০১.
যে থাকে নিঃসঙ্গ একা জনারণ্যে; ঈশ্বরের মতো
খুব একা তাকে আমি কখনো দেখিনি; অবিরাম
ঘড়ির কাঁটার মতো জীবনের কঠিন ডায়ালে
সে ঘোরে মাতাল রোদে—পাতালের আঁতুড়ি কান্নায়;
যে গ্রহ এখন আজ মানুষের লোভের আড়ত
সে-গ্রহে সুন্দর একা,পুষ্পহীন মানব উদ্যান:
গন্ধহীন গন্ধরাজে ভরে উঠছে ফুলের পসরা;
বিপন্ন সৌহার্দ্য প্রেম, তিরোহিত মিলনসংগীত।
কণ্টকিত সংকটের ফুলে ফুলে সাজানো শয্যায়
দুঃস্বপ্নের চিতানলে মৃতবৎ আমি শুয়ে আছি:
ফুলের ভেতর থেকে উড়ে এসে একটা ভ্রমর
আমাকে গুনগুন স্বরে আচানক স্বপ্নে বলে গেলো,
এ গ্রহে মানুষ নেই—সবখানে অশান্তির দানো
চলো কবি চলে যাই অন্যগ্রহে, অন্য নিরালোকে ।
০২.
নির্বাক করুণ চোখে আর কত মৃত্যুর উৎসবে
নিজেকে বিপন্ন ভেবে কবি একা প্রহর কাটাবে?
পৃথিবী নামক এই মায়াবতী সবুজ গ্রহের
কোমল হৃদয় যারা রক্তে রক্তে ভিজিয়ে দিয়েছে
কে বলে মানুষ ওরা? মহান যিশুর নাম নিয়ে
মানুষ মারার জন্য তারা নিত্য হরেক রকম
বানাচ্ছে নতুন মারণাস্ত্র , ওরা তো মানুষ নয়,
মানুষের নামধারী ছদ্মরূপী প্রকৃত দানব।
ওই দানবের কব্জা থেকে পৃথিবীকে মুক্ত করতে
শক্তি ও সাহস শুধু মানুষের আছে; যে-মানুষ
দুর্নিবার ভালোবেসে মানুষকে আগলে রাখে বুকে,
মানব-দানব যুদ্ধে সে-মানুষ কখনো হারে না।
কবিতার স্বপ্ন থেকে যদি ফোটে একটি গোলাপ
সে-গোলাপে জন্ম নেয় মানুষের মৌলিক ঈশ্বর।
০৩.
মহামতি হজরত , শ্রীবুদ্ধের আহ্বানে যারা
একদিন ঘরে ঘরে অহিংসার কুপি জ্বালিয়েছে—
পৃথিবীতে বিচিত্র আলোর আভা ছড়াতে চেয়েছে ,
অথচ স্বার্থের চোখে তারা আজ কিছুই দেখে না।
মনুষ্যবিনাশী যজ্ঞে কী নিমগ্ন মহানন্দে যেন
মগ্নতার মৌনতায় নাচিতেছে নগ্ন কাপালিক;
এমন গর্হিত যজ্ঞ থেকে ওই রাহু দুর্বৃত্তকে
কে আর নিবৃত্ত করে! কেউ নেই, কারো সাধ্য নেই!
ভুলুণ্ঠিত মনুষ্যত্ব, আব্রুহীন মৃত মানবতা;
বাঘ ও সিংহের মতো কতিপয় জন্তুর লড়াই
কে আজ থামাতে পারে? একমাত্র তিনিই ঈশ্বর?
এ গ্রহে ঈশ্বর খুব অসহায়, বড়ই এতিম;
উলঙ্গ সহিস নাচে,তার পাশে ওই রক্তহীন
নগরে বেহুঁশ হয়ে পড়ে আছে সভ্যতার ঘোড়া।