এক পাথরের গান
একজন কবিকে আমি আজ রাতে শুভেচ্ছা জানাতে
গিয়ে দেখি: সবাই মৃতের ঘরে অন্ধকারে ঢুকে
গেছে—মৃত! বলো, মৃতকে কিভাবে আমি এই রাতে
শুভেচ্ছা জানাবো! আমার চোখের নিচে বসে আছে
দীর্ঘ এক ক্ষ্যাপা নদী; যে আমাকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়
আমি তাকে নরকের ক্ষুধা থেকে বাঁচিয়ে রেখেছি;
একটা নক্ষত্র আমি মন্ত্র দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছি
আকাশের ঝুড়ি থেকে; পাছে চুরি হয়ে যেতে পারে
এই ভয়ে ওটাকে পকেটে নিয়ে মধ্যরাতে আমি
যখন বাসায় ফিরি, তখন অবাক হয়ে দেখি
কফিনে আগরবাতি জ্বেলে ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ
দিব্যচোখে তাকিয়ে আছেন—তিনি প্রিয় কবিদেব—
মদনের পুরোহিত; কবিতার অচল বাজারে
নিষ্কাম পসরা হাতে তিনি আজও বড় মহাজন:
গানের দোকান খুলে বসে আছে চতুর বেনিয়া;
আমার গন্তব্যপথে সঙ্গী কেউ যাবে কি যাবে না
তা আমার জানা থাক বা না-থাক, আমি যাবো
এই রাত শেষ হলে অন্য এক রাতের আশ্রমে;
নিজেকে উজাড় করে নিশি নামে যমের স্বভাবে:
পাথর সমুদ্রে ভেসে দ্যাখে তার নিজের নিয়তি।
পাহাড় কাটার পর
সে কবে জন্মের পর একদিন মাটির উপর
ভর করে দাঁড়ালাম আমি এক নগ্ন নরশিশু;
দক্ষিণে সমুদ্র রেখে সামনে দেখি সুউচ্চ পাহাড়
দিগন্তে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে হাত-পা ছড়িয়ে
নিখুঁটি মেঘের খাটে; আহা! এমন অপূর্ব দৃশ্য
যে না দেখে মারা যায় তার জন্ম বৃথা; দিবালোকে
যে আঁকে নির্জন পটে নানা মুখ কুমারী সন্ধ্যার
সে এক পাথর ভেঙে উঠে আসা পাকা তীরন্দাজ:
জগতে এমন কিছু দৃশ্য আছে চোখের আলোয়
কখনো যায় না দেখা—দেখতে হয় মনে দীপ জ্বেলে।
আস্থা কত পোক্ত হলে অন্ধ বরফের জুতো পায়ে
আগুনের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পারে শূন্যের মহলে!
কে ছোটে শাবল হাতে ভেঙে দিতে পাহাড়ের ঘুম—
মৃত্যুর অদৃশ্য রূপে নীরবতা দেখে তার ছায়া:
কতটা গরিব আর বোকা হলে অক্ষম কাঠুরে
যে পাহাড়ে বাঘ থাকে সে পাহাড়ে কাঠ কাটতে যায়!
বাঘের রাজত্বে ঋষি ধ্যানে মগ্ন আয়েশি ভাষায়;
যে কাটে পাহাড় স্বপ্নে বাস্তবে সে দুঃখ চাষ করে—
পাহাড় কাটার পর ভেঙে যায় দুঃখের নীলিমা।
ছন্দ
একটা চমৎকার আধুনিক গাড়ি।
আসনে আরামে বসে সিগারেট মুখে
মহান চালক;
যাত্রি উঠে বসে আছে বহুক্ষণ ধরে
পর্যাপ্ত জ্বালানি ভরা হলো ট্যাংকে
একসময় ইঞ্জিনও চালু হলো।
যথানিয়মে চালক গিয়ার টানলেন;
কিন্তু গাড়ি যে চলছে না, বরং
প্রবল ঝাঁকুনি খেয়ে উল্টে গেল!
আমাদের কবিতাপাড়ায়
চোখের পলকে
এরকম এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে গেলো!
সঙ্গীয় যাত্রীকে নিয়ে নিহত হলেন
গাড়িটার নির্বোধ চালক।
পুলিশ এলেন সাইরেন বাজাতে বাজাতে
লাশ আর সড়কের জঞ্জাল সরাতে।
প্রশ্ন: দুর্ঘটনার হেতু কী?
কারণ খুঁজেই পুলিশ তো অবাক, দেখেন—
গাড়িটার কোনো চাকাই ছিল না।