নামপুরুষ
নামের উচ্চারণে কিছু ফেরেশতা
শুয়োরের বাচ্চা বলে গাল দিতে দিতে নেমে আসবে আরশে আজিম থেকে।
কেউ কেউ সেজদায় পড়ে যাবে তসবিহ-তা’জিমসহ।
কেউ অশ্রুসজল চোখে হাত বাড়িয়ে এগিয়ে দেবে জাক্কুমের ডাল।
খোদা আরশে মহল্লায় রেগে উঠবেন চরম গোসসায়।
আমরা আদমজাত যৌনপথে না তাকানোর ভাণ করব।
আমরা হাওয়াজাত স্তন-যোনিতে উপনিবেশ গড়ব জেদ্দা শহরে।
তারপর সোজা হাঁটা দেব সিংহল থেকে আরও নিম্নভূমির দিকে—
মানবিক দেশে ভূলুণ্ঠিত করব আপামর ধ্যান-ধারণা!
উজানে যাব এক চুমুক জলের জন্য
অথবা চিত্রকলায় ফুটিয়ে তুলব নোনতা লাঙ্গলের মতো শিশ্নদণ্ড।
ভাঁটিতে যাব তিন চিমিটি নুনের জন্য
অথবা শিল্প-সাহিত্যে ভাসিয়ে দেব জল পড়ার মতো ড্রেনেজ সিস্টেম।
তারপর?
তারপর বীরদর্পে ঘোষণা দেব আমি ঈশ্বরের সেবক।
আমিই পুরুষ।
আদমের ঔরসে জন্ম নেওয়া নামপুরুষ।
দরিয়ায় বাদাম তুলে ভাসিয়ে দিচ্ছি—
হাওয়ার মতো পদ্মা-মেঘনা নাভীসহ একমাত্র মমতাময়ী।
আমিও পা বাড়িয়েছি মাথাসমেত
চারিদিকে ধোঁয়া উড়ছিল ইতস্তত।
আমি নেমে পড়লাম একপেশে চেতনা ধরে।
সামনে সংকীর্ণ তিনচালা
ছোটখাটো চাটুকারে ভরে উঠেছে দহলিজ।
কোনো উত্তরপুরুষ আমারই মতো ছুটে চলেছেন।
চেতনার বাঁকে বাঁকে—
ঢুকরে কেঁদে উঠছে আশেপাশের জনপদ।
তিনচালার কোনো চালাই পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে না।
লোকে লোকারণ্য এই সময়কে
অসময় বলে ভুল করেনি উত্তরপুরুষ।
দহলিজজুড়ে মোটা-চিকন কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে।
সকলের জবানে স্তুতিগান।
আমি আরও কিছুদূর হেঁটে যেতে চলেছি
দেখি কে কে, কারা ওরা
আমারই মতো কত শত বছর আগে ছুটে চলেছে তিনচালা থেকে।
উদ্বায়ী সম্ভাবনায় কারও কারও চোখে পানিও ছিলো হয়তো।
আমি আর পুরুষের মতো থমকে দাঁড়াইনি।
পেছনে সংকীর্ণ তিনচালা।
বড়সড় চাটুকারে ভরে গেছে চারিদিক
কোনো চালাই আর স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না।
উত্তরপুরুষ হেঁটে চলেছে পূর্বপুরুষের বুক কাঁধে নিয়ে
আগামি পার্বণে স্বর্গে যাওয়া যাবে!
আমিও পা বাড়ালাম মাথাসমেত।
এবারের যাত্রায় অগণিত সহচর পাব
অথবা ধূসর ধোঁয়া উড়েই যাবে অনবরত।
আহ্বান
নেমে এসো, নেমে এসো এই মাটির পৃথিবীতে।
এখানে উচ্ছিষ্ট গায়ে মেখে সমতল হয়ে আছে রাত।
পা রাখো, পা রাখো উঁচুনিচু এই পথে
এখানে নর্দমা ঘিরে গড়ে উঠে আকাশচুম্বী দালান।
এই শহর, ফাঁকা আর্তনাদে রক্তবমি দেখতে কি পাও?
দেখতে কি পাও—
স্তনাবরণ খসে পড়েছে তার অনাদর আর অবহেলায়
ছোঁ মেরে নিয়ে গেছে ঊরুর মাংস কে?
সবচেয়ে সুন্দর ছিল দু’চোখ লেপটে যে
দেখতে কি পাও—
মায়াবী দ্বীপের চারদিকে এখন নরপিশাচ ঘোরে?
নেমে এসো, নেমে এসো রক্তমাংসের পৃথিবীতে।
দু’হাতে মুষ্টিবদ্ধ হোক যাতনা।
এই লোমশ স্বৈরাচারে আকাশে থাকি কী করে?
পা দু’টো শক্ত করে ঠেসে নাও।
দালানের কোণায় কোণায় গেঁথে দাও অভিমান।
তারপর কুঠারাঘাতে লণ্ডভণ্ড হোক পালানোর পথ।
এই পালানোর পথেই চেয়ে থাকে প্রকাণ্ড শহর
ভয়ানক আর্তনাদে কেঁপে কেঁপে উঠে লোমগুলো তার।
হাসি গানে জাগ্রত চাটুকার!
এসো শুদ্ধি হই।
নতুবা বরাবর ছিনিমিনি খেলি—
কুকুরের মতো ডেকে উঠি উন্মাতাল।