বাটিচালান
তোমার প্রতিটি আঘাত
আজ আমার ব্যক্তিগত আঁধারে ঘনিভূত হতে হতে মেঘ
মেঘ যতই রঙিন হোক বৃষ্টির ফোঁটা চিরকালীন জলচেক
কেননা—এখানে আলোরা অন্ধকার পোহাতে ভালোবাসে
কিংবা তুমি যখন আগুনে পুড়িয়ে মোমবাতি হত্যা করো
তখন আমার ব্যক্তিগত আঁধার তোমার আলোকে পাহারা দ্যায়
যে পাহারার আড়ালে
রাত দিনকে বিয়ে করে—বাসরেই বিচ্ছেদ ঘটায়
আর ভুলে যায় সূর্যের ছায়াহীন শীতল ফনা
যা কিনা জন্মান্ধ মানুষের বোধের সালোক সংশ্লেষণ ছাড়া আর কিছু নয়
কোকিলের লাল চোখ ও কাকের নীল ডিম
তোমাকে মনে করার মতো
আর কোনো মন অবশিষ্ট নেই
এ যেন তুমি বাংলা স্বরবর্ণের লি-ই কার
কোন ধ্বনি বা শব্দে যার ব্যবহার শূন্য থেকে শূন্যতম
কিংবা গভীর কুয়াশায় হেঁটে চলা তোমার পায়ের ছাপ
ডিম থেকে বাচ্চা পেতে হলে বুকের উত্তাপ প্রয়োজন
অথচ তুমি বরফ ভালোবেসে ঘুমিয়ে রাখলে শিশু পৃথিবী
আর আমার মনের মাঝে ঢুকিয়ে দিলে খনি গর্ভের অন্ধকার
ভগ্নাংশে আমি ইঁদুর দাঁতে খনন করে চলেছি তোমার মনোখনি
তবুও তোমার মুগ্ধতায় মুখ ধুয়ে দেখেছি
শ্যাওলার সবুজ গন্ধে ভরে গ্যাছে আমার ঋগ্বেদের ছোট্ট দিঘি
অবশেষে ডান হাতের বুড়ো আঙুল হারিয়ে ভেবেছি
একটি অঙুলের মৃত্যু মানে—একটি হাতের মৃত্যু নয়
মা-১১
শহরের বাড়িগুলে খুব পাশাপাশি
অথচ ভেতরের মানুষগুলে অনেক দূরে দূরে বসবাস করে
আমার মা তাই কোনোদিন শহরের অধিবাসী হতে পারেননি
তিনি এখন গ্রামে বসে—গোবর দিয়ে উঠান পবিত্র করেন; পূজায় বসেন
পূজা শেষ করে খোঁজ নেন—হাঁসমুরগীগুলো কোথায় কেমন আছে
লাউয়ের ডগা আর কত বড় হলে—মাঁচাটা কতটুকু করতে হবে
আমি শত শত পথ দূরে থেকেও মায়ের এসব কাজ দেখতে পাই
আর শুনতে পাই—মা আমাকে কখন কী বলছেন
যেমন করে শত শব্দের ভিড়েও বাসের ড্রাইভার—
হেলপারের কথা শুনতে পায়
মা-১২
আমার মা আগুন খেয়ে শীতকাল প্রসব করেন
সেই থেকে আমাদের শীতকাল বেশি প্রিয়
শীতে তাঁর দৃষ্টির গন্ধ এপাড়া থেকে ওপাড়ায় হেঁটে বেড়ায়
আর সেই দৃষ্টির গন্ধ- সমুদ্র ঢেউ-এর মতো বিশাল ঠাণ্ডা নিয়ে আসে
আমার বাবা হরশীত বালা সেই ঠাণ্ডায় অলসতা ভেঁজে খান
অলসতা যখন পাপড়ের মতো মচমচ শব্দ করে
ঠিক তখনই গাছের সবুজ পাতারা মরমর হয়ে ওঠে
এভাবে আমাদের সংসার যেন যুধিষ্ঠির পাশা খেলা
আর বেলা অবেলায় চুম্বন ফেরী করাই আমাদের কাজ
আমি অভিজিৎ রায় বলছি
নিমগাছের সমস্ত শরীর জুড়ে তিক্ততারই ব্যাকরণ
অথচ নিমফুল মধু ডেকে আনে নীল প্রজপতি
নৃ-মুণ্ডের অন্ধকারে এখনো যারা কাশফুল চাশাবাদ করে
এখনো যাদের চোখে শ্লোগানের পঙ্ক্তি দাউ দাউ করে জ্বলে
আমরা নিমফুল হাতে তাদের অপেক্ষায় আছি
সাদাকাকের কুহু-কুহু রিংটোন ভাতের থালায় মেখে-
কোকিলের প্রার্থনায় নত হলে- শকুনের আনাগোনা বাড়ে
কিংবা বিড়াল ও ইঁদুর এক খাচায় পোষ মানালে
শাকচুন্নি বাতাসে ডানা ভাঙা রোদ ফিস ফিস করতেই পারে
এভাবে বেজিদের রক্তে কোবরা হত্যার এক প্রকার নেশা জন্মে
অথচ সাপ ও বেজির দ্বন্দ্ব এখন মানুষের রক্ত থেকে পবিত্র গ্রন্থে
নারকেলের ভেতর জল শুকালে পঁচন ধরে
তেমনি জলহীন নদী গর্ভ জনহীন মরুভূমি হলে
সেই মরুভূমির ইট চাপা ঘাসের কান্না সূর্য শুনতে পায় না