আদরে।
রাস্তাজীবন বিছিয়ে দিয়েছি দেশে দেশে বিদেশে, পৃথিবীর পথে পথে আমার ছড়ানো জীবনে মানুষের পা, কত রকমের পা।
পাগুলো, জুতোগুলো আমি আমার বুকে আগলে রাখি। কেউ কাঁটা ফুটলে আমার কষ্ট হয়। সড়ক দূর্ঘটনায় নিহতদের রক্ত
আমি বুকে মেখে করে রাখি। কাদামাটি মাখানো খালি পাগুলো আমার আত্মাকে বড় বেশি স্পর্শ করে।
আমার পা নেই, পাখা নেই। তবু মানুষকে নিয়ে যাই- নদী পথে, আকাশ পথে। যাত্রীরা জাহাজ, উড়োজাহাজ থেকে নেমেই
আবার আমাকে পেয়ে যায় কোনো না কোনো সড়কে, এভিনিউয়ে, রোডে, স্ট্রিটে, হাইওয়েতে। মানুষের ব্যবহৃত পা আমাকে
প্রাণবন্ত করে রাখে। তাদের জন্য এক পথ থেকে মিশে যাচ্ছি আরেক পথে।
মানুষকে ঘর থেকে, বাড়িকে থেকে, হ্রদয় থেকে নিয়ে যাই, যে যেখানে যেতে চায়। অনেক বোকা পথভ্রান্ত পথিক খুঁজে পায়না
সঠিক পথ, আমার কষ্ট হয়। অনেকেই পথ হারিয়ে বিপথে এবং বিপদে চলে যায়। আবার কেউ কেউ আজীবন হাঁটতে হাঁটতে
ক্ষয় করা পায়ে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে মেঘের ছায়া! অথচ জিপিএস ছাড়াই আমি সবাইকে পৌঁছে দিচ্ছি নিজ নিজ সাকিনে।
আমার রাস্তাজীবন। আমার বুকে স্ত্রীর দু’পা, সন্তানদের চার পা, ভাইদের ছয় পা; এভাবেই লক্ষ লক্ষ মানুষের কোটি কোটি পা,
পায়ের মিছিল মুখরিত করে রাখে আমার পথজীবন।