আমরা একদিন আমি ছিলাম
প্রাগৈতিহাসিক সেই অলৌকিক যুগে, আদিমতার আগে আমরা
একদিন শুধু ‘আমি’ ছিলাম।
সৃষ্টপূর্ব পূর্বজন্মে আমাদের এক আত্মা, এক সত্তা ছিল
এবং হয়তো বা পুনর্জন্মেও তাই হবে।
আজ মাটি ছিঁড়ে প্রার্থনার উত্তোলিত হাতে
বীজশিশু দুটি চা পাতার মতো চারা হয়ে ফুটে উঠলেও আমরা
‘আমি’ ছিলাম।
যৌথ-যুক্ত-যুগল-যমজ নয়
একসাথে নয়, একত্রিত নয়
একা এবং এক দেহমনে পূর্ণাঙ্গ ছিলাম, আমি!
‘মোরা আর জনমে হংস মিথুন ছিলাম’ না।
এবং নই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ!
কোনো এক ঘনসন্ধ্যায় আলেয়ার পিছে ছুটতে ছুটতে
অজান্তে পায়ের নিচে ভুলে ঝরা ফুলের মতো
একটি জোনাক পোকার মৃত্যু হয়েছিল।
নিষিদ্ধ গন্ধম গল্পের অপরাধ ছিল না; তবু
জীব-জগতের জননী তথা বিধবা দেবীর অভিশাপ দিলো
আস্ত আপেল এখন দ্বি-খণ্ডিত আপেল
এক অংশ নারী,
আরেক অংশ আকাশ।
বিষাক্ত ছুরিতে লেগে থাকলো আমার শাদা রক্তের দাগ।
আমি হঠাৎ ‘আমরা’ হয়ে গেলাম,
আমি থেকে আমি আলাদা হয়ে গেলাম এমিবার মতো!
মৃত্যুদণ্ডের শান্তির বদলে
পেলাম পৃথকীকরণ শাস্তি।
দেবী শোনেননি-আর্তি, আর্জি, আয়াত!
গুগোল এই মিথ সম্পর্কে জানিয়েছে:
রূপকথার মৃত জোনাকি ছিল তার প্রিয় পালিত কন্যা!
এখন আমার ভেতরে তুমি ডিমের কোমল কুসুম
তোমার গোপন গহীনে আমি; আমার ঘুম,
ঘুমন্ত বসতি, বন্ধন, আত্মীয়তা।
আমি ফুলপুষ্প; তুমি সেই পুষ্পের পুষ্পিত সৌরভ
আমার শরীরে তোমার জ্বর
তোমার ভেতর আমার তৃষ্ণা
তুমি কাঁদলে আমার চোখদ্বয় নরম জলে ভিজে যায়।
তোমার ভ্রমণ, যাপন, যৌনানন্দ, স্রাবকালীন মৃত্যুতে
আমিও আংশিক অংশীদার—
এবং তুমিও।
অথবা একদিন তুমি একজন ছিলে, একাকী আকাশ!
আরও পড়ুন:
মৃত সড়কের মোড় ॥ ফকির ইলিয়াস
মন, আয়না ও জঙ্গলে ॥ মাসুদুল হক
শৈশবের আলো-ছায়ায় পনেরোই আগস্ট ॥ কামরুল বাহার আরিফ
সুঠাম কটিদেশে পুরুষালী বুক ॥ ফরিদা ইয়াসমিন সুমি
উত্তরবাঁকের মেঘ ॥ মোহাম্মদ নূরুল হক
জুতার কিরণ ॥ নকিব মুকশি