নদীর অহং
যাবে যদি নদীপথে পাহাড়ের দেশে—
যমজ পাহাড়ে ঠেলে চিলতে আকাশ
হাসে—হাত নেড়ে নীলমেঘ স্বাগত জানাবে।
সর্বদর্শী দুটো চোখ দূরের প্রাচীর কেটে
আমাজন পাড়ি দিতে পারে—
অথচ নিজের ছায়া নিজেই চেনো না।
কিভাবে মুছবে বলো মাস্তুলের রোদ— দাঁড়ের জখম!
মায়াপথে নদীগুলো আরশির মতো
অবিকল ছবি আঁকে হাওয়ায় নাওয়ায়;
বাঁকে বাঁকে দুঃখ ক্ষুধা কাঁদে অবিরত।
আমার ব্যাকুল পায়ে মধ্যরাতে নেমে আসে
শহরের ক্লেদ-অবসাদ।
তুমি সেই নদী এতিদিন যে নিজেকে
সর্বগামী বলে অযথা অহং দেখিয়েছো।
খুলে রেখে প্রাতের হাসুলি রাতের মুহুরি দোলে
জলহীন ঘরে; নদী এক মাতাল করাত চাঁদ কাটে
জ্বলে নেভে —কখনও ফেরে না ঘর,
চেনে না সে সন্ধ্যাবেলা সারেঙের বাড়ি।
বৃষ্টির কাসিদা
সবুজ চটুল মেয়ে
রোদের উঠোনে হেসে
. গড়াগড়ি খায়;
মনের খেয়ালে ভিজে
রোজ গান গায়—
পুরির বনে, আমের বাগানে,
পুকুরের পাড়ে আর
. কাঁঠাল তলায় — নিজেরে হারায়।
আঁধারে আড়াল করে
. নিজেকে রেখেছে
ফুল স্বপ্ন প্রজাপতি দুহাতে এনেছে—
অবিদিত কোনো এক আশীর্বাদে
. তুমি এই অবনীর হলে!
বেহিসেবি হাসিখুশি বালিকাটি দেখো—
পাঠ ভুলে খোলাচুলে স্কুল পালায়
খেলাঘরে ঢিল ছোঁড়ে
সহজিয়া চিঠি লিখে— মেঘ আয় আয়
আগুনে সাঁতার কাটে জীবন রাঙায়।
গন্তব্যকথা
রোদের শয়ান পেতে বারো মাস ডেকে যায় প্রান্তরের ঘাস—
সবুজ হলুদ নীল; আঁধার তোরঙ্গ খুলে ঢুলুঢুলু চোখে আমি একা চলি।
আষাঢ়ে মেঘের টানে বেলা বেড়ে গেলে সাঁঝের সুরমা
নদী আন পথে ছোটে; মৃদু লয়ে বলে ওঠে—পথ কি কখনো
চেনে তার নিজস্ব নিবাস আসল ঠিকানা!
সমুদ্র বুকেতে নাচে অযুত আগুনগিরি;
পৃথিবীর শত ফুল শত পাখি রাত জাগা বোবা চাঁদ নিয়ত নিজেকে খোঁজে—
নক্ষত্রে নয়ন পেতে আমিও তোমাকে দেখি—ধূসর দরিয়া পোড়ে;
বাজে পোড়া মাটির সানাই— আপাদমস্তক গায়ে নিসর্গের নুন।
মানুষ কখনো তার গন্তব্য জানে না—মন্তব্যে তারকা হাসে জ্বলে আর নেভে;
মধ্যযামে ডানা মেলে বুড়ো গাঙ চিল ঝড়ের উজানে।
জলপঞ্জি
জলের মুকুর ভাঙে আর রাঙে
. মেঘ প্রজাপতি মাছরাঙা ফুল;
পৃথিবীর তাবৎ তিয়াশা ঠোঁটে
ছলছল বয়ে যায় অভিমানী ঢেউ—
. জোছনা জোয়ার সুর।
সোনার তখতে বসে
নদী ও নারীর বিবিধ আলাপ
. সন্তর্পণে লিখে রাখে
. কৃষ্ণপক্ষ রাত অনিকেত চাঁদ।
অন্ধকার উপকূলে চিমনির মুখ
ছায়ার মিছিল তারাগুলো পোড়ে—
. নদীর প্রদাহ গোনে ভ্রমমগ্ন তীর।
আরশিপাঠ
শহরে এসেছে এক তরুণ সাপুড়ে—
আয়ুরেখা মুছে গেছে করতল খসখসে সাহারা সমান;
মানুষের জিভ দেখে দাঁত দেখে,
নখের আরশি পড়ে রপ্ত করে পৃথিবীর মুখ।
সাপেরা রাতের মতো খোলস বদল করে—
পাহাড়ে অরণ্যে ছোটে, তিরতিরে উঠে যায়
বহুতল কোটা—জিভে যার ক্ষুধিত নরক লেলিহান লোহু।
ভিটেবাড়ি ছেড়ে এসেছে সে পাথুরে নগরে—সাপের সাহস মাপে,
ছায়া নিয়ে খেলে—মায়ায় বসতি গড়ে;
ঠোঁটে তার বিষ্টিবাঁশি বাজে রিমিঝিমি—বাঁধছে নতুন সুরে লীলা ও লিরিক।
হলুদ ঘাসের কবি হাঁটে মায়াপথে—
মাটির খুশবু গায়ে বাজায় পাতার ভেঁপু ভাটির উজানে।